চট্টগ্রামে অসহায়দের কোরিয়ান অ্যাসোসিয়েশনের ক্যাশ টাকা বিতরণ

আগের সংবাদ

বঙ্গবন্ধু সামরিক জাদুঘর উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী : তরুণদের সশস্ত্র বাহিনীতে আসতে উদ্বুদ্ধ করবে

পরের সংবাদ

চারদিকে ইবাদত বন্দনা

প্রকাশিত: জানুয়ারি ৬, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ৬, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : টেস্টের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে তাদের ঘরের মাঠে ইতিহাস গড়েছে বাংলাদেশ। টাইগার পেসার ইবাদত হোসেনের গতিতেই খেই হারায় স্বাগতিকরা। ফলে কিউইদের বিপক্ষে প্রথম টেস্টের ম্যাচসেরার পুরস্কার জিতেছেন তিনি। তাই নিউজিল্যান্ডে বিপক্ষে টেস্ট জয়ের নায়ক ইবাদতের বন্দনা চলছে দেশ-বিদেশে। এমনকি বাংলাদেশের এমন পারফরম্যান্সের প্রশংসা করেছেন নিউজিল্যান্ডে টেস্ট অধিনায়ক টম ল্যাথাম। সেই সঙ্গে তিনি ইবাদতেরও প্রশংসা করেছেন। টম ল্যাথাম বলেন, প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশ দেখিয়েছে কীভাবে খেলতে হয়। তারা আমাদের চাপে রেখেছে। আমরা দ্বিতীয় ইনিংসে জুটি গড়ার চেষ্টা করেছিলাম কিন্তু সেগুলো বড় করতে পারিনি। ইবাদতরা যে লেন্থে বল করেছিল, পিচের কন্ডিশন অনুযায়ী সেটিই ঠিক ছিল। তারা আমাদের দেখিয়েছে কোন লেন্থে বল করা উচিত। আমাদের বিপদে ফেলার জন্য তারা পিচ থেকে যথেষ্ট সহায়তা পেয়েছে।
এদিকে ক্রিকেট মাঠে টাইগার পেসার ইবাদতের গল্পটা একটু ভিন্ন। তিনি সাকিব-তামিমদের মতো সরাসরি ক্রিকেট খেলায় যোগ দেননি। ইবাদত ১৯৯৪ সালে ৭ জানুয়ারি মৌলভীবাজার, সিলেটে জন্মগ্রহণ করেন। তার শৈশব কেটেছে মৌলভীবাজারের বড়লেখায়। তিনি বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর একজন সদস্য। সেখান থেকেই ক্রিকেটের মঞ্চে আসেন। ইবাদত ২০১২ সালে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীতে ভলিবল খেলোয়াড় হিসেবে যোগ দেন। ক্রিকেটে তার শুরুটা ২০১৪ সালে সিটি ক্লাবের হয়ে প্রথম বিভাগের ক্রিকেটে। এরপর ২০১৯ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তার অভিষেক ঘটে। তবে ক্রিকেট সত্তার আসল বিকাশ ঘটেছে রবি পেসার হান্টের মধ্যদিয়ে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট মঞ্চটা বড় কঠিন জায়গা। এখানে টিকে থাকতে ব্যাট-বল হাতে কঠিন পরীক্ষা দিতে হয়। টাইগার এই পেসার কোর্টনি ওয়ালশ, চম্পাকা রমানায়েকে, ওটিস গিবসনদের কোচ হিসেবে পেয়েছেন। এমনকি সেই সুযোগ কাজে লাগিয়েছেন। নিজেকে প্রমাণ করতে বেশ দাপটে খেলেছেন। ইবাদত সেই সঙ্গে নিউজিল্যান্ডের মাটিতে তাদেরই দুর্দান্ত বোলিং করে নাস্তানাবুদ করেছেন। তবে কিউদের বিপক্ষে এই টেস্টের আগে ইবাদতের বোলিং গড় খুব একটা ভালো ছিল না। ১০ টেস্টে ছিল ১১ উইকেট, গড় ৮১.৫৪! তার গড় নিয়ে ট্রলও হচ্ছিল। সেই ইবাদত এক টেস্টে ৭ উইকেট নিয়ে গড় অনেকটাই কমিয়ে এনেছেন। ১১ ম্যাচে ১৮ উইকেট, বোলিং গড় এখন ৫৬.৫৫। তাছাড়া ৬ উইকেট নেয়ার দিনে টাইগার পেসার ইবাদত ৯ বছরের আক্ষেপ ঘুচিয়েছেন। ২০১৩ সালের পর তার হাত ধরে বাংলাদেশের কোনো পেসার পেয়েছেন ৫ উইকেট। এমনকি ইবাদতের বোলিং পরিসংখ্যানই এখন সব বাংলাদেশি পেসারদের মধ্যে সেরা। এর আগে ২০০১ সালে বাংলাদেশের ইতিহাসের তৃতীয় টেস্টে (বিদেশের মাটিতে দ্বিতীয় টেস্ট) জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে বুলাওয়েতে বাঁ-হাতি পেসার মঞ্জুরুল ইসলাম ৮১ রানে ৬ উইকেট নিয়েছিলেন। আজ ২১ বছর পর টেস্টে এক ইনিংসে ৫ বা ততধিক উইকেট নেয়ার ব্যাপারে মঞ্জুরুলের সঙ্গী মাত্র চারজন। তবে টেস্টে পেসার হিসেবে বাংলাদেশের পক্ষে ৫ বা ততধিক উইকেট নেয়ার ঘটনা নয়টি। শাহাদত হোসেনেরই এ কীর্তি আছে চারবার। ধূমকেতুর মতো বাংলাদেশের ক্রিকেটে আবির্ভূত হওয়া আরেক পেসার রবিউল এমন কীর্তি করেছেন দুবার। একবার করেছেন রুবেল হোসেন। এ তালিকায় সর্বশেষ সংযোজন ইবাদত। আরো নির্দিষ্ট করে বললে টেস্টে বাংলাদেশের পক্ষে সেরা বোলিং পরিসংখ্যানটি ইবাদত হোসেনেরই। টেস্টে দেশের হয়ে ৫ উইকেট নেয়ার সর্বশেষ কীর্তিটি রবিউল ইসলাম করেছিলেন ৯ বছর আগে, ২০১৩ সালে। তবে যাই হোক এ তালিকায় আরো অনেকবার নিজের নামটা দেখতে চান ইবাদত। গতকাল কিউইদের বিপক্ষে প্রথম টেস্ট জয়ের পর ম্যাচসেরার পুরস্কার হাতে নিয়ে ইবাদত বলেন, প্রথমে ধন্যবাদ জানাতে চাই আল্লাহকে। নিউজিল্যান্ডের মাটিতে আমাদের দল ২১ বছর ধরে কোনো ম্যাচ জেতেনি। এবার একটা লক্ষ্য ঠিক করে এসেছিলাম। নিজেদের হাত তুলেছি, আর বলেছি তারা টেস্ট চ্যাম্পিয়ন, আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের জন্য তাদের হারানোর উদাহরণ রেখে যেতে হবে। এই সাফল্য এমনি এমনি আসেনি। গত দুই বছরে পেস বোলিং কোচ ওটিস গিবসনের সঙ্গে আমি কাজ করেছি। ঘরের মাঠে কন্ডিশন সবসময় ফ্ল্যাট থাকে। আমরা এখনো বাইরে কীভাবে বল ও রিভার্স করতে হয়, সেটা শিখছি। তাছাড়া আমি বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর একজন সদস্য, জানি কীভাবে স্যালুট দিতে হয়। আর ভলিবল থেকে ক্রিকেটে আসার গল্পটা অনেক লম্বা। আমি ক্রিকেটটা উপভোগ করছি, একই সঙ্গে বাংলাদেশ ও বিমানবাহিনীকে প্রতিনিধিত্ব করাটাও।
এদিকে সদ্য সমাপ্ত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের বাজে পারফরম্যান্সের পর পাকিস্তানের বিপক্ষে ঘরের মাঠে করুণ অবস্থায় ছিল বাংলাদেশ দল। এই সব ব্যর্থতার গল্প সঙ্গী করে কঠিন চাপের মধ্যে নিউজিল্যান্ড সফরে যায় টাইগাররা। সেখানে যাওয়ার পর করোনা ও কোয়ারেন্টাইন ইস্যুতে অনুশীলন বাধাগ্রস্ত হয়। এত বাধার মধ্যেও সব একপাশে ঠেলে মাউন্ট মঙ্গানুই টেস্টে স্বাগতিকদের ওপর আধিপত্য বিস্তার করে জয় ছিনিয়ে এনেছে মুমিনুল-তাসকিনরা। গতকাল মাউন্ট মঙ্গানুই টেস্ট ৮ উইকেটে জিতেছে বাংলাদেশ। ফলে এই প্রথম নিউজিল্যান্ডের মাটিতে জয়ের দেখা পেল লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা। দেশের মাঠে টানা ১৭ টেস্টে হারেনি কিউইরা। সেই তারাই কিনা ইবাদতের পেস আক্রমণের সামনে দিশাহারা হয়েছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়