ধর্ষণের মামলা থেকে রক্ষা পেতে ছাত্রলীগ নেতার বিয়ে

আগের সংবাদ

বিশ্ব খাদ্য দিবসের অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী : খাদ্যের অপচয় কমাতে হবে

পরের সংবাদ

বগুড়ায় অসাম্প্রদায়িক ঐতিহ্যবাহী ‘বউমেলা’

প্রকাশিত: অক্টোবর ১৬, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: অক্টোবর ১৬, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

আমিনুল ইসলাম শ্রাবণ, ধুনট (বগুড়া) থেকে : দেবী বিদায়ের ক্ষণকে রাঙিয়ে তুলতে প্রতি বছর বগুড়ার ধুনট পৌর এলাকার সরকারপাড়া গ্রামে ঐতিহ্যবাহী ‘বউমেলা’ অনুষ্ঠিত হয়। এ মেলাকে ঘিরে হিন্দু-মুসলিম সম্প্রীতির অনন্য চিত্র ফুটে ওঠে। দুই ধর্মের মানুষের সম্প্রতির এ বন্ধনে এবারো স্বাক্ষর রেখেছে ঐতিহ্যবাহী ‘বউমেলা’। সরকারপাড়া গ্রামের ৬৯ বছর ধরে শারদীয় দুর্গাপূজা উদযাপন করেন গ্রামবাসী। গ্রামের প্রমথনাথ কমল-কামিনী পূজা অঙ্গনের পাশেই রয়েছে ইছামতি নদী। ধুনট পৌর এলাকার সরকারপাড়া, দাসপাড়া, চরধুনট, ধুনট সদর, কলেজপাড়া ও কুঠিবাড়ী

গ্রামের পূজামণ্ডপের প্রতিমাগুলো এ নদীতে বিসর্জন দিতেন সনাতন ধর্মালম্বীরা। একসঙ্গে অনেক প্রতিমা বিসর্জন দেয়ার এই দৃশ্য দেখতে ইছামতি তীরে সমবেত হন কয়েক গ্রামের হাজার হাজার মানুষ। তাদের এই সমাগম ঘিরে ইছামতির তীরে হরেক রকমের দোকানি পণ্যের পসরা সাজান। এভাবে সরকারপাড়া গ্রামের মেলা শুরু।
প্রতিমা বিসর্জন বেলার এ মেলাকে ঘিরে প্রতি বছর হিন্দু-মুসলিমসহ বিভিন্ন ধর্মের হাজার হাজার মানুষের সমাগম ঘটে। এ কারণে গ্রামবাসী মেলার শৃঙ্খলা রক্ষায় একটি সিদ্ধান্ত নেন। দুপুর ২টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত মেলার মূল অংশে পুরুষের প্রবেশ নিষেধ। শুধুমাত্র নারীদের জন্য মেলাটি সুরক্ষিত করা হয়। এখান থেকেই এ মেলা ‘বউমেলা’ হিসেবে পরিচিতি লাভ করে।
সরকারপাড়া গ্রামের পূজা উদযাপনের জন্য প্রতি বছর একটি কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির লোকজন পূজা পরিচালনায় ভূমিকা রাখেন। কমিটির অধীনে ‘বউমেলা’ পরিচালনার জন্য পৃথক একটি স্বেচ্ছাসেবক কমিটি করা হয়। সরকারপাড়াসহ কয়েকটি গ্রামের হিন্দু-মুসলমান পুরুষের সমন্বয়ে স্বেচ্ছাসেবক কমিটি হয়। তারা মেলার মূল অংশে পুরুষের প্রবেশপথ বন্ধ রাখেন। মেলায় নারীরা অবাধে কেনাকাটার সুযোগ পাওয়ায় প্রতি বছর এ মেলায় নারী দর্শনার্থীদের সমাগম বাড়ছে।
মেলায় আসা শিক্ষার্থী রিয়া ভৌমিক, পূজা সরকার, তীথি ভট্টাচার্য, মৌ ভৌমিক, বীথি ভট্টাচার্য জানান, বছরজুড়ে এ দিনটির জন্য অপেক্ষা করি। শুধুমাত্র নারীকেন্দ্রিক মেলা হওয়ায় স্বাচ্ছন্দ্যে কেনাকাটার সুযোগ পাওয়া যায়। মেলাকে কেন্দ্র করে সবাই একত্রিত হই।
মেলায় আসা আঞ্জুমান আরা বলেন, পূজা উপলক্ষে মেলা বসলেও আমরা আসি। কারণ, মেলার মূল অংশে পুরুষ থাকেন না। এজন্য ইচ্ছা মতো মেলা করার সুযোগ পাই। তাছাড়া এলাকার হিন্দু বা মুসলমান ধর্মের পরিচিত নারীদের সঙ্গেও দেখা হয়। এতে আমরা নারীরা একসঙ্গে আনন্দ করার সুযোগ পাই। গৃহবধূ সনি সরকার বলেন, বিজয়া দশমীর এ দিনটি সরকার পাড়াতেই থাকি।
সরকারপাড়া গ্রামের পূজা উদযাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক আনন্দ কুমার সরকার বলেন, দেশের বিভিন্ন স্থানে পূজামণ্ডপে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা স্বাভাবিকভাবে একটি আতঙ্কের সৃষ্টি করেছে। বিভিন্ন স্থানে পূজা ও অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতাও হয়তো সংক্ষিপ্ত করা হয়েছে। কিন্তু সরকারপাড়ায় পরিপূর্ণভাবে পূজার আনুষ্ঠানিকতা এবং জমজমাট ভাবে ‘বউমেলা’ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ অঞ্চলের মানুষের সৌহার্দ্য-সম্প্রতির এক বন্ধন তৈরি করে ‘বউমেলা’। এবারো মেলাটি সফলভাবে আমাদের সম্প্রতির বন্ধন অটুট করতে ভূমিকা রেখেছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়