গ্যালারি কায়া : বাংলাদেশ-ভারতের শিল্পীদের নিয়ে ‘এপিক ১৯৭১’

আগের সংবাদ

স্বস্তির ভোটে আইভীর হ্যাটট্রিক : সব শঙ্কা উড়িয়ে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ ভোট, শামীম ওসমানের কেন্দ্রে হেরেছে নৌকা

পরের সংবাদ

নওগাঁর পতœীতলা ও ধামইরহাট : বছরে ৫৬ কোটি টাকার ধান মাড়াই মেশিন বিক্রি

প্রকাশিত: জানুয়ারি ১৬, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ১৬, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

মো. আবু বকর সিদ্দিক, নওগাঁ থেকে : কৃষিতে যে কয়েকটি সমস্যা তার মধ্যে কাটা ও মাড়াই করা সবচেয়ে বড় সমস্যা। সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে বদলেছে নির্ভরতার ধরন। কৃষিতে যান্ত্রিকীকরণের ছোঁয়া আসার পর থেকে দুর্ভোগ কমতে শুরু করেছে কৃষকদের। ফসল কাটা ও মাড়াইয়ে একদিকে যেমন শ্রমিকের খরচ বাঁচছে, অন্যদিকে অল্প সময়ের মধ্যে শস্য ঘরে তোলা সম্ভব হচ্ছে। নওগাঁ থেকে বছরে দেশের বিভিন্ন জেলায় প্রায় ২ হাজারটি ধান মাড়াই মেশিন (পাওয়ার থ্রেসার) সরবরাহ হচ্ছে। যার বাজারমূল্য প্রায় ৫৬ কোটি টাকা। সহজশর্তে ঋণের ব্যবস্থা করা গেলে কৃষি প্রযুক্তি তৈরিতে আরো একধাপ এগিয়ে যাবে বলে মনে করছেন এ শিল্পের সঙ্গে জড়িতরা।
গত এক যুগ আগে জেলার পতœীতলা উপজেলার নজিপুর বাজার ও ধামইরহাট উপজেলা সদরে ধান মাড়াই মেশিন কারখানা গড়ে উঠেছে। গত ৫-৭ বছরের ব্যবধানে কৃষিতে যান্ত্রিকীকরণ বেড়ে যাওয়ায় মাড়াই মেশিনের গুরুত্ব বেড়েছে। স্থানীয় ভাষায় মাড়াই মেশিনকে বঙ্গা বলা হয়। এ দুই উপজেলায় কারখানা রয়েছে প্রায় ৮০টি। এসব কারখানা থেকে বছরে প্রায় ২ হাজারটি ধান মাড়াই মেশিন তৈরি হচ্ছে। পাশাপাশি প্রায় ৭০০ জন শ্রমিকের কর্মসংস্থান হয়েছে। প্রতিটি ধান মাড়াই মেশিন তৈরিতে ৫-৬ জন শ্রমিকের ৫-৭ দিন সময় লাগে। গত এক বছর আগে প্রতি কেজি শিটের দাম ছিল ৯২-৯৩ টাকা কেজি, বর্তমানে ১৪৮-১৫০ টাকা কেজি। অ্যাঙ্গেল ছিল ৫৬-৫৮ টাকা কেজি, বর্তমানে ৭৭-৭৮ টাকা কেজি এবং পাতি ছিল ৪২-৪৩ টাকা কেজি, বর্তমানে ৬৮ টাকা কেজিতে কিনতে হচ্ছে। এছাড়া শ্যালো মেশিন ৩২ হর্স পাওয়ারের দাম ছিল পূর্বে ৪২ হাজার টাকা, বর্তমানে ৫৩ হাজার টাকা, ৩৬ হর্স পাওয়ার চাংচাই মডেল ৬২ হাজার টাকা, বর্তমানে ৭৮ হাজার টাকা। এছাড়া ৩৬ হর্স পাওয়ার বেশি ক্ষমতাসম্পন্ন শ্যালো মেশিনের দাম পূর্বে ছিল ৮২ হাজার টাকা বর্তমানে ৯৭ হাজার টাকা। করোনা ভাইরাস শুরুর পর থেকে বেড়েছে ধান মাড়াই মেশিনের যন্ত্রাংশের দাম। প্রতিটি ধান মাড়াই মেশিনের দাম ২ লাখ ৭০ হাজার টাকা থেকে বেড়ে ২ লাখ ৮০ হাজার টাকা হয়েছে। সে হিসাবে ২ হাজার মাড়াই মেশিনের দাম দাঁড়ায় প্রায় ৫৬ কোটি টাকা। ধান মাড়াই এ মেশিন দিয়ে একই সঙ্গে মাড়াইয়ের পাশাপাশি পরিষ্কার হয়ে যায়। তাই আলাদা করে পরিষ্কার করার প্রয়োজন হয় না। বোরো ও আমন মৌসুমে মাড়াই মেশিন বেশি ব্যবহৃত হয়।
এসব মাড়াই মেশিন নোয়াখালী, যশোর, চুয়াডাঙ্গা, কুষ্টিয়া, মেহেরপুর, নীলফামারী, দিনাজপুর ও রংপুরসহ কয়েকটি জেলায় সরবরাহ করা হয়। এ মাড়াই মেশিন দিয়ে ধান মাড়াইয়ের পাশাপাশি সরিষা, তিল, তিশি, গম, ধনিয়া ও কালাই মাড়াই করা সম্ভব।
নজিপুর বাজারে ২০০৮ সালে নজিপুর ভাই ভাই ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপ নাম দিয়ে ধান মাড়াই মেশিন কারখানা শুরু করেন হারুনুর রশিদ। সেসময় ছোট আকারে ধান মাড়াই মেশিন তৈরি করতেন। ধানের সঙ্গে খড়কুটো থাকায় আলাদা করে বাতাস করতে হতো। চাহিদা বাড়তে থাকায় মাড়াই যন্ত্রে কিছুটা আধুনিকায়ন শুরু করেন। ২০১০ সালে অটো মাড়াই মেশিন তৈরি শুরু করেন তিনি। বাজারে এটির চাহিদা রয়েছে।
হারুনুর রশিদ বলেন, কারখানায় নিয়মিত কাজ করেন ১৮ জন শ্রমিক। মাড়াই মেশিনটি তৈরি করতে কারিগরদের ১৮-২০ হাজার টাকায় চুক্তি দেয়া হয়। এর সঙ্গে তিন বেলা খাবার দিতে হয়। শ্যালো মেশিনসহ এ মাড়াই মেশিনটির ওজন প্রায় ১ হাজার ৪০০ কেজি। মেশিনটি বিক্রি হচ্ছে বর্তমানে ২ লাখ ৭০ হাজার টাকা থেকে ২ লাখ ৮০ হাজার টাকায়। বর্তমানে সব কিছুর দাম বেড়েছে। বেশি দামে ধান মাড়াই মেশিন বিক্রি করেও লাভ থাকছে খুবই কম। করোনা ভাইরাস শুরু হওয়ার আগে যন্ত্রাংশের দাম কম ছিল। সেসময় লাভ মোটামুটি ভালো ছিল। খুচরা চাহিদা কম থাকলেও পাইকারি ব্যবসায়ীদের কাছে চাহিদা রয়েছে। বাহিরের জেলার পাইকারি ব্যবসায়ীরা অর্ডার দিয়ে তৈরি করে নেয়।
তিনি বলেন, কৃষিতে ভর্তুকি দেয়ায় কৃষকদের মধ্যে কৃষি যন্ত্রাংশ নেয়ার আগ্রহ বাড়ছে। সরকার থেকে সহযোগিতা পেলে আগামীতে আরো আধুনিক মানের মাড়াই মেশিন তৈরি করা সম্ভব হবে। এসব মাড়াই মেশিনে ধান মাড়াই করা হলে খড়গুলো কেটে টুকরো টুকরো হয়ে যায়। খড় যেন কেটে টুকরো না হয়ে গোটা খড় বেরিয়ে আসে আগামীতে এমন মাড়াই মেশিন তৈরির চেষ্টা করছি।
নজিপুর বঙ্গা সমিতির সাধারণ সম্পাদক মাসুম রেজা বলেন, আমরা স্বল্প পুঁজির ব্যবসায়ী। করোনা শুরু হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত কোনো ব্যবসায়ী আমাদের কাঁচামাল বাকিতে দিচ্ছে না। তাদের ভাষ্য তারা বাকিতে পাচ্ছে না। এ কারণে আমাদেরও বাকিতে দিতে চাইছে না। আমরা যতটুকু পারছি নিজেদের চেষ্টায় বিভিন্ন সংস্থা থেকে ঋণ নিয়ে মালামাল কিনতে হচ্ছে। বেসরকারি সংস্থা থেকে উচ্চ সুদের ওপর ঋণ নিতে হচ্ছে। কোনো ব্যাংক আমাদের সহযোগিতা করছে না। ব্যাংক থেকে বলা হয় জামানত দিতে। কিন্তু ব্যাংকের চাহিদামতো আমাদের পক্ষে জামানত দেয়া সম্ভব না। যদি সহজশর্তে ব্যাংক থেকে ঋণ দেয়া হতো তাহলে আমাদের ব্যবসার পরিধি আরো বাড়ানো সম্ভব হতো। আমাদের এ উপজেলা থেকে প্রায় ১ হাজার ২০০টি মাড়াই মেশিন বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করা হয়। আমার কারখানা থেকে গত বছর (২০২০) ৩৫টি এবং এ বছর ৫০টি মাড়াইকল বিক্রি করেছি। ব্যাংক ঋণের ব্যাপারে সরকার যদি আমাদের মতো ব্যবসায়ীদের সহযোগিতা করে তাহলে কৃষিক্ষেত্রে আরো বৈপ্লবিক পরিবর্তন করা সম্ভব বলে মনে করছি।
নওগাঁ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. শামসুল ওয়াদুদ বলেন, জেলার পতœীতলা ও ধামইরহাট উপজেলা যথেষ্ট ভালো ও মানসম্মত থ্রেসার (ধান মাড়াই মেশিন) তৈরি হয়। মাড়াই মেশিন এ জেলা থেকে দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করা হচ্ছে। কর্তৃপক্ষ এসে কারখানাগুলো দেখে গেছেন। আমরা এ শিল্পকে আরো সম্প্রসারণের জন্য চেষ্টা করছি। তিনি বলেন, কৃষি যান্ত্রিকীকরণের প্রকল্প আছে। কৃষকদের ভর্তুকির মাধ্যমে দেয়ায় এসব কারখানা থেকে আরো বেশি পরিমাণ মেশিন উৎপাদন হচ্ছে। আমরা চাই এ শিল্পটা আরো বেশি প্রসার লাভ করুক। কোনো উদ্যোক্তার যদি ঋণের প্রয়োজন হয় আমরা চেষ্টা করব ব্যাংক যেন সহজশর্তে ঋণ দেয়। এতে যান্ত্রিকীকরণ সহজ হয়।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়