টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সফল পাঁচ অধিনায়ক : তাইফ রহমান রাফি

আগের সংবাদ

সড়কে নেই ‘ডিজিটাল’ ছোঁয়া

পরের সংবাদ

পীরগঞ্জে হামলা-আগুন : ফেসবুক পোস্টকে পুঁজি করে সক্রিয় হয় সৈকত

প্রকাশিত: অক্টোবর ২৪, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: অক্টোবর ২৪, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : রংপুরের পীরগঞ্জে হামলা ও অগ্নিসংযোগের অন্যতম হোতা ¯œাতক পড়–য়া সৈকত মণ্ডলের (২৪) একটি ফেসবুক পেজ রয়েছে। যার অনুসারী প্রায় তিন হাজার। সেখানে প্রায়ই ধর্মীয় উসকানিমূলক পোস্ট দিতেন তিনি। নিজেকে তুলে ধরার জন্য একটি দুর্বলতম সময়ের অপেক্ষায় ছিলেন সৈকত। আর সাম্প্রতিক সময়ের ঘটনায় ইতোমধ্যেই গ্রেপ্তার উজ্জ্বল ও পরিতোষের ধর্মীয় অনুভূতি নিয়ে ফেসবুকে পাল্টাপাল্টি পোস্টের ঘটনাকে পুঁজি করে সক্রিয় হয়ে ওঠে সৈকত মণ্ডল। আর তাকে এ কাজে সহায়তা করে রবিউল ইসলাম (৩৬)।
সহিংসতার আগে ‘এ মুহূর্তে গ্রাম পুলিশের কাছ থেকে পাওয়া সংবাদ, হিন্দুদের আক্রমণে এক মুসলিমকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে’ মর্মে উসকানিমূলক পোস্ট দেয় সৈকত মণ্ডল। সেই পোস্টের সূত্র ধরে রবিউল ইসলাম তার কাছে অবস্থিত একটি মসজিদ থেকে মাইকিং করেন। তিনি ‘তৌহিদি জনতাসহ ধর্মপ্রাণ মানুষকে হিন্দুদের প্রতিরোধের আহ্বান’ জানান। পরে নিজে একটি ঢিবির ওপর দাঁড়িয়ে উত্তেজনাপূর্ণ বক্তব্য দিয়ে হামলায় অংশ নেন। যা আগে থেকেই ঠিক করে রেখেছিলেন তারা দুজন।
রংপুরের পীরগঞ্জে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করার উদ্দেশ্যে হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনার অন্যতম হোতা সৈকত মণ্ডল ও সহযোগী রবিউল ইসলামকে টঙ্গী থেকে গ্রেপ্তারের পর সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র‌্যাবের লিগ্যাল এন্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন। গতকাল শনিবার রাজধানীর কারওয়ানবাজারে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
খন্দকার আল মঈন বলেন, গত ১৭ অক্টোবর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ধর্মীয় অবমাননাকর পোস্টকে কেন্দ্র করে রংপুরে পীরগঞ্জের বড় করিমপুর গ্রামে দুর্বৃত্তরা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্টের উদ্দেশ্যে কয়েকটি ঘরবাড়ি, দোকানপাট ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করে। ওই ঘটনায় হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপপ্রচারের অভিযোগে রংপুরে পীরগঞ্জ থানায় ৩টি মামলা হয়।

এরই পরিপ্রেক্ষিতে তদন্ত সাপেক্ষে র‌্যাব-১৩ একাধিক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসে।
তাদের জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে হামলায় নেতৃত্বদান ও ঘটনা সংগঠিত করার সংশ্লিষ্টতা সম্পর্কে জানা গেলে জড়িতদের গ্রেপ্তারে র‌্যাব গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ায়। এরই ধারাবাহিকতায়, সদর দপ্তর গোয়েন্দা শাখা ও র‌্যাব-১৩ এর একটি আভিযানিক দল গত শুক্রবার রাতে টঙ্গী এলাকা থেকে সৈকত মণ্ডল ও রবিউল ইসলামকে গ্রেপ্তার করে।
তাদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে অরাজকতা তৈরি ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের লক্ষ্যে হামলা-অগ্নিসংযোগ ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপপ্রচার ও মাইকিং করে হামলাকারীদের জড়ো করা হয়। সৈকত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উসকানিমূলক, বিভ্রান্তিকর ও মিথ্যাচারের মাধ্যমে স্থানীয় জনসাধারণকে উত্তেজিত করা ছাড়াও হামলা ও অগ্নিসংযোগে অংশগ্রহণে উদ্বুদ্ধ করে। তার নেতৃত্বে বেশ কয়েকজন হামলায় সরাসরি অংশ নিয়ে বাড়িঘর, দোকানপাট ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করে।
গ্রেপ্তারকৃত রবিউলকে মাইকিং করে লোকজন জড়ো করার নির্দেশনাটিও দেন সৈকত। তবে ঘটনা পরবর্তী সময়ে আত্মগোপনে চলে যান তিনি। ঠিক কী উদ্দেশ্যে উসকানিমূলক পোস্ট দিয়েছিলেন সৈকত? এমন প্রশ্নের জবাবে কমান্ডার মঈন বলেন, তার (সৈকত) ফেসবুক পেইজে ২৭০০-২৮০০ ফলোয়ার রয়েছে। আর এ ঘটনাটি কাজে লাগিয়েছে কেবল অনুসারী বাড়ানোর জন্য। পাশাপাশি ব্যক্তিগত ইমেজ বাড়বে বলেও ধারণা ছিল তার।
তিনি আরো বলেন, গ্রেপ্তার রবিউল রংপুরের পীরগঞ্জের হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় অন্যতম উসকানিদাতা। সে স্থানীয় একটি মসজিদের মুয়াজ্জিন। হামলা ও অগ্নিসংযোগের আগে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মাইকিংয়ের মাধ্যমে বিভিন্ন উসকানিমূলক ও মিথ্যাচার করে গ্রামবাসীকে উত্তেজিত করে তোলে ও হামলায় অংশগ্রহণের জন্য জড়ো হতে বলে। পরে মাইকিংয়ের দায়িত্ব তার আস্থাভাজনকে দিয়ে নিজে সশরীরে অংশগ্রহণ ও নির্দেশনা দেন।
তিনি জানান, গ্রেপ্তারকৃত সৈকতের নির্দেশনায় ও প্ররোচনায় সে মাইকিং করাসহ হামলায় অংশ নেয়। এরপর আত্মগোপনে চলে যায়। অন্য এক প্রশ্নের জবাবে খন্দকার আল মঈন বলেন, সৈকত জানিয়েছেন, তিনি রংপুরের একটি ডিগ্রি কলেজের শিক্ষার্থী। ছাত্রলীগের নেতা হিসেবে নিজে থেকে প্রচার করে থাকতে পারেন। তবে এ সংক্রান্ত কোনো তথ্যপ্রমাণ তিনি দিতে পারেননি। সৈকত বিভিন্ন সময় ফেসবুকে নিজের সম্পর্কে মিথ্যা প্রচারণা চালিয়েছেন। কোনো কোনো সময় তিনি নিজেকে ছাত্রনেতা দাবি করেছেন। বিভিন্ন দলের কর্মী হিসেবেও নিজেকে পরিচয় দিয়েছেন। তবে সুনির্দিষ্ট তথ্য বা প্রমাণ দিতে পারেননি।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়