‘শিশু বক্তা’ রফিকুল মাদানীর বিরুদ্ধে চার্জশিট

আগের সংবাদ

চমক থাকছে টাইগার স্কোয়াডে ; মিরপুরে পতাকা উড়িয়ে পাকিস্তানের অনুশীলন

পরের সংবাদ

একই প্রতিষ্ঠানের দখলে ১০ বছর : মামলায় ৭ বছর ধরে ইজারা বন্ধ বাঘাবাড়ী নৌবন্দরের

প্রকাশিত: নভেম্বর ১৫, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ১৫, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

মো. আব্দুল কুদ্দুস, শাহজাদপুর (সিরাজগঞ্জ) থেকে : শাহজাদপুরের বাঘাবাড়ী নৌ-বন্দরে ৭ বছর ধরে ইজারা প্রক্রিয়া বন্ধ থাকায় সরকার নতুন করে কাউকে ইজারা দিতে পারছে না। নতুন করে টেন্ডার না হওয়ার ফলে প্রকৃত মূল্যে ইজারা দিতে না পারায় সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে কোটি কোটি টাকা। ভুতুড়ে মামলা এবং হাইকোর্টের রিটের কারণে বন্দর কর্তৃপক্ষ ইজারা দিতে পারছে না বলে মনে করছে ব্যবসায়ী মহল।
ফলে শুল্ক আদায় বাড়লেও সরকারের কোষাগারে জমা হচ্ছে পূর্বের নির্ধারিত অর্থই। এ কারণে প্রতি বছর এই খাত থেকে সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে বিরাট অঙ্কের অর্থ। সেই সঙ্গে প্রকৃত মূল্য দিয়ে বন্দর ইজারা নিতে একাধিক প্রতিষ্ঠান ইচ্ছুক থাকলেও মামলার স্থগিতাদেশের কারণে তেমন কিছুই করার নেই বলে দাবি করছে বন্দর কর্তৃপক্ষ।
এদিকে ইজারা বন্ধ থাকলেও চড়া শুল্ক আদায় করছে জনতা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি লিমিটেড। মামলা দিয়ে ৭ বছর ইজারা বন্ধ রেখে জনতা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি লিমিটেড নামের প্রতিষ্ঠানটি কৌশলে বাঘাবাড়ী নৌ-বন্দর নিজেদের করায়ত্বে রেখেছে প্রায় এক যুগ ধরে। নির্দিষ্ট একটি পক্ষকে দীর্ঘকাল সুবিধা দিতে কারো যোগসাজশ আছে কিনা তা নিয়েও জনমনে রয়েছে নানা প্রশ্ন, আলোচনা ও সমালোচনা।
উত্তরবঙ্গের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই বাঘাবাড়ী নৌ-বন্দর থেকে সরকার প্রকৃত রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে দীর্ঘকাল ধরে। বিআইডব্লিউটির বাঘাবাড়ী নৌ-বন্দরটি উত্তরবঙ্গের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বন্দর। সরকার প্রতি বছর এই বন্দরের ইজারা খাত থেকে প্রায় দেড় কোটি টাকা রাজস্ব পায়।
এছাড়া বাঘাবাড়ী বন্দরের পাশে রয়েছে পদ্মা, মেঘনা, যমুনার তেল ডিপো। সরকারি সার, তেল, ধান, চাল, কয়লা, পাথর, সিমেন্ট, ক্লিংকারসহ বেসরকারি বিভিন্ন মালামাল এই বন্দর থেকে লোড-আনলোড করে উত্তরবঙ্গের ১৬টি জেলায় সরবরাহ করা হয়। এছাড়াও বাঘাবাড়ীতেই রয়েছে সরকারি বাফার গুদাম। সরকার এসব থেকে প্রচুর পরিমাণ রাজস্ব পায় এবং এই বন্দরের ওপর নির্ভর করে প্রায় দুই হাজার শ্রমিকের ভাগ্য।
তথ্য অনুসন্ধানে জানা যায়, ১৯৫৮ সালে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ অধ্যাদেশ নং ৭৫ দ্বারা গঠিত এবং সরকারি গেজেট নোটিফিকেশন নং ৪৬৩ এইচটিডি-এর মাধ্যমে ১৯৬০ সাল থেকে বন্দরগুলোর সংরক্ষণে নিযুক্ত বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ নির্ধারিত শর্তাবলীর মাধ্যমে ইজারা প্রদান করে থাকে। এরই ধারাবাহিকতায় বন্দর কর্তৃপক্ষ সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে বাঘাবাড়ী নৌ-বন্দর ২০১২-১৩ অর্থ বছরে জনতা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠানকে ইজারা প্রদান করে। এরপর বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে আরো দুইবার ইজারা পায় প্রতিষ্ঠানটি।
সর্বশেষ ২০১৪-১৫ অর্থ বছরে সর্বমোট ১ কোটি ১৪ লাখ টাকার বিনিময়ে ইজারা গ্রহণ করে জনতা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি লিমিটেড। এই সময়ের মধ্যে দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা, হরতাল, অবরোধ, নদীর পাড় শুকিয়ে যাওয়া, নদীর দক্ষিণ পাড়ে নৌ ফায়ার সার্ভিসের বিল্ডিং নির্মাণসহ দফায় দফায় বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে মোট ৬১ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দাবি করে জনতা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি লিমিটেড।
এদিকে এ সব কারণকে সম্পূর্ণ অযৌক্তিক এবং ভিত্তিহীন উল্লেখ করে সব আবেদন নাকচ করে দেয় বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ। পরবর্তীতে জনতা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি লিমিটেডের পক্ষে প্রতিষ্ঠানটির সাধারণ সম্পাদক মো. আব্দুস ছালাম বাদী হয়ে শাহজাদপুর উপজেলা যুগ্ম জেলা জজ চৌকি আদালতে (১১৯/২০১৭ নং) মামলা দায়ের করেন। সেই মামলাকেও ভিত্তিহীন, কাল্পনিক দাবি করে আদালতে ২০২০ সালের ১০ নভেম্বর লিখিতভাবে জবাব দেন বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের পক্ষে বাঘাবাড়ী বন্দরের তৎকালীন নির্বাহী পরিচালক এস এম সাজ্জাদুর রহমান।
জবাবে তিনি উল্লেখ করেন, ইজারার চুক্তিতে ১৮নং অনুচ্ছেদ অনুযায়ী স্পষ্ট উল্লেখ আছে কোনো নৈসর্গিক কারণে বা হরতাল/ অবরোধ/ ধর্মঘটের কারণে বা ক্ষমতা বহির্ভূত কোনো কারণে যদি খালে নৌ চলাচল বা ঘাট পয়েন্টে যাত্রী ও পণ্য উঠানোর কাজ বন্ধ থাকে, সে ক্ষেত্রে ইজারা গ্রহিতাকে কোনো প্রকার ক্ষতিপূরণ কিংবা ইজারার অর্থ ফেরত দেবে না কর্তৃপক্ষ।
এসব শর্ত জানার পরও রহস্যজনক কারণে বাদীর পক্ষে মামলা চালিয়ে বছরের পর বছর ইজারা বন্ধ রেখে সরকারকে প্রকৃত রাজস্ব থেকে বঞ্চিত করে অবৈধ পন্থায় শুল্ক আদায় করে আসছে জনতা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি লিমিটেড নামের প্রতিষ্ঠানটি।
এ বিষয়ে সাবেক পোর্ট ইজারাদার আলতাফ সরকার জানান, এটি সম্পূর্ণ ভুয়া মামলা। কিছু মানুষকে বিরাট অংকের টাকা দিয়ে ম্যানেজ করে মামলার নামে তামাশা করে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করছে একটি চক্র। মূলত পোর্টের ইজারা বন্ধ রাখতে কৌশলে যে মামলা করেছে তা কোনো যুক্তিতেই টিকতে পারে না। এখানে যে কারণ দেখানো হয়েছে সেগুলো অতি তুচ্ছ ও হাস্যকর। কারণ প্রতি বছরই শুষ্ক মৌসুমে নদীর পাড় শুকিয়ে যায়। এর কারণে শুল্ক আদায় তো বন্ধ থাকে না কখনো।
ব্যবসায়ী আবুল সরকার জানান, মামলায় হরতাল অবরোধের কারণে ক্ষতির কথা বলা হয়েছে। এটা চরম চতুরতা। কারণ হরতাল, অবরোধে সড়কপথে যান চলাচল বন্ধ থাকলেও নৌযান চলাচল বন্ধ থাকেনি। সেক্ষেত্রে বন্দরে যাত্রী এবং পণ্য পরিবহন দ্বিগুণ বেড়ে যায়। ফলে ক্ষতির কথা বলা হলেও ব্যাপক লাভবান হয় প্রতিষ্ঠানটি। মূলত প্রচুর মুনাফা করার পরও কেবল সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দিতে নিজেদের করায়ত্বে বন্দর কুক্ষিগত করে রেখে লোকসান দেখিয়ে অসৎ উদ্দেশ্যে সম্পূর্ণ কাল্পনিক একটি মামলা দিয়ে এবং হাইকোর্টের স্থগিতাদেশ করিয়ে বছরের পর বছর ইজারা বন্ধ রেখেছে ছালাম বেপারির সমিতি।
বিষয়টি নিয়ে বাঘাবাড়ীতে কর্মরত বন্দর ও পরিবহন কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামানের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘মামলাটি যেহেতু আদালতে চলমান, তাই আইনের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে এ সম্পর্কে মন্তব্য করা উচিত হবে না।’

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়