ধর্ষণের মামলা থেকে রক্ষা পেতে ছাত্রলীগ নেতার বিয়ে

আগের সংবাদ

বিশ্ব খাদ্য দিবসের অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী : খাদ্যের অপচয় কমাতে হবে

পরের সংবাদ

পাঁচ বছর হলেও জানেন না চেয়ারম্যান : মিরসরাইয়ে বসতিহীন পাহাড়ের ভেতর সড়ক ছাড়াই ব্রিজ নির্মাণ

প্রকাশিত: অক্টোবর ১৬, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: অক্টোবর ১৬, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

মিরসরাই (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি : জনবসতিহীন পাহাড়ের ভেতর সড়ক ছাড়াই একটি ব্রিজ নির্মাণ করেছে মিরসরাই উপজেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগ। ২০১৫-২০১৬ অর্থবছরে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের সেতু/কালভার্ট নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় উপজেলার হিঙ্গুলী ইউনিয়নের ফরেস্ট অফিসের রাস্তায় শিমুলতলী ছড়ার উপর ৩৪ ফুট দীর্ঘ এ ব্রিজটি নির্মাণ করা হয়। ব্রিজের স্মৃতি ফলকে নাম ও দৈর্ঘ্য লেখা থাকলেও কত টাকা ব্যয়ে এটি নির্মাণ করা হয়েছে তা ঘষে তুলে ফেলা হয়েছে। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয়ে একাধিকবার যোগাযোগ করেও ব্রিজটির নির্মাণমূল্য জানা যায়নি।
জানা গেছে, বারইয়ারহাট-খাগড়াছড়ি সড়কের সঙ্গে সংযুক্ত হিঙ্গুলী-ফরেস্ট অফিসের এ সড়কটি ২নং হিঙ্গুলী ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের মেহেদীনগর গ্রামে অবস্থিত। সড়কটির প্রায় ১২ কিলোমিটারের মধ্যে বসতি থাকলেও শেষাংশে শুধু পাহাড় আর পাহাড়। নেই কোনো জনমানব। পাহাড়ের ভাজে ভাজে অবস্থিত ভূমিতে ধানসহ বিভিন্ন রবিশস্য চাষাবাদ করা হয়। প্রায় ৫ বছর আগে নির্মিত হওয়া ব্রিজটির পশ্চিম পাশে সড়ক থাকলেও পূর্ব পাশে কোনো সড়ক নেই।
একটি সরু ছড়া দিয়ে পাহাড়ের উপর থেকে বেয়ে আসা পানি প্রবাহিত হয়। কৃষকরা উৎপাদিত ধান, শাকসবজি কাঁধে করে জমির আইল দিয়ে নিয়ে যায়। সড়কবিহীন জায়গায় নির্মাণ করার ফলে ব্রিজটি কোনো কাজেই আসছে না।
সরজমিন গিয়ে দেখা যায়, হিঙ্গুলী-ফরেস্ট বিট সড়কের ফরেস্ট বিট অফিসের পর আধা কিলোমিটার দূরে মেহেদীনগর গ্রামে কোনো জনবসতি নেই। সড়কটি যত পাহাড়ের দিকে গেছে ততটাই এর প্রস্থ সরু হয়ে গেছে। ব্রিজের পশ্চিম প্রান্তে সড়ক থাকলেও সেখানেও মাটি দেয়া হয়নি। ব্রিজটির পূর্ব প্রান্তে কোনো সড়কই নেই। সড়কবিহীন ঠাই দাঁড়িয়ে আছে ব্রিজটি।
স্থানীয় কৃষক মো. জেবাল হক বলেন, পাহাড়ের ভেতর কোনো জনবসতি না থাকলেও প্রায় ৮০ একর জমিতে বোরো ও আমন ধান, রবিশস্য (ঝিঙা, চিচিঙা, বরবটি), লেবু চাষ করা হয়। ব্রিজটি নির্মাণের পর প্রায় ৫ বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো সড়ক নির্মাণ করা হয়নি। যোগাযোগ অসুবিধার কারণে পাহাড়ের ভেতর অনেক জায়গায় চাষাবাদ হচ্ছে না। চাষ করলেও প্রায় ১৫-২০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে ধান, সবজি বারইয়ারহাট পৌর বাজারসহ অন্যান্য বাজারে নেয়া যায় না। আমরা চাই ব্রিজটির সঙ্গে যেন দ্রুত সড়ক নির্মাণ করা হয়।
২নং হিঙ্গুলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিন হারুন বলেন, হিঙ্গুলী-ফরেস্ট বিট রাস্তাটি হিঙ্গুলী ইউনিয়নে পড়লেও ব্রিজটির অবস্থান করেরহাট ইউনিয়নে। সেখানে ব্রিজ নির্মাণের বিষয়ে আমি জানি না। এছাড়া রাস্তার বিষয় করেরহাট ইউনিয়ন পরিষদ দেখবে। ব্রিজের স্মৃতিফলকে হিঙ্গুলী ইউনিয়ন লেখা থাকলেও তিনি এ বিষয়ে অবগত নন বলে জানান।
১নং করেরহাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এনায়েত হোসেন নয়ন বলেন, হিঙ্গুলী-ফরেস্ট বিট সড়ক যেহেতু হিঙ্গুলী ইউনিয়নে অবস্থিত, তাই ব্রিজটির অবস্থানও হিঙ্গুলী ইউনিয়নে। ওটি যদি করেরহাট ইউনিয়নে হতো আমি অবশ্যই রাস্তা নির্মাণের ব্যবস্থা করতাম।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. ছাইফুল্লাহ মজুমদার বলেন, ২০১৫-২০১৬ অর্থবছরে

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের সেতু/কালভার্ট নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় উপজেলার হিঙ্গুলী ইউনিয়নের ফরেস্ট অফিসের সড়কে শিমুলতলী ছড়ার উপর ৩৪ ফুট দীর্ঘ ব্রিজটি নির্মাণ করা হয়। পাহাড়ের ভেতর জনবসতি না থাকলেও কৃষির প্রতি গুরুত্ব দিয়ে ব্রিজটি নির্মাণ করা হয়েছিল। তিনি বলেন, আমাদের দায়িত্ব ব্রিজ করা সড়ক নির্মাণ করা নয়। সড়ক তৈরির কাজ এলজিইডি দেখে। ব্রিজ নির্মাণের প্রায় ৫ বছর পরও কেন সড়ক তৈরি করা হয়নি এ বিষয়ে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ভালো বলতে পারবেন।
ব্রিজটির নির্মাণ ব্যয় সম্পর্কে এই কর্মকর্তা বলেন, ব্রিজটি নির্মাণে কত টাকা ব্যয় হয়েছিল এ বিষয়ে তাৎক্ষণিক কিছু বলা যাবে না। প্রায় ৫ বছর আগে এটি নির্মাণ করা হয়েছিল, গোডাউনে অনেক ফাইলের মধ্যে এটির ফাইল নিচে চলে গেছে। ফাইল খুঁজে পেতে একটু সময় লাগবে। ব্রিজের স্মৃতিফলকে নির্মাণ মূল্যের অংশ ঘষার বিষয়ে তিনি অবগত নন বলে দাবি করেন।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) উপজেলা প্রকৌশলী মো. কামরুজ্জামান বলেন, হিঙ্গুলী-ফরেস্ট বিট সড়কে পাহাড়ের ভেতর দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের ব্রিজ নির্মাণ ও সড়কের সংযোগ না থাকার বিষয়ে আমি খবর নিয়ে বলতে পারব।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়