ইজিবাইকচালককে হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তার ৬ : মাদকের টাকা জোগাতে ছিনতাই

আগের সংবাদ

ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইলে ডিজিটাল ছোঁয়া

পরের সংবাদ

বাঘায় পদ্মায় বিলীন হচ্ছে চকরাজাপুর ইউনিয়ন

প্রকাশিত: অক্টোবর ২৬, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: অক্টোবর ২৬, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

আব্দুল হামিদ মিঞা, বাঘা (রাজশাহী) থেকে : ভাঙনে পাল্টে যাওয়া চকরাজাপুরের মানচিত্রে আবারো আঘাত হেনেছে প্রমত্তা পদ্মা। হঠাৎ করেই পানি বৃদ্ধির সঙ্গে নতুন করে ভাঙন দেখা দিয়েছে পদ্মায়। নদীর একূল-ওকূল ভাঙা-গড়ার আচরণগত এই নিষ্ঠুরতায় ভাঙনের কবলে পড়ে বিলীন হচ্ছে ঘরবাড়ি, ফসলি জমি ও গাছপালা। বাঘা উপজেলা সদর থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরে চকরাজাপুর ইউনিয়ন।
ভাঙনের কবলে পড়ে মানচিত্র থেকে হারিয়ে গেছে পদ্মার চরাঞ্চলের চকরাজাপুর গ্রাম। এই গ্রামের নামেই নামকরণ করা হয়েছে চকরাজাপুর ইউনিয়নের। গত দুই মাসের ভাঙনে ইউনিয়নটির ৯টি ওয়ার্ড়ের ৩, ৫, ৬ ও ৮ নম্বর ওয়ার্ড়ের বেশিরভাগ এলাকা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। আর ৪ নম্বর চক রাজাপুর ওয়ার্ডের পুরোটি গিলে নিয়েছে পদ্মা।
গতকাল সোমবার নৌকায় চকরাজাপুর ইউনিয়নে যাওয়ার পথে দেখা গেছে ভাঙনের ভয়াবহ দৃশ্য। কখনো ভাঙছে দ্রুত গতিতে আবার কখনো নীরব থাবায় পদ্মা ভেঙে চলেছে চকরাজাপুরের বিস্তীর্ণ এলাকা। ভাঙনের তীব্রতা চলছে নতুন করে জেগে ওঠা পদ্মার চরের ল²ীনগর, কালিদাশখালি এলাকায়। ভাঙন থেকে প্রায় ২০ মিটার দূরে রয়েছে কালিদাশখালি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও সরকারের দেয়া ভূমিহীন বাহের আলীর পাকা বাড়ি। বাহের আলীর বাড়ি ও কালিদাশখালী বিদ্যালয় সংলগ্ন পাকা সড়কটির প্রায় ১ কিলোমিটার নদীগর্ভে চলে গেছে। বাহের আলী তার পাকা বাড়িটি ভেঙে নিচ্ছেন।
এ বছর ভাঙনের কবলে পড়লে কালিদাশখালি গ্রাম থেকে সরিয়ে নেয়া হয়েছে চকরাজাপুর ইউনিয়ন পরিষদ ভবন ও পরিষদ সংলগ্ন চেয়ারম্যানের বসতবাড়ি ও কমিউনিটি ক্লিনিক। ইউনিয়নটির ৪ গ্রামের অর্ধশতাধিক ঘরবাড়ি, আম বাগানসহ কয়েক একর ফসলি জমি, কাঁচা-পাকা সড়ক পদ্মায় বিলীন হয়েছে।

ভিটেমাটি হারিয়ে কেউ অন্য জায়গায় আবার কেউ জমি লিজ নিয়ে বসতি স্থাপন করেছেন এই চরেই। পরিবার নিয়ে স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ে আশ্রয় নিয়েছেন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান। এখন অন্য জায়গায় বাড়ি তুলছেন। ভাঙনের কবলে পড়লে চর এলাকার ১১৫টি বিদ্যুতের পুল তোলা হয়েছে বলে জানান নাটোর পল্লী বিদুৎ সমিতি ২-এর বাঘা জোনাল অফিসের জিএম সুবির কুমার।
স্থানীয়রা জানান, মাসাধিকাল ধরেই পদ্মার ভাঙন কম-বেশি চলছে। গত বছরের ভাঙনে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে দুই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ বসতবাড়ি, আবাদি জমি ও গাছপালা। দীর্ঘদিনের ভাঙনে চলে গেছে চকরাজাপুর গ্রামটি। ইউনিয়নের তিন ভাগের এক ভাগ চলে গেছে নদীগর্ভে। এভাবে ভাঙতে থাকলে উপজেলার মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাবে চকরাজাপুর ইউনিয়ন।
লক্ষীনগর এলাকার সোবাহান ও হাজেরা বেগম বলেন, বাবা মায়ের সঙ্গে বড় হয়েছি এই চরে। জন্মভূমির প্রতি ভালোবাসায় এলাকা ছাড়তে পারছি না। ভাঙনের কবলে পড়ে চকরাজাপুর হাইস্কুলের পাশে একজনের জমিতে বসতি গড়েছেন গ্রাম পুুলিশ নূর মোহাম্মদ (৫৩)। তিনি জানান, জমির মালিক তার নামে মামলা করেছে। জমির ন্যায্য ইজারা মূল্য দিতে চেয়েও মালিক মানছেন না।
চকরাজাপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মজিবর রহমান বলেন, গত বছর ভাঙনের কবলে পড়লে বিদ্যালয়টি দুই কিলোমিটার দূরে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। এ বছর আবার ভাঙনের কবলে পড়েছে। তিনি বলেন, প্রতি বছর পদ্মার ভাঙন কম-বেশি লেগেই আছে। আর জিও ব্যাগ ফেলে রক্ষার চেষ্টা করছে রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ড।
চেয়ারম্যান আজিজুল আযম বলেন, শুনেছি উপজেলার পাকুড়িয়া ইউনিয়নের আলাইপুর নাপিতপাড়া থেকে চকরাজাপুর ইউনিয়নের ল²ীনগরের শেষ মাথা পর্যন্ত নদী শাসনের আওতায় আনার একটি প্রকল্প হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে পদ্মার প্রান্ত নদী ভাঙনের হাত হতে রক্ষা পাবে। বাঁচবে চকরাজাপুর ইউনিয়নসহ পাকুড়িয়া ও মনিগ্রাম ইউনিয়নের পদ্মা পাড়ের লোকজন।
উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এডভোকেট লায়েব উদ্দীন লাভলু বলেন, গত তিন দশকের ভাঙনে নদীতে বিলীন হয়ে গেছে চকরাজাপুরসহ পাকুড়িয়া ও মনিগ্রাম ইউনিয়নের নদী তীরবর্তী এলাকার হাজার হাজার বিঘা ফসলি জমি, বসতভিটা, রাস্তা-ঘাট, হাট-বাজার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ মসজিদ ও কবরস্থান। ওই সময় থেকে নদী ভাঙনে সর্বস্ব হারিয়েছে সচ্ছল-কৃষিনির্ভর সহস্রাধিক পরিবার। এদের অনেকেই বিভিন্ন স্থানে গিয়ে বসতবাড়ি গড়ে তুলে বসবাস করছেন। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও হাট-বাজার অন্য জায়গায় প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পাপিয়া সুলতানা জানান, সরজমিন তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করব।
রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম শেখ বলেন, নদী শাসনের জন্য চারঘাট-বাঘার পয়েন্টে কাজের প্রস্তুতি রয়েছে। ৩০০ কোটি টাকার একটি প্রকল্পের মধ্যে বাঘার ১৩ কিলোমিটার নদী ড্রেজিং রয়েছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়