ইভ্যালির রাসেল-শামীমার বিরুদ্ধে আরেক মামলা

আগের সংবাদ

রুট পারমিটের তোয়াক্কা নেই রাজধানীর গণপরিবহনের

পরের সংবাদ

গায়েবি বিল ভাউচারে লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ : বদরগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স

প্রকাশিত: অক্টোবর ২০, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: অক্টোবর ২০, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

মাহফুজার রহমান, বদরগঞ্জ (রংপুর) থেকে : উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ইউএইচএফপিও) আরশাদ হোসেনের বিরুদ্ধে করোনাকালে সরকারি বরাদ্দের বিপুল অঙ্কের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ পাওয়া গেছে। তিনি পিয়ন (অফিস সহায়ক) আলী হাসানকে ল্যাব টেকনিশিয়ানের পদে দায়িত্ব দিয়ে তার মাধ্যমে হাতিয়ে নিয়েছেন সরকারি বরাদ্দের লাখ লাখ টাকা। গত ২৮ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রীর ৭৫তম জন্মদিন পালন উপলক্ষে হাসপাতাল চত্বরে ৭৫টি ঔষধি ও ভেষজ চারা রোপণের জন্য তাকে ২৫ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। কিন্তু তিনি শুধুমাত্র দুটি গোলাপ ও একটি কড়াই গাছের চারা রোপণ করে বরাদ্দের টাকা হাতিয়ে নেন। এ ছাড়া তার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে তিনি গায়েবি বিল-ভাউচার দিয়ে বিভিন্ন খাত থেকে দফায় দফায় লাখ লাখ টাকা নিজের পকেটে নিয়েছেন।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, ডা. আরশাদ হোসেন ২০১৯ সালের ৭ জুলাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যোগদান করেন। এরপর থেকে তার বিরুদ্ধে প্রশাসনিক অদক্ষতা, নানা অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগে বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর উঠে আসে। চলতি বছরের এপ্রিল মাসে করোনা মোকাবিলায় প্রস্তুতি সম্পন্ন করাসহ বিভিন্ন প্রয়োজনে হাসপাতালে সরকারিভাবে ১৭ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। ডা. আরশাদ হোসেন প্রচারণা, ক্যাম্পেইন, ব্যানার, আপ্যায়ন, পরিবহনসহ বিভিন্ন খাতে সামান্য টাকা ব্যয় করে ভুয়া বিল-ভাউচার তৈরির মাধ্যমে প্রায় ৮ লাখ টাকা হাতিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। বিষয়টি নিয়ে চিকিৎসক, নার্স, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে কানাঘুষা শুরু হলে তাদের ম্যানেজ করতে গ্রেড অনুপাতে এক হাজার থেকে ৪ হাজার টাকা দেয়া হয়। এদিকে করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় বদরগঞ্জের শাহ্পুর হোটেল, রুপম হাউস, ঢাকা আবাসিক হোটেলে চিকিৎসক ও স্টাফদের থাকা-খাওয়াসহ বিভিন্ন খাতে ভুয়া বিল-ভাউচার করা হয়। বাস্তবে এসব নামে বদরগঞ্জে কোনো আবাসিক হোটেলের অস্তিত্ব নেই।
এদিকে ৩০টি কমিউনিটি সেন্টার ও ইউনিয়ন পর্যায়ে স্বাস্থ্যকেন্দ্র পরিদর্শনের (মনিটরিং ও সুপারভিশন) জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে একটি নতুন গাড়ি দেয়া হয়। নিয়ম হচ্ছে তিনি এসব কেন্দ্র পরিদর্শন করবেন। কিন্তু তিনি ব্যক্তিগত কাজে গাড়িটি ব্যবহার করে অফিস শেষে রংপুর শহরের বাসায় নিয়ে চলে যান। নিয়মিত ৩০টি কমিউনিটি সেন্টার ও ইউনিয়ন পর্যায়ে স্বাস্থ্যকেন্দ্র পরিদর্শন দেখিয়ে হাজার হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। হাসপাতাল চত্বরের বাসায় অবস্থান করার নিয়ম থাকলেও তিনি একদিনের জন্যও অবস্থান করেননি।
এদিকে আরশাদ হোসেনের আস্থাভাজন অফিস পিয়ন আলী হাসানের সঙ্গে রয়েছে তার বিশেষ সখ্যতা। তার দাপটে অন্যান্য নার্স ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অনেকটাই কোণঠাসা। অফিস পিয়ন হলেও তিনি চলেন চিকিৎসকদের স্টাইলে। কাউকে মান্য করেন না। আরশাদ হোসেনের নির্দেশে গত এক বছর ধরে প্যাথলজি বিভাগের টেকনিশিয়ান ইনচার্জের দায়িত্ব পালন করছেন এই আলী হাসান। অথচ প্যাথলজি বিভাগে আবু বক্কর সিদ্দিক নামে একজন কর্মরত থাকলেও তাকে দায়িত্ব বুঝে দেয়া হচ্ছে না। এর আগে বদলি নেয়া ল্যাব টেকনিশিয়ান আব্দুল জলিল প্যাথলজি বিভাগের পরীক্ষা-নিরীক্ষা থেকে প্রতি মাসে সরকারি কোষাগারে ১০ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকা জমা দিতেন। অথচ আলী হাসান এক হাজার থেকে ১২শ’ টাকাও জমা করেন না। গত তিন মাস থেকে তিনি কোনো টাকাও জমা দেননি বলে দাবি করেন প্রধান হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা ফজলুল হক। প্যাথলজি বিভাগে করোনার র‌্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্ট, রোগীর রক্ত, মলমূত্রসহ অন্যান্য পরীক্ষা-নিরীক্ষা থেকে প্রাপ্ত অর্থের সিংহভাগ টাকা যাচ্ছে ইউএইচএফপিও আরশাদ হোসেনের পকেটে- এমন অভিযোগ করেছেন হাসপাতালের একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী। সম্প্রতি আলী হাসানের মাধ্যমে ৭ হাজার টাকায় কেনা কম্পিউটার প্রিন্টার মেশিন ২৫ হাজার টাকার বিল ভাউচার করে জমা দেয়া হয়। এছাড়া পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার টাকা বরাদ্দ থাকলেও গোটা হাসপাতাল চত্বর যেন ময়লা-আবর্জনার ভাগাড়। এসব খাতের সিংহভাগ টাকা আলী হাসানের নামে চেক ইস্যু করে ব্যাংক থেকে তুলে নিয়েছেন আরশাদ হোসেন। হাসপাতালে সরবরাহ করা করোনার কিটসহ অন্যান্য দ্রব্যসামগ্রী স্টোর কিপারের মাধ্যমে তালিকাভুক্ত করার নিয়ম থাকলেও এখানে তার বালাই নেই। আরো গুরুতর অভিযোগ পাওয়া গেছে আরশাদ আলীর আশ্রয়-প্রশ্রয়ে থাকা পিয়ন আলী হাসানের বিরুদ্ধে। তিনি হাসপাতাল চত্বরকে মাদকের আখড়ায় পরিণত করেছেন। যা নিজের মুখে স্বীকার করেন আরশাদ হোসেন। এদিকে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলা করতে সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে চলতি বছরের ১০ মে মোট ২ হাজার ৫০০ পিচ কিট (র‌্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্ট) সরবরাহ করা হয়। যা ১০০ টাকা করে হলেও মূল্য দাঁড়ায় ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা। অথচ আলী হাসান করোনা টেস্টের কিট বিক্রির মাত্র ৬০ হাজার টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দেন। যার সিংহভাগ টাকা আলী হাসানের মাধ্যমে আত্মসাৎ করেন আরশাদ আলী। অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে আলী হাসান বলেন, ‘পিয়ন পদে নই। আমি স্ববেতনে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে এখানে অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর পদে যোগদান করি। ইউএইচএফপিও স্যার আমাকে ল্যাবের দায়িত্ব দিয়েছেন। তবে কোনো অনিয়ম ও দুর্নীতির সঙ্গে আমার সম্পৃক্ততা নেই। আর মাদক সেবনের প্রশ্নই ওঠে না বলে দাবি করেন তিনি।’
স্টোরকিপার আনোয়ার হোসেন বলেন, হাসপাতালে ওষুধসহ সব ধরনের জিনিসপত্র সরবরাহ করা হলে আগে স্টোক রেজিস্ট্রারে তুলতে হবে। কিন্তু ইদানীং এসবের কোনো নিয়মনীতি মানা হচ্ছে না। অধিকাংশ জিনিসপত্র আলী হাসানের মাধ্যমে জমা নেয়া হয়। এ কারণে স্টোক রেজিস্ট্রার মেইনটেন্যান্স করতে পারছি না। প্রধান হিসাব রক্ষক কর্মকর্তা ফজলুল হক বলেন, প্যাথলজি থেকে প্রাপ্ত টাকা প্রতি সপ্তাহে আমার মাধ্যমে ট্রেজারি চালানে ব্যাংকে জমা দেয়ার নিয়ম। কিন্তু প্যাথলজি বিভাগের কোনো টাকার হিসাব আমার কাছে দেয়া হয় না। আলী হাসান দায়িত্ব নেয়ার পর কোন টাকা কোথায় গেছে, তা আমার জানা নেই। ইউএইচএফপিও আরশাদ হোসেন বলেন, আলী হাসানের সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত কোনো সখ্যতা নেই। সব হিসাব ক্যাশিয়ারের কাছে থাকতে হবে এমন কোনো কথাও নেই। করোনা মোকাবিলার জন্য ১৭ লাখ টাকা প্রচার, স্টাফ, আপ্যায়নসহ বিভিন্ন কাজে খরচ হয়েছে। তার বিল ভাউচার আছে। আমি হাসপাতালের এক টাকাও এপাশ-ওপাশ করিনি।
রংপুর জেলা সিভিল সার্জন হিরম্ব কুমারের মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘এমন অভিযোগের কোনো তথ্য আমার কাছে নেই। খোঁজ-খবর নিয়ে এ ব্যাপারে প্রশাসনিকভাবে পদক্ষেপ নেয়া হবে বলে জানান তিনি।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়