চট্টগ্রামে সৈকতে শৃঙ্খলা ফেরাতে কমিটি

আগের সংবাদ

স্বাস্থ্যবিধির বালাই নেই কোথাও : বাসে গাদাগাদি করে যাত্রী পরিবহন > ঢিলেঢালা অভিযানে ১১ জনকে জরিমানা

পরের সংবাদ

ঠাকুরগাঁওয়ে কোয়েল পালনে জাহিদুলের ভাগ্য বদল

প্রকাশিত: জানুয়ারি ১৩, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ১৩, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি : ঠাকুরগাঁও শহরের হাজিপাড়া এলাকায় বিসমিল্লাহ ড্রাই ওয়াশের দোকান করে দিনযাপন করছিলেন জাহিদুল ইসলাম জাহিদ। কিন্তু করোনার লকডাউনের কারণে ড্রাই ওয়াশের ব্যবসায় ধস নামে। লকডাউনে দোকান বন্ধ হয়ে যাওয়ায় কি করবে কোনো প্রকার সমাধান খুঁজে পায় না জাহিদুল। অনেক চিন্তা করে লকডাউনের সময় সিদ্ধান্ত নেয় কোয়েল পাখির খামার করার। যেমন চিন্তা তেমন কাজ।
গত বছর লকডাউনের সময় ঠাকুরগাঁও সদরের সালান্দর এলাকায় জমি লিজ নিয়ে বিসমিল্লাহ কোয়েল পাখির খামার নাম দিয়ে কোয়েল পালন শুরু করেন জাহিদুল। খামার দেয়ার ২ মাস পর থেকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। ২ মাস পরে কোয়েল এর ডিম বিক্রয় করে লাভের মুখ দেখেন। তবে প্রাণিসম্পদ বিভাগের কোন প্রকার সহযোগিতা পাননি এমন অভিযোগ ও করেন তিনি। তার সঙ্গে সরকারি সহযোগিতা পেলে খামারের পরিধি বৃদ্ধি করে আরো অনেকের কর্মসংস্থানের আশাও ব্যক্ত করেন জাহেদুল।
বর্তমানে জাহেদুল এর খামারে ২ হাজার ৫শ থেকে ৩ হাজার কোয়েল পাখি রয়েছে। প্রতিদিন খামার থেকে ২ হাজার ২শ থেকে ২ হাজার ৩শ ডিম সংগ্রহ করে বাজারজাত করা হচ্ছে। আর তার খামারে এখন ৬ জন মানুষ নিয়মিত কাজ করে। এই খামার থেকে জাহেদুলসহ আরো ৬ জনের পরিবার ভালোভাবেই চলছে জানান খামারের অন্য কর্মচারীরা।
খামারি জাহেদুল ইসলাম অভিযোগ করে বলেন, প্রাণিসম্পদ বিভাগের কোনো পরামর্শ এবং সহযোগিতা ছাড়াই তিনি এত দূর এসেছেন। এখন শীতে প্রতিদিন ৫/১০টি কোয়েল পাখি মারা যাচ্ছে। কিন্তু প্রাণিসম্পদ থেকে কেউ কোনোদিন তার খামার দেখতেও আসেনি। একবার শুধু রানী ক্ষেত রোগ এর জন্য কয়েকটি টিকা এনেছিল। তিনি আরো বলেন, এখন আমার খামারে ৬ জন মানুষ কাজ করে। আমার খামারের ডিম বিক্রয় করে সব খরচ বাদ দিয়ে মাসে ৩০ হাজার টাকার মতো লাভ থাকে। সেই টাকা কর্মচারীদের বেতন দিয়ে নিজেও সংসার নিয়ে ভালোই চলছি। তবে সরকারি কোন প্রকার সহযোগিতা বা লোন পেলে খামারের পরিধি আরো বাড়ানো যাবে। কোয়েল এর সংখ্যা আরো বাড়ালে ডিম উৎপাদন বেশি হবে। আরো মানুষের কর্মসংস্থান হবে এই কোয়েল খামার এর মাধ্যমে। সেজন্য সরকারের কাছে সহযোগিতার আশা করেন জাহেদুল।
জাহেদুল জানান, একটি কোয়েল পাখি ৪৫ দিনে ডিম দেয়া শুরু করে। ৬০ দিন থেকে প্রতিদিন নিয়মিত ডিম দেয়। এখন আমার খামারে প্রতিদিন ২২শ-২৩শ ডিম উৎপাদন হয়। খামার হতেই ডিম সংগ্রহ করে নিয়ে যায় ব্যবসায়ীরা। বর্তমান শীতে রাস্তার পাশের ভাপা পিঠা, ডিম সিদ্ধ করে বিক্রয় করা হয়। সেখানে ডিম এর চাহিদা ভালো।
খামারে কাজ করেন সুমন জানান, তিন বেলা সময়মতো খাওয়া ও পানি দেয়া হয় পাখিগুলোকে। ৭ দিন পর পর কোয়েল খামার পরিষ্কার করা হয়। এই পাখির রোগবালাই খুবই কম হয়। তবে এখন ঠাণ্ডায় অনেক পাখি মারা যাচ্ছে। এছাড়া পাখির খাওয়ারের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় খরচ বেশি পড়ছে লালন পালনে।
কোয়েল খামারের ম্যানেজার শরিফ জানান, সংসারে অভাব ছিল। কোয়েল পাখি পালন করে এখন ভাগ্য পরিবর্তন হয়েছে। সংসারে এখন সচ্ছলতা ফিরে এসেছে। কোয়েলের খামারে সঠিকভাবে খাওয়া দিতে পারলে ও পরিচর্যা করলে লাভবান হওয়া সম্ভব। নিজেরও কোয়েলের খামার করার ইচ্ছা ব্যক্ত করেন ম্যানেজার। ডিম ক্রয় করতে আসা বাজস্ট্যান্ডের দোকানদার শরিফুল বলেন, কোয়েলের খামার থেকে ৯ টাকা হালি দরে ডিম ক্রয় করে নিয়ে যায়। বাজারে খুচরা ১২ টাকা হালি দরে ডিম বিক্রি করা হয়। এখন রাস্তার পাশে ভাপা পিঠা, কোয়েলের ডিম সিদ্ধ করে বিক্রয় করা হয় প্রতিপিস ৫ টাকা দরে। এই ডিম অনেক পুষ্টিকর ও সুস্বাদু।
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরের ভেটেরিনারি সার্জন ডা. মো. শাহরিয়ার মান্নান জানান, হাঁস-মুরগির মতো কোয়েল পাখি পালন করে অনেকেই স্বাবলম্বী হচ্ছে। কোয়েল পাখির রোগব্যাধি কম। এজন্য টিকা দিতে হয় না এবং কৃমির ওষুধও খাওয়াতে হয় না। অনেকে আত্মকর্মসংস্থানের জন্য কোয়েল পাখি পালনকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন। এখন শীতে কোয়েল পাখি মারা যেতে পারে। সেজন্য হিট দেয়ার ব্যবস্থা করলে মৃত্যুর হার অনেকটা কমে যাবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়