গুলশানের ইউনিমার্ট ভবনের আগুন নিয়ন্ত্রণে

আগের সংবাদ

ধাক্কা কাটিয়ে চাঙ্গা অর্থনীতি

পরের সংবাদ

মাদক ব্যবসা ছেড়ে সফল উদ্যোক্তা মাজেদ

প্রকাশিত: নভেম্বর ২২, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ২২, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি : ঠাকুরগাঁওয়ের পরিচিত একটি নাম মাজেদ। জেলা সদরের রায়পুর ইউনিয়নের বাসিন্দা তিনি। এক সময় জেলার মানুষ তাকে নামকরা মাদক ব্যবসায়ী হিসেবে চিনলেও এখন তার পরিচয় একজন সফল উদ্যোক্তা হিসেবে। ইচ্ছাশক্তি আর পরিশ্রমে যে কোনো অবস্থায় সুন্দর সফল জীবনের উদাহরণ হয়ে আছেন এই মানুষটি।
একজন মাদক ব্যবসায়ী থেকে সফল উদ্যোক্তা হওয়ার পথচলা নিয়ে কথা হয় মাজেদের সঙ্গে। তিনি জানান, অভাবের তাড়নায় এক সময় নিষিদ্ধ ফেনসিডিল ব্যবসা শুরু করেন তিনি। নিজের পরিচিতি থাকায় এবং তার অবস্থান শহরের নিকটে হওয়ায় খুব দ্রুতই ফেনসিডিল বিক্রি বাড়তে থাকে। ধীরে ধীরে জেলার সবচেয়ে বড় মাদক বিক্রেতা বনে যান। তবে এই নিষিদ্ধ ব্যবসার কারণে মাদক মামলায় পড়তে হয় তাকে। ব্যবসা প্রসারের সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে মামলার সংখ্যা। এক পর্যায়ে মাজেদ ১২টি মামলার আসামি হয়ে যান।
মাজেদ এক সময় বুঝতে পারেন যে, এই ব্যবসা থেকে যথেষ্ট টাকা আয় হলেও মামলা চালাতে গিয়ে আয়ের বড় অংশই খরচ হয়ে যাচ্ছে। তার সঙ্গে সর্বদা আতঙ্ক আর অশান্তির জীবন তাকে অস্থিরতায় ফেলেছে। সমাজের মাঝেও তিনি খারাপ একটি পরিচয় বহন করায় মানুষ তার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করছে। সমাজের প্রতিটি উৎসব ও আচার অনুষ্ঠানে তিনি গ্রহণযোগ্যতা হারাচ্ছে। তাই তিনি এই মদক জগৎ ছেড়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু ঝুলে থাকা ১২টি মাদক মামলা আর সমাজের অগ্রহণযোগ্যতা তার পিছুটান হয়ে দাঁড়ায়।
মাজেদ বলেন, আমি মাদক ব্যবসা ছাড়তে চাইলেও পারছিলাম না। পরে একসময় আমাকে আমাদের ইউপি চেয়ারম্যান ডেকে পাঠান এবং এই নিষিদ্ধ ব্যবসা ছেড়ে দেয়ার অনুরোধ করেন। আমি তার সিদ্ধান্তকে সম্মান জানিয়ে আমার সমস্যাগুলোর কথা তুলে ধরি। তিনি প্রতিটি সমস্যায় তার সর্বাধিক সহযোগিতার আশ্বাস দেন। পরে চেয়ারম্যানের সহযোগিতায় মাদক ব্যবসা ছেড়ে একটি বয়লার মুরগির খামার দিয়ে পথচলা শুরু করি। ধন্যবাদ চেয়ারম্যান সাহেবকে।
সেই রায়পুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নুরোল ইসলাম বলেন, মাজেদের মাদক ব্যবসার কারণে আমাদের এলাকাটা মাদকের আখড়া হয়ে গেছিল। ইউনিয়নের মানুষ এটা নিয়ে আমার কাছে বার বার অভিযোগ জানায়। তাই আমি ইউপি চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার সঙ্গে সঙ্গেই এই মাদক কারবার নির্মূলের সিদ্ধান্ত নিই। আমি চাইছিলাম মাজেদ এই নিষিদ্ধ ব্যবসা ছেড়ে ভালো পথে ফিরে আসুক। তাকে জেলে দিয়ে লাভ নেই। বের হয়ে আবার ব্যবসা শুরু করবে। তাছাড়া ছেলে হিসেবে সে বেশ ভদ্র ছিল। তাই তাকে বুঝিয়ে ও সহযোগিতা করে একটি বয়লার খামার শুরু করাই।
রায়পুর ইউনিয়নের বাসিন্দা সাদেকুল বলেন, একসময় এই ইউনিয়নের বাসিন্দারা এলাকার পরিচর দিতে লজ্জা পেত। মাদক এলা নামেই এটার পরিচয় পেয়েছিল। আমাদের মেয়ে ছেলেকে বিয়ে দিতে পারতাম না। রায়পুর শোনবার সঙ্গে সঙ্গেই প্রস্তাব ফিরে যেত। তবে এখন আমরা বেশ ভালো আছি, শান্তিতে আছি।
বয়লার খামারে সফলতার বিষয়ে মাজেদ বলেন, আমি প্রথমে একটি মুরগির ফার্মে মাংস উৎপাদন নিয়ে বয়লার পালন শিখে আসি। তারপর অল্প পুঁজি নিয়ে ছোট করে খামার প্রকল্প শুরু করে ধীরেই চার বছরে আমার খামারে এখন একসঙ্গে দেড় হাজার বয়লার মুরগি পালিত হচ্ছে। মাজেদ বলেন, এখনো আমার ৫টি মাদক মামলা ঝুলে আছে। কয়দিন পর পর আদালতে হাজিরা আর উকিলের পেছনে টাকা খরচ আমার জন্য অনেক সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কোনোভাবে যদি এই মামলাগুলো থেকে রেহাই পাওয়া যায়। আর সরকারিভাবে সহযোগিতা পাই তাহলে আমি ব্যবসায় আরো প্রসার করতে পারব। সেই সঙ্গে অন্যান্য তরুণদের বয়লার মুরগি পালনের একটি প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে চাই। কারণ আমি চাই না আর কেউ আমার মতো ভুলপথে পা বাড়াক।
মাজেদকে নিয়ে কথা হয় তার প্রতিবেশী রোহান রাজের সঙ্গে। তিনি বলেন, একসময় মাজেদের কারণে নিজেদের সন্তানের বিপথে যাওয়ার আতঙ্কে থাকতাম। মাজেদ থেকে দূরে রাখতাম। কিন্তু এখন আমাদের সন্তানদের সেই মাজেদকে দেখিয়েই অনুপ্রেরণা জাগাই। মাজেদ যদি তরুণদের নিয়ে কাজ করে তাহলে আমরা অবশ্যই অনেক উপকৃত হবো।
ঠাকুরগাঁও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবু তাহের মো. সামসুজ্জামান বলেন, মাজেদের বিষয়টি শুনে বেশ ভালো লাগল। তার জন্য শুভকামনা। তার সবরকম সহযোগিতায় ঠাকুরগাঁও উপজেলা প্রশাসন তার পাশে থাকবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়