রাশিয়ার একাতেরিনবার্গে ভেজাল মদপানে মৃত্যু ১৮

আগের সংবাদ

মরুর বুকে গতির ঝড় অব্যাহত

পরের সংবাদ

হঠাৎ কমছে রেমিট্যান্স!

প্রকাশিত: অক্টোবর ১৯, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: অক্টোবর ১৯, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

মরিয়ম সেঁজুতি : করোনা শুরুর পর এক ধরনের অনিশ্চয়তা থেকে অনেকে জমানো টাকা দেশে পাঠাচ্ছিলেন। কেউ কেউ চাকরি হারিয়ে কিংবা ব্যবসাবাণিজ্য বন্ধ করে সব অর্থ পাঠিয়ে দেশে ফিরেছেন। বৈশ্বিক বিনিয়োগ পরিস্থিতির কারণে হুন্ডি চাহিদা কম থাকায় পুরো অর্থ আসছিল ব্যাংকিং চ্যানেলে। গত অর্থবছরে রেমিট্যান্স বেড়েছিল ৩৬ শতাংশ। কিন্তু হঠাৎ করে গত তিন মাস রেমিট্যান্স ধারাবাহিকভাবে কমছে। সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, দেশের যে কোনো খারাপ অবস্থা কিংবা উৎসবকে কেন্দ্র করে প্রবাসীরা সব সময় বেশি অর্থ পাঠিয়ে থাকেন। করোনার অনিশ্চয়তার মধ্যেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। আবার করোনার স্থবিরতার কারণে হুন্ডি প্রবণতা একেবারে কমে যায়। শিক্ষা, চিকিৎসা, ভ্রমণসহ বিভিন্ন কারণে সব সময় অবৈধ চ্যানেলের অর্থের চাহিদা থাকে। করোনার স্থবিরতার মধ্যে এসব বন্ধ থাকলেও এখন সব খুলতে শুরু করায় ব্যাংকিং চ্যানেলের বাইরে চাহিদা বেড়েছে। এ ছাড়া জমানো টাকা না পাঠিয়ে অনেকে আবার জমাতে শুরু করেছেন। আবার সশরীরে যাওয়া-আসা শুরু হওয়ায় হয়তো অনেকে নিজের সঙ্গে করে বৈদেশিক মুদ্রা নিয়ে আসছেন। তবে রেমিট্যান্স পরিস্থিতি শিগগিরই আবার আগের অবস্থায় ফিরবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসের তুলনায় চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে প্রবাসীরা ৪২ কোটি ডলার কম পাঠিয়েছেন। গত সেপ্টেম্বর মাসে তারা রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন ১৭২ কোটি ৭০ লাখ ডলার। ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে প্রবাসীরা পাঠিয়েছিলেন ২১৫ কোটি ডলার। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, গত ৫ জুলাই থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর- এই তিন মাসে প্রবাসীরা পাঠিয়েছেন ৫৪০ কোটি ৮০ লাখ ডলার। আগের বছরের একই সময়ে (২ জুলাই থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর) পাঠিয়েছিলেন ৬৭১ কোটি ৩০ লাখ ডলার। অর্থাৎ গত অর্থবছরের তুলনায় প্রবাসী আয় কমেছে ১৩০ কোটি ডলার। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, চলতি বছরের জুলাইয়ে দেশে ১৮৭ কোটি ১৪ লাখ ৯০ হাজার মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা- যা জুনের চেয়ে ৬ কোটি ৯৩ লাখ ডলার কম এবং আগের বছরের (২০২০ সালের জুলাই) একই সময়ের তুলনায় ২৭ দশমিক ৯৭ শতাংশ কম। গত বছর জুলাইয়ে এসেছিল ২৫৯ কোটি ৮২ লাখ ডলার। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব বলছে, গত আগস্টে এসেছে ১৮১ কোটি ডলার- যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ১৫ কোটি ডলার কম। ২০২০ সালের আগস্টে এসেছিল ১৯৬ কোটি মার্কিন ডলার।
পর পর তিন মাস টানা প্রবাসী আয় কমে যাওয়া প্রসঙ্গে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) গবেষক ড. জায়েদ বখত বলেন, ব্যাংক ব্যবস্থায় আগের চেয়ে প্রবাসীরা রেমিট্যান্স কম পাঠালেও দেশে আগের মতোই রেমিট্যান্স আসছে। কারণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, দীর্ঘদিন  উড়োজাহাজ চলাচল বন্ধ ছিল। তখন হুন্ডিও বন্ধ হয়ে যায়। প্রবাসীরা বাধ্য হয়ে ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। কিন্তু গত কয়েক মাস ধরে উড়োজাহাজ চলতে শুরু হওয়ায় আবার হুন্ডি বেড়েছে। এ প্রসঙ্গে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর মনে করেন, হুন্ডি বেড়ে যাওয়ায় ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স কমেছে। তবে দেশে ফেরা প্রবাসীদের অনেকেই বিদেশে যেতে পারেননি। এ কারণে প্রবাসী আয় কমেছে। এর আগে এক সংলাপে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য্য বলেছিলেন, রেমিট্যান্সের যে জাদু সেটি সম্ভবত শেষ হতে চলেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের সেপ্টেম্বর মাসে সৌদি আরব প্রবাসীরা ৪০ কোটি ৯৪ লাখ ডলার দেশে পাঠিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসীরা পাঠিয়েছেন ২৯ কোটি ৮২ লাখ ডলার। আর সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে এসেছে ১৩ কোটি ১৬ লাখ ডলার। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, প্রতি বছর দেশে যে রেমিটান্স আসে তার প্রায় অর্ধেক পাঠান সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত বাংলাদেশিরা। স্বাধীনতার পর থেকেই সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স আসছে সৌদি আরব থেকে। এতদিন দ্বিতীয় অবস্থানে ছিল সংযুক্ত আরব আমিরাত। তবে গত সাত মাস ধরে আমিরাতকে ডিঙিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে থাকছে যুক্তরাষ্ট্র। রেমিট্যান্সের তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যাচ্ছে, বেশি রেমিট্যান্স আসে এ রকম সব দেশ থেকেই রেমিট্যান্স কমছে। তবে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য থেকে হ্রাসের হার তুলনামূলকভাবে কম।
এদিকে ব্যাংকিং চ্যানেল ও কার্ব মার্কেটেও ডলারের চাহিদা বেড়ে গেছে। হুন্ডির কারণে ডলারের চাহিদা বাড়লে মূল্যও বাড়িয়েছে। একবার বাড়লে তা সাধারণত কমে না। চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে প্রতি ডলারের দর ৮৫ টাকা ৬৫ পয়সায় উঠেছে। গত আগস্টের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত প্রতি ডলার বিক্রি হচ্ছিল ৮০ টাকা ৮০ পয়সা দরে। বাজার ঠিক রাখতে গত দুই মাসে ১০১ কোটি ডলার বিক্রি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ডলারের দামের এই উল্লম্ফন শুধু আমদানি ব্যয় বৃদ্ধিই নয়, বরং ডলারের মূল্যবৃদ্ধির ফলে ব্যাংকিং খাতে নেয়া ঋণের অঙ্কও বেড়ে যায়। তাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয় উদ্যোক্তারা। দিনশেষে ক্রেতা-ভোক্তাদের ওপরই তা বর্তায়। করোনার এ সময়ে ব্যবসাবাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। লকডাউন কাটিয়ে নতুন করে পথ চলা শুরু হওয়ার এই মুহূর্তে ডলারের দাম বেড়ে গেলে তা অর্থনীতিতে নতুন চাপ সৃষ্টি করবে বলে মনে করছে সূত্রগুলো।
প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালের ১ জুলাই থেকে রেমিট্যান্সে ২ শতাংশ হারে প্রণোদনা দিচ্ছে সরকার। অর্থাৎ কোনো প্রবাসী ১০০ টাকা দেশে পাঠালে তার সঙ্গে আরো ২ টাকা যোগ করে ১০২ টাকা পাচ্ছেন সুবিধাভোগী। এছাড়া ঈদ ও উৎসবে বিভিন্ন ব্যাংক ও মোবাইল ব্যাংকিংয়ের সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান সরকারের প্রণোদনার সঙ্গে বাড়তি আরো এক শতাংশ দেয়ার প্রস্তাব দিয়ে আসছে। এতে করে বৈধ চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠাতে উৎসাহী হয়ে উঠেন প্রবাসীরা। কিন্তু গত কয়েক মাস ধরে আবার নেতিবাচক ধারায় নেমে আসে রেমিট্যান্স।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়