গুলশানের ইউনিমার্ট ভবনের আগুন নিয়ন্ত্রণে

আগের সংবাদ

ধাক্কা কাটিয়ে চাঙ্গা অর্থনীতি

পরের সংবাদ

ভূমি অফিসে দালালের উৎপাতে অতিষ্ঠ মানুষ

প্রকাশিত: নভেম্বর ২২, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ২২, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

রুহুল আমীন খান, ময়মনসিংহ থেকে : ময়মনসিংহ সদরের ভূমি অফিসগুলোতে অসৎ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অনিয়ম, দুর্নীতি, জালিয়াতি ও স্বেচ্ছাচারিতার কারণে ভূমি খাত দুর্নীতির বিষবৃক্ষে পরিণত হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিগত দিনে কতিপয় অসাধু কর্মকর্তার লোভ-লালসার কারণে উপজেলা ভূমি অফিস থেকে শুরু করে ইউনিয়ন ভূমি অফিস পর্যন্ত দুর্নীতি ছড়িয়ে পড়েছে। এর বিনিময়ে মোটা অঙ্কের অর্থ, সম্পদ ও কোনো কোনো ক্ষেত্রে জমির মালিক হয়েছেন দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। নবাগত সহকারী কমিশনার (ভূমি) এইচ এম ইবনে মিজান সব অনিয়মের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করে সেবা প্রার্থীদের অধিকার নিশ্চিতের কথা বলছেন।
একাধিক অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ময়মনসিংহ সদরের আওতায় সবগুলো ইউনিয়ন ভূমি অফিসে নামজারি, জমাভাগ, খাজনা আদায়, জমির পর্চা (খসড়া) তোলাসহ ভূমি সংক্রান্ত সব কাজে সরকারি নিয়মকে তোয়াক্কা না করে অনৈতিকভাবে বাড়তি টাকা নেয়া হচ্ছে। চুক্তির টাকা ছাড়া কোনো ফাইলই নড়ে না। টাকা না দিলে নির্ধারিত সময়ে কোনো কাজ আদায় করা যায় না। ইউনিয়ন ভূমি অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ও তাদের নিয়ন্ত্রিত দালালরা গ্রাহকদের কাছ থেকে বাড়তি টাকা নেয়ার পরও বিভিন্নভাবে হয়রানি করছে এমনটাই অভিযোগ উঠেছে। এ-সংক্রান্ত অনেক ভুক্তভোগীর অভিযোগের ভিডিও এ প্রতিবেদকের হাতে এসেছে।
ময়মনসিংহ সদরের বাসিন্দা নজরুল ইসলাম ১ বছর আগে জমি খারিজের জন্য উপসহকারী ভূমি কর্মকর্তা মরিয়ম আক্তারকে ৯ হাজার টাকা দেন। জমি খারিজের কাজ শেষ হলে আরো ৬ হাজার টাকা মরিয়মকে দিতে হবে বলে জানান নজরুল। এরই মধ্যে একাধিক অনিয়ম ও ঘুষ গ্রহণের অভিযোগে জেলা প্রশাসক মরিয়ম আক্তারকে বদলি করলে এই সেবাগ্রহীতা ভূমি অফিসের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন। গত ১৪ নভেম্বর বেলা ১১টায় ভূমি অফিসে ঢুকতেই অফিসের সামনেই দেখা যায় দালালদের দেন দরবার। জমি-সংক্রান্ত কাজে আসা লোকজনকে দালালরা ধরে পাশের চা দোকানে নিয়ে যায়। এখানেই চলে লেনদেন। হেল্প ডেস্ক-এর সামনে বাগবিতণ্ডা করতে দেখা গেল অফিসের প্রসেস সার্ভারের সঙ্গে সেবা প্রার্থী মহসিন রুমেলের। ভুক্তভোগীরা জানান, সদরের প্রতিটি ভূমি অফিসে দালালের উৎপাতে অতিষ্ঠ সাধারণ মানুষ।
১৫ নভেম্বর মোজাম্মেল হক নামের এক সেবাগ্রহীতা দেড় শতাংশ জমির খারিজ করতে গেলে চরঈশ্বরদিয়া ভূমি অফিসে ইদ্রিস আলী নামের স্থানীয় এক দালাল ১২ হাজার টাকার কথা জানান। এ টাকা কোথায় দেয়া হবে জানতে চাইলে ইদ্রিস বলেন, ১০ হাজার টাকা নায়েব নেবে আর বাকিটা তার। পরে উপসহকারী ভূমি কর্মকর্তা বলেন, এসিল্যান্ড অফিসে গিয়ে আবেদন করতে। আবেদন করার জন্য হেল্প ডেস্কে ৩০০ টাকা দিতে বলেন। তবে এসিল্যান্ড বলছেন খারিজের জন্য সার্ভিস চার্জসহ মোট খরচ ১১৭০ টাকা।
ভূমি অফিসের কর্মচারী ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি মো. আবুল মনসুর। মঙ্গলবার সকাল ১১টায় এসিল্যান্ড কার্যালয়ের কয়েকজন কর্মচারীর সঙ্গে তাকে তুমুল বাগবিতণ্ডা করতে দেখা যায়। তিনি বলেন, সে এই অফিসের সাবেক কর্মচারী। কোয়েরি শেষে মাসুদ নামের এক কর্মচারী ফাইল জমা রাখেন। পরে তাকে কিছুদিন ঘোরানোর পরে এখন আবার হেল্প ডেস্কে যাওয়ার কথা বলে। মনসুর বলেন, সদর অফিসের কর্মচারীরা দুর্নীতিতে জর্জরিত। টাকা ছাড়া এরা কোনো কাজ করে না। এরা দৈনিক মজুরির ভিত্তিতে ভূমি অফিসের মতো গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরে কাজ করে। এদের কাছে কোনো গোপনীয়তা নেই। ৫০০ টাকার বিনিময়ে এরা যে কোনো গুরুত্বপূর্ণ নথি যে কারো হাতে তুলে দেয়। চুরখাই এলাকার আব্দুল হামিদ বলেন, টাকার বিনিময়ে অন্য লোক তার নামে খারিজ নিয়ে গেছে। এজন্য তার জমি আরেকজন দখল করে নিয়েছে। হামিদ বলছেন সদর অফিসের একজন সার্ভেয়ারকে মোটা অঙ্কের ঘুষ দিয়ে অন্যের নামে খারিজ দিয়েছেন তারা। সহকারী কমিশনার (ভূমি) বলছেন, জনবল সংকটের কারণে গ্রাহকদের কিছু ভোগান্তি হচ্ছে। সদর অফিসকে ৩টি সার্কেলে ভাগ করে মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। সার্কেলে বিভক্ত হলে কাজের গতি বাড়বে। স্বচ্ছতাও আগের চেয়ে অনেক বৃদ্ধি পাবে। আউটসোর্সিংয়ে যারা কাজ করে তারাই বেশি দুর্নীতি করে এমন প্রশ্নের জবাবে নবাগত সহকারী কমিশনার (ভূমি) এইচ এম ইবনে মিজান বলেন, আগে থেকেই কিছু লোক আউটসোর্সিংয়ে কাজ করেন। তাদের মেয়াদ শেষ তবে কিছুটা সময় দিয়ে অপসারণ করা হবে। তাছাড়া সিসিটিভি মনিটরিং করে যারা বিভিন্ন সেবাগ্রহীতাদের কাজ নিয়ে আসেন তাদের চিহ্নিত করা হবে। সেই সঙ্গে সেবাপ্রার্থীদের দালালদের কাছে না গিয়ে নিজেই আবেদন করে কাজ করার আহ্বান জানান।
ভূমি অফিসের কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে আর্থিক লেনদেনের কোনো সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে সঙ্গে সঙ্গেই কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান এসিল্যান্ড।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়