জাবির ভর্তি পরীক্ষা : প্রক্সি দিতে গিয়ে বুয়েট শিক্ষার্থী কারাগারে

আগের সংবাদ

এশিয়ান আর্চারিতে পদক খরা ঘোচাল বাংলাদেশ

পরের সংবাদ

উপকূল থেকে হারিয়ে যাচ্ছে রুপালি ইলিশের নোনা স্বাদ

প্রকাশিত: নভেম্বর ১৭, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ১৭, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

এ আর সোহেব চৌধুরী, চরফ্যাশন (ভোলা) থেকে : রুপালি ইলিশের আরেক রূপ নোনা বা কাটা ইলিশ। দক্ষিণাঞ্চলের দ্বীপ জেলা ভোলার চরফ্যাশনের উপকূলীয় অঞ্চল থেকে হারিয়ে যাচ্ছে এই নোনা ইলিশ বা কাটা ইলিশ। গৃহস্থ বা মৌসুমি ব্যবসায়ীরা ইলিশ মৌসুমে কম মূল্যে বড় ও মাঝারি আকারের ইলিশ কিনে কেটে পরিষ্কার করে। এরপর সামুদ্রিক বা মোটা লবণ দিয়ে কিছু দিনের জন্য টিনের জারে তা প্রক্রিয়াজাত করে। পরে ইলিশ মৌসুম শেষ হলে তা খোলা বাজারে অধিক মূল্যে বিক্রি করে।
জানা গেছে, ইলিশ মাছ প্রজনন শেষে গভীর নদী ও সাগরে চলে যাওয়ায় জেলে পল্লীতে বর্তমানে চলছে ইলিশের আকাল। আর এ ইলিশ সংকটে চরফ্যাশন উপজেলার দ্বীপাঞ্চলীয় এলাকাগুলোতে ঐতিহ্যবাহী এই নোনা ইলিশ বা কাটা ইলিশ আগের মতো এখন আর দেখা যাচ্ছে না। স্থানীয় শিক্ষক আমির হোসেন বলেন, বিগত বছরগুলোতে জেলেপাড়ায় গেলে এ নোনা বা কাটা ইলিশ পাওয়া যেত। বাজারে এখন সারা বছর ধরে মাছ, মাংস সংরক্ষণে কম মূল্যে বিভিন্ন মডেলের ফ্রিজ পাওয়া যাচ্ছে। এছাড়া চরফ্যাশনের দুর্গম চরাঞ্চলেও বিদ্যুতের ব্যাপক উন্নয়ন হওয়ায় ইলিশ মাছে লবণ দিয়ে তেমন কেউ প্রক্রিয়াজাত করে না। এ শিক্ষক আরো বলেন, জেলেরা আড়তদার ও মহাজনদের দাদনের জালে আটকে থাকায় ভাগে পাওয়া ইলিশ বিক্রি করে দেয়। ফলে জেলেরা বাড়িতে বেশি পরিমাণে ইলিশ নিতে না পারায় তারা এখন আর কাটা বা নোনা ইলিশ তৈরি করে না।
উপজেলার মাদ্রাজ ইউনিয়নের জেলে কামরুল ইসলাম বলেন, ভাগের ইলিশ মাছ বিক্রি করে ফেলি। এছাড়া বর্তমানে তেমন ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে না। আর যা পাই তা জাটকা হওয়ায় নুন (লবণ) দেয়া হয় না। দুলারহাট বাজারের ইলিশ ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সঠিক সময়ে ইলিশ মাছ পাওয়া যায় না। শীত মৌসুমের শুরুতে আমরা বড় ইলিশ পাচ্ছি না। যার ফলে ছোট ইলিশ দিয়ে কাটা বা নোনা ইলিশ তৈরি করা হয় না।
ক্রেতা মো. ফারুক বলেন, দীর্ঘ পাঁচ বছরের মধ্যে আমাদের এলাকায় কাটা ইলিশ বা নোনা ইলিশ তেমন পাওয়া যাচ্ছে না। জাহানপুর ইউনিয়নের জেলে ইউসুফ মাঝি বলেন, জেলেরা তাদের পেশা বদল করার চেষ্টা করছে। বছরের বেশির ভাগ সময় নদী ও সাগরের আবহাওয়া খারাপ থাকে এবং বছরের বিশেষ কিছু সময় ছাড়া তেমন ইলিশ পাওয়া যায় না। যখন ইলিশ পাওয়া যায় তখন প্রচুর দাম থাকে যার কারণে বেশির ভাগ জেলে ইলিশ মাছ বিক্রি করে দেয়ায় কাটা বা নোনা ইলিশ হারাচ্ছে তার নিজস্ব ঐতিহ্য।
চরফ্যাশন মেরিন ফিশারিজ অফিসার সাইদুর রহমান বলেন, একসময়ে জেলেরা অপ্রতিরোধ্যভাবে ইলিশ শিকার করেছে। ক্রেতারাও কম মূল্যে প্রচুর পরিমাণে ইলিশ ক্রয় করতেন। তখনকার সময়ে গ্রামাঞ্চলে ইলিশ সংরক্ষণে ফ্রিজ না থাকায় তখন মানুষ ইলিশ মাছ লবন দিয়ে প্রক্রিয়াজাত করে রাখত। বর্তমানে চরফ্যাশনের উপকূলীয় ও দ্বীপাঞ্চলীয় এলাকাগুলোতে বিদ্যুতায়ন হওয়ায় প্রচুর পরিমাণে বরফ মিল তৈরি হয়েছে এবং বেশির ভাগ মানুষ এখন ফ্রিজারেটর ব্যবহার করে খাবারের মাছ মাংস দীর্ঘদিন ধরে সংরক্ষণ করে ক্রয় বিক্রি করছে। এছাড়া জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে নদীতে ইলিশের অভয়ারণ্য নষ্ট হচ্ছে এবং মাছেরও প্রজনন অনেকটা হ্রাস পাওয়ায় নদীতে ইলিশের পরিমাণও কমে যাচ্ছে। আর বাজারেও ইলিশের প্রচুর চাহিদা ও বেশি দাম থাকার কারণে জেলেরা যা ইলিশ পাচ্ছে তাই বিক্রি করে দিচ্ছে। আর তাই এখন আর ঐতিহ্যবাহী কাটা ইলিশের প্রক্রিয়াজাত তেমন কেউ করে না। জেলেরা যদি সরকারের নির্দেশনা মেনে চলে তাহলে ইলিশের পুরনো ঐতিহ্য আবার ফিরে আসবে বলেও মনে করেন এ কর্মকর্তা।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়