তিনজন গ্রেপ্তার : কৌশলে পানের ভেতর ইয়াবা পাচার

আগের সংবাদ

শূন্য থেকে মহাশূন্য জয় : ডিজিটাল বাংলাদেশ

পরের সংবাদ

ঋণ নিয়ে ‘সাদা সোনা’য় স্বপ্ন বুনছেন চলনবিলের কৃষক

প্রকাশিত: নভেম্বর ১৬, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ১৬, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

মো. মাজেম আলী মলিন, গুরুদাসপুর (নাটোর) থেকে : বর্ষার পানি নামতে শুরু করেছে। কাদা জলে চলছে আমন ধান কাটা। ধান কাটা শেষে জমি পরিষ্কার করে ঋণের বোঝা কাঁধে নিয়েই কাদা মাটিতে সাদা সোনা খ্যাত মসলা জাতীয় ফসল রসুন লাগাতে শুরু করেছে চলনবিলের কৃষক। প্রধান ফসল রসুনে ক্ষতি হলেও সাথী ফসল বাঙ্গি চাষে কিছুটা লাভ হওয়ায় এখনো এই আবাদ ধরে রেখেছে চলনবিল এলাকার কৃষকরা।
চলনবিল অঞ্চলের কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রসুনের ন্যায্যমূল্য না পেলেও কৃষি উপকরণের দাম বাড়ায় বিগত বছরগুলোর তুলনায় রসুনে উৎপাদন খরচ বেড়েছে কয়েকগুণ। ফলে চলতি মৌসুমে রসুন চাষে প্রতি বিঘায় ৩০-৪০ হাজার টাকা ব্যয় হচ্ছে। তাছাড়া বীজ, সার, কীটনাশক, সেচ, নিড়ানী, শ্রমিকের মূল্য বৃদ্ধির কারণে গত বছরের তুলনায় এ বছরে রসুন চাষে প্রতি বিঘায় ৬-৭ হাজার টাকা বেশি খরচ হচ্ছে।
নাটোর কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরে চলনবিলে রসুন চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২৪ হাজার ৮শ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে চলনবিলের গুরুদাসপুর, বড়াইগ্রাম, তাড়াশ, চাটমোহর, সিংড়ায় মোট ২২ হাজার ৩শ হেক্টর জমিতে রসুন চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। এতে প্রতি বিঘায় বীজ বাবদ ১২ হাজার, সার ও কীটনাশক বাবদ ১০ হাজার, শ্রমিক খরচ ৮ হাজার, সেচ বাবদ ৬ হাজার টাকা। এছাড়া ক্ষুদ্র বর্গা চাষিরা প্রতি বিঘা জমি ১০-১২ হাজার টাকায় বর্গা (লিজ) নিয়ে অধিক খরচে রসুন আবাদ করছেন।
গুরুদাসপুর উপজেলার ধারাবারিষা গ্রামের কৃষক আবুল হোসেন (৫০) জানান, এ বছর ৫ বিঘা জমিতে রসুন চাষ করেছেন তিনি। বিঘা প্রতি বীজ, সার-কীটনাশক ও সেচ বাবদ খরচ হয়েছে ২৪ হাজার টাকা। বপন ও নিড়ানীসহ শ্রমিক খরচ হয়েছে ১২ হাজার টাকা। এতে তার বিঘা প্রতি মোট ৩০-৩৫ হাজার টাকা ব্যয় হয়েছে। তবে তিনি রসুনের সাথী ফসল হিসেবে ৫ বিঘা জমিতেই বাঙ্গি আবাদ করেছেন। অনুকূল আবহাওয়া পেলে সেখান থেকে প্রতি বিঘায় উৎপাদন খরচ বাদে ২০-২৫ হাজার টাকা লাভ করা সম্ভব।
একই এলাকার পাটপাড়া গ্রামের কৃষক সুকুমার সরকার জানান, তিনি চলতি বছরে ৬ বিঘা বর্গা (লিজ) নিয়ে রসুন আবাদ করেছেন। রসুন চাষে খরচ বাড়ায় গত বছরের তুলনায় চলতি বছরে প্রতি বিঘায় ৬-৭ হাজার টাকা বেশি খরচ হয়েছে। উপায়ান্ত না পেয়ে সমিতি (এনজিও) থেকে লক্ষাধিক টাকা সুদে নিয়ে রসুনের আবাদ করেছেন। অনুকূল আবহাওয়া না পেলে অথবা ফসলের ন্যায্যমূল্য না পেলে সুদের টাকা দিতে পথে বসতে হবে তাকে।
চলনবিলের রসুন চাষি নাজমুল হোসেন ও জালাল উদ্দিনসহ কয়েকজন জানান, গত প্রায় ২২ বছর ধরে চলনবিল অঞ্চলে ‘বিনাচাষে রসুন’ আবাদ শুরু হলেও এ বছর করোনায় হাতের অবস্থা ভালো না থাকায় ঋণ কর্জ করে জমি লিজ নিয়ে রসুন রোপণ করছেন তারা। ফসলের ন্যায্যমূল্য না পেলে পথে বসতে হবে তাদের। নাটোর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক বলেন, চলনবিলে এ বছর ২৪ হাজার ৮শ হেক্টর জমিতে রসুন রোপণের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। গত বছরের তুলনায় চলতি বছরে চলনবিলে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কম রসুন চাষ করা হচ্ছে। তাছাড়া সবচেয়ে বেশি রসুন চাষ হয় চলনবিলের গুরুদাসপুর, বড়াইগ্রাম, তাড়াশ, চাটমোহর ও সিংড়া বিলের কিছু অংশে। প্রয়োজনীয় কৃষি পরামর্শ এবং সার পৌঁছে দেয়া হচ্ছে কৃষকের মাঝে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়