মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্র : মাইন বিস্ফোরণে তিন বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী আহত

আগের সংবাদ

সংসদ প্রাণবন্ত করার তাগিদ : বিশ্লেষকদের মতে, ‘৭০ ধারা বড় বাধা’, সংশোধনীর দাবি, কার্যকর বিরোধী দলের বিকল্প নেই

পরের সংবাদ

চরফ্যাশনে বেড়েছে তাফালের চাহিদা : ধান মাড়াইয়ে ব্যস্ত কৃষক

প্রকাশিত: জানুয়ারি ৩, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ৩, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

এ আর সোহেব চৌধুরী, চরফ্যাশন (ভোলা) থেকে : চরফ্যাশন উপজেলার হাটবাজারগুলোতে ধান সিদ্ধ ও খেজুরের রস জ্বাল দিয়ে গুড় তৈরির জন্য বিশেষভাবে টিনের তৈরি তাফাল (বিশেষ তাওয়া) বিক্রি শুরু হয়েছে। আমন ধান কাটাও প্রায় শেষের পথে। এরই মধ্যে শীত আর কুয়াশাকে উপেক্ষা করে ধান সিদ্ধ ও মাড়াইয়ের কর্মযজ্ঞে চাষিদের বাড়িতে শুরু হয়েছে এক উৎসবমুখর পরিবেশ।
গ্রামের অধিকাংশ কৃষিনির্ভর নারী-পুরুষ সারা বছরের খোরাকি ঘরে তুলতে মাড়াই শেষে ধান সিদ্ধ ও শুকানোর পরেই চাল মজুতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। মহিলারা উঠনে এ খোরাকির ধান তাফালে করে সিদ্ধ পরবর্তী রোদে শুকিয়ে পুরুষকে সহযোগিতা করে থাকেন। আর এই শীতের সময়ে তাফাল বিক্রেতারা গ্রামগঞ্জের হাটবাজারগুলোতে টিনের প্ল্যানসিটে চার-পাঁচ ফিট দৈর্ঘ্য-প্রস্থে বিশেষভাবে তৈরি এ তাফাল বিক্রি করে লাভবান হচ্ছেন।
গ্রামের ধানখোলা বা কলঘরে তাফালের চুলাগুলো চার-পাঁচ ফিট দৈর্ঘ্যরে আড়াআড়িভাবে মাটি দিয়ে উঁচু করে তৈরি করা হয়। গ্রামগঞ্জের আঞ্চলিক ভাষায় এসব চুলাকে পাহাল অথবা আফাল বলা হয়। এসব পাহাল বা আফালে কাঠের তুষ, ধানের তুষ ও নাড়া বা খড়কুটোর জ্বালানি দিয়ে শ্রমিকসহ রাতভর ধান সিদ্ধ করে সকালের কুয়াশামাখা মিষ্টি রোদের তপ্ত উঠনে বা মাঠে বাড়ির ছেলে বুড়ো ও ঘরকন্নারা একত্রিত হয়ে এ ধান শুকান।
চরফ্যাশন থানা রোডে প্রতি বছর শীতের সময়ে ব্যবসায়ীরা এই তাফাল অধিক মুনাফায় বিক্রি করেন।
গজারিয়ার তাফাল বিক্রেতা সেলিম মাতুব্বর বলেন, দীর্ঘ ৪৫ বছর ধরে চরফ্যাশনের হাটবাজারে এ তাফাল বিক্রি করছি। প্রায় ১০-১২ বছর আগে গ্রামাঞ্চলে খেজুর গাছ ও ধান চাষ বেশি ছিল। চরাঞ্চলীয় এলাকায় অধিক নগরায়ণের ফলে এখন খেজুর গাছ তথা খেজুরের রস ও ধান চাষ কমে যাওয়ায় তাফাল বিক্রি কমে গেছে। বাড়িতে ৫-৬ জন কারিগর দিয়ে শীতের সময়ে ৫ টন প্ল্যানসিট (টিন) দিয়ে ৫৫০ পিস তাফাল বানানো হয়। প্রতি টন প্ল্যানসিট এক লাখ ৩৫ হাজার টাকায় ক্রয় করে প্রতি পিস তাফাল ওজন হিসেবে এক হাজার থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকায় বিক্রি করা হয়। ৭২ ফিট প্ল্যানসিট (টিন) দিয়ে প্রডাকশনে ১৬-১৮ পিস তাফাল তৈরিতে কারিগরদের ১ হাজার ২০০-১ হাজার ৪০০ টাকা মজুরি দেয়া হয়।
তাফাল ক্রেতা ইদ্রিস মিয়া বলেন, ধান ভেজানোর পরে তাফালে করে রাতভর তা সিদ্ধ করা ও পরবর্তী সময়ে এ ধান শুকিয়ে চাল তৈরি করে সংরক্ষণের প্রক্রিয়ার মধ্যে আমরা যে গন্ধ খুঁজে পাই তাই রূপসী বাংলার প্রকৃত দৃশ্য। আবদুল্লাহপুর হাজিরহাট গ্রামের ধানখোলায় কর্মরত কুইট্টাল (ধান সিদ্ধ ও শুকানোর শ্রমিক) শাহে আলম পাটোয়ারী বলেন, রাত আড়াইটা থেকে ৪টা পর্যন্ত প্রায় ৪-৫টি তাফালে করে ধান সিদ্ধ করে সকালে খইলানের (কলঘর বা মিলঘর) মাঠে আমরা ১১ জন কুইট্টাল এ সিদ্ধ ধান শুকানো পরবর্তী ধান ভাঙানোর কাজ করি। প্রতিদিন প্রায় ১০০ মণ ধান সিদ্ধ ও রোদে শুকানো হয়। মজুরি বাবদ প্রতি ১০০ মণ ধানে আমাদের ১১ জনকে সাড়ে ৬ মণ চাল দেয়া হয়। আমাদের খইলানে (কলঘরে) ডিসেম্বর মাসে প্রায় ৩ হাজার মণ ধান সিদ্ধ ও শুকানো হয়েছে। আরেক শ্রমিক মো. মিলন মিয়া বলেন, চরফ্যাশন উপজেলায় ২০টির অধিক ধানখোলা বা কলঘর রয়েছে। যেখানে শত শত টন ধান সিদ্ধ পরবর্তী শুকানো এবং ধান ভাঙিয়ে চাল তৈরি করা হয়।
উপজেলায় এ ধান সিদ্ধ ও শুকানো পরবর্তী ধান ভাঙানোর পেশায় প্রায় ৪০০ কুইট্টাল বা শ্রমিক রয়েছেন। সচেতন মহল বলছে, তাফালে করে খড়কুটা বা তুষ দিয়ে ধান সিদ্ধ করায় গ্রামীণ নারী ও শিশুসহ বয়স্করা ফুসফুস ও চোখের সমস্যা নিয়ে স্বাস্থ্যঝুঁকিতে থাকেন।
চরফ্যাশন উপজেলার উপসহকারী কৃষি অফিসার ঠাকুর কৃষ্ণ বলেন, উপজেলায় চলতি আমন মৌসুমে ৭৩ হাজার ৩৭৫ হেক্টর জমিতে আমন ধান আবাদ করা হয়েছে। প্রতি হেক্টরে চার থেকে সাড়ে চার টন ধান উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়