পাসপোর্ট জটিলতায় আটকে আছেন অর্ধলাখ প্রবাসী

আগের সংবাদ

পোশাক খাতে ক্রয়াদেশ বাড়ছে

পরের সংবাদ

করোনায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের প্রভাব : চারঘাটে স্কুলগামী ৬৮৪ ছাত্রীর বাল্যবিয়ে

প্রকাশিত: অক্টোবর ২৭, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: অক্টোবর ২৭, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

মাইনুল হক সান্টু, চারঘাট (রাজশাহী) থেকে : চারঘাটে করোনাকালে দীর্ঘ সময় স্কুল বন্ধ থাকায় স্কুলগামী কিশোরী শিক্ষার্থীদের বিয়ে দেয়ার প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে। মহামারি করোনার কারণে গত বছরের মার্চ থেকে সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী সারাদেশের মতো উপজেলার প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ ছিল। সরকারি উদ্যোগে ডিজিটাল পদ্ধতিতে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হলেও গ্রাম পর্যায়ের অধিকাংশ শিক্ষার্থীর স্মাটফোন ও ইন্টারনেট সুবিধা না থাকায় অধিকাংশ শিক্ষার্থীই বেশিরভাগ সময়ই বাড়িতে বসে অলস সময় কাটাচ্ছিল। দরিদ্র অধিকাংশ অভিভাবক স্কুল বন্ধের সুযোগে তাদের মেয়েদের অল্প বয়সে বিয়ে দিয়ে দেন। প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী ৬৮৪ জন ছাত্রীর বিয়ে হয়ে গেছে।
উপজেলা পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য মোতাবেক এই উপজেলার প্রায় ৮৫ ভাগ মানুষ কৃষিসংক্রান্ত দৈনিক আয়ের ওপর নির্ভরশীল। করোনায় চলমান লকডাউনে অধিকাংশ এসব দৈনিক আয়ের মানুষের আয় তুলনামূলক কমে যায়। পাশাপাশি তারা এই মহামারিতে জীবন নিরাপত্তায় ভুগতে থাকেন। ফলে বাল্যবিয়ে হয়েছে। এসব কিশোরী শিক্ষার্থীর অধিকাংশ অভিভাবক আথিক অভাব-অনটন ও আকস্মিক ভালো ছেলে পাওয়ায় তাদের মেয়েদের অল্প বয়সে বিয়ে দিয়েছেন বলে তারা এই প্রতিবেদককে জানান।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চারঘাট উপজেলায় প্রায় ৬৮টি মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রায় ১৫ হাজার ৯৪৭ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। যার মধ্যে ৬ হাজার ৮৯৫ জন ছাত্র এবং ৯ হাজার ৩১ জন ছাত্রী রয়েছে। গত দেড় বছরে উপজেলার প্রায় প্রতিটি স্কুলের অন্ততপক্ষে একজন থেকে একাধিক কিশোরী শিক্ষার্থীদের বাল্যবিয়ে হয়েছে বলে জানা যায়। প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী ৬৮৪ জন নারী শিক্ষার্থীর বিয়ে হয়ে গেছে। শতকরা হার প্রায় ৮ শতাংশ।
সরজমিন গিয়ে দেখা যায়, বিয়ে হয়েছে এমন ছাত্রী যারা অধিকাংশই অষ্টম, নবম ও দশম শ্রেণিতে পড়ুয়া ছাত্রী। প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী ষষ্ঠ শ্রেণিতে ১.৪৬, সপ্তম শ্রেণিতে ৩.৩৯, অষ্টম শ্রেণিতে ৫.৬৭, নবম শ্রেণিতে ১২.৭২, দশম শ্রেণিতে ১৭.৫৪ শতাংশ ছাত্রীদের বাল্যবিয়ে হয়েছে।
এর মধ্যে উপজেলার ঝিকরা উচ্চ বিদ্যালয়ে সর্বোচ্চ ২২ জন ছাত্রী, উত্তর মেরামত উচ্চ বিদ্যালয়ের ১৯ জন ছাত্রী, হাবিবপুর দাখিল মাদ্রাসার ৪ জন, সরদহ দাখিল মাদ্রাসার ৪ জন, নিমপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের ৩ জন, ডাকরা বালিকা বিদ্যালয়ে ৯ জন শিক্ষার্থীর বিয়ে হয়ে গেছে। এদের অধিকাংশ ছাত্রীই বিয়ের পর স্কুলে আসা বন্ধ করে দিয়েছে।
বাল্যবিয়ের প্রবণতা বৃদ্ধি পাওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন উপজেলার স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন থানাপাড়া সোয়ালোজের সহকারী পরিচালক ও নারী পক্ষের সভানেত্রী মাহমুদা বেগম গিনি। স্কুলগামী ছাত্রীদের বাল্যবিয়ে রোধে স্কুলে স্কুলে শিক্ষাথীদের কাউন্সিল করার পরামশ প্রদান করেন তিনি।
বাল্যবিয়ের বিষয়টি নিশ্চিত করে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জয়নাল আবেদীন বলেন, এটা অত্যন্ত দুঃখজনক এবং করোনার কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকা ও অথনৈতিক সংকটের সুযোগে অভিভাবকরা স্কুলগামী শিক্ষার্থীদের বিয়ে দিয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে স্কুল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে আর যাতে বাল্যবিয়ের ঘটনা না ঘটে তার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নিদেশনা দেয়া হয়েছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়