সম্প্রীতির জমিনে শকুনের চোখ

আগের সংবাদ

ফেসবুকের মূল প্রতিষ্ঠান এখন ‘মেটা’

পরের সংবাদ

কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার : কুলিয়ারচরে ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে উঠেছে অবৈধ মাল্টিপারপাস

প্রকাশিত: অক্টোবর ৩০, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: অক্টোবর ৩০, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

আলি হায়দার, কুলিয়ারচর (কিশোরগঞ্জ) থেকে : কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচরে অলিগলিতে গড়ে উঠেছে অবৈধ মাল্টিপারপাস ও সুদের রমরমা ব্যবসা। এসব অবৈধ মাল্টিপারপাস ও সুদ ব্যবসায় চড়া সুদের ফাঁদে পড়ে অনেক নিরীহ মানুষ হয়রানির শিকারসহ শারীরিক নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। অনেকে কিস্তি দিতে না পাড়ায় তাদের সর্বস্ব লুটে নিচ্ছে এসব প্রতিষ্ঠান ও সুদি কারবারিরা। ফলে সর্বস্ব হারিয়ে এলাকা ছাড়া হচ্ছেন অসংখ্য মানুষ। এসব প্রতিষ্ঠানের টাকা আদায় ও নির্যাতনের জন্য রয়েছে আলাদা টর্চার সেল।
অভিযোগ রয়েছে, চড়া সুদের টাকা দিতে কেউ অপারগ হলে এসব টর্চার সেলে মধ্যযুগীয় কায়দায় শারীরিক নির্যাতন মাধ্যমে টাকা আদায় করে সুদ কারবারিরা।
এদিকে মাইক্রো ক্রেডিটের (ক্ষুদ্রঋণ) নামে সারাদেশে অনিবন্ধিত সুদের ব্যবসা পরিচালনাকারী (সমবায় সমিতি, মাল্টিপারপাস ও এনজিওর) প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির বিরুদ্ধে হাইকোর্ট মামলা করার নির্দেশ জারি করেছেন। বাংলাদেশ ব্যাংককে এ নির্দেশ বাস্তবায়নের জন্য বলা হলেও কুলিয়ারচরে এসব সুদের ব্যবসা যেন আরো মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। এসব সুদের প্রতিষ্ঠান ও কারবারি কর্তৃক প্রতিদিন শতাধিক মানুষ শারীরিক নির্যাতনেরই শিকার হচ্ছেন, যা অনেকটা প্রকাশ্যে, সবার সামনে ঘটছে।
জানা যায়, স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী ও অসাধু স্বর্ণের দোকানদার এসব অবৈধ মাল্টিপারপাস ব্যবসার নামে চড়া সুদের কারবার করছে। সহজ ও দৈনিক কিস্তির লোভ দেখিয়ে গ্রামের সহজ-সরল লেখাপড়া না জানা দিনমজুর, রিকশাচালকদের টার্গেট করেই মূলত গড়ে তুলেছে তাদের এসব প্রতিষ্ঠান। যার ৯৮ ভাগেরই নিবন্ধন নেই। অনেকে একটি মাল্টিপারপাসের নিবন্ধন নিয়ে আড়ালে ভিন্ন নামে অবৈধ মাল্টিপারপাস খুলে বসেছে।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, শুধুমাত্র পৌর সদরেই এমন অর্ধশতাধিক অবৈধ, অনিবন্ধিত মাল্টিপারপাস ব্যবসা গড়ে উঠেছে। এসব ব্যবসার কোনোটির নেই সরকারি নিবন্ধন। ফলে সরকার প্রতি বছর এ খাত থেকে কোটি টাকার বেশি রাজস্ব হারাচ্ছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক রিকশাওয়ালা বলেন, মেয়ের বিয়ের সময় ১৫ হাজার টাকা নিয়েছিলাম দুই মাস মেয়াদে ৩ হাজার টাকা লাভ দেয়ার শর্তে। সেই ১৫ হাজার টাকা থেকে তারা আবার ৫০০ টাকা কেটে রেখেছে খরচ বাবদ। লোন নেয়ার পরদিন থেকে শুরু হয় দৈনিক ৩০০ টাকা করে কিস্তি। এটা ছিল তাদের সর্বনিম্ন হারের লোন। তারপর থেকে একদিন কিস্তি দিতে একটু দেরি হলেই ফোনে অক্ষত ভাষায় গালাগালি শুনতে হতো। কোনো কারণে কিস্তি দিতে না পারলে গায়ে পর্যন্ত হাত তুলত।
চড়া সুদের ফাঁদে পড়ে এলাকা ছাড়া হওয়া এক ভুক্তভোগী জানান, বিশেষ প্রয়োজনে তিনি একবার ৪০ হাজার টাকা সুদে নেন। ৪ হাজার টাকা তারা রেখে দেয় খরচ বাবদ। এরপর কিছু গ্যাপ দিয়ে ছয় মাসে মোট ৪৮ হাজার টাকা পরিশোধ করা হলে তারা বলে আমার কাছে আরো ৫০ হাজার টাকা পায়। একপর্যায়ে আমাকে হিসাব দেয়, আমার যেসব কিস্তি গ্যাপ হয়েছে প্রতি গ্যাপে সমিতির নিয়ম হিসাবে টাকা ডাবল হয়েছে। সে লাভের টাকা সুদ ও সুদের সুদ মিলে আরো ৫০ হাজার টাকা পাওনা রয়েছে। এরপর এই ৫০ হাজার টাকা দিতে অপারগ হয়ে আমি এলাকা ছাড়া রয়েছি। এলাকায় এলে আমাকে টর্চার রুমে নিয়ে চেয়ার-টেবিলের সঙ্গে বেঁধে মারধর করতে পারে, তাই ভয়ে এলাকায় আসছি না ।
জানা যায়, এসব অবৈধ মাল্টিপারপাস, সুদ কারবারি ও স্বর্ণের দোকানদারদের প্রধান ও মূল টার্গেট লেখাপড়া না জানা দিনমজুর ও রিকশাচালক। এর মধ্য তারা দিয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিলেও সরকার এ খাত থেকে কোনো ধরনের রাজস্ব পাচ্ছে না। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা চায় সচেতন মহল ও সুশীল সমাজ।
এ বিষয়ে কুলিয়ারচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুবাইয়াৎ ফেরদৌসী বলেন, বিষয়গুলো সম্পর্কে অবগত হয়েছি। শিগগিরই এসব অবৈধ সমবায় সমিতির ব্যাপারে আইন অনুযায়ী যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে। আর যেসব নিবন্ধিত সমিতিগুলো কর্তৃপক্ষের অজ্ঞাতসারে উচ্চ সুদের কারবার করছে তাদের বিরুদ্ধেও কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়