ধর্ষণের মামলা থেকে রক্ষা পেতে ছাত্রলীগ নেতার বিয়ে

আগের সংবাদ

বিশ্ব খাদ্য দিবসের অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী : খাদ্যের অপচয় কমাতে হবে

পরের সংবাদ

এলএনজির দাম বাড়ছেই : ঘাটতি মেটাতে অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বাড়াচ্ছে সরকার

প্রকাশিত: অক্টোবর ১৬, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: অক্টোবর ১৬, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

দেব দুলাল মিত্র : এলএনজির দাম বেড়েই চলছে। পেট্রোবাংলা প্রয়োজনীয় এলএনজি আমদানি করতে পারছে না। সরকারের কাছ থেকে চাহিদা মতো ভর্তুকিও মিলছে না। সবকিছু মিলিয়ে সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী এলএনজি সম্প্রসারণ কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। এই অবস্থায় ঘাটতি মেটাতে বিকল্প উপায় খোঁজা হচ্ছে। এদিকে স্থানীয় পর্যায়ে গ্যাস উৎপাদন আশানুরূপ না হওয়া এবং আন্তর্জাতিক বাজারে এলএনজির দাম বেড়ে যাওয়ায় জ¦ালানি বিশেষজ্ঞরা বিকল্প উপায় খুঁজতে পরামর্শ দিয়েছেন। সরকারের পক্ষ থেকেও বাপেক্সকে নতুন নতুন গ্যাসক্ষেত্র খুঁজে বের করে গ্যাস উত্তোলন বাড়ানোর ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।
জানা গেছে, দিন দিন দেশে গ্যাসের ব্যবহার বেড়েই চলছে। ব্যবহার বাড়লেও সেই তুলনায় উৎপাদন বাড়েনি। আশানুরূপভাবে গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কারও হয়নি। এর ফলে অনেক দিন থেকেই দেশে গ্যাস সংকট চলছে। শীত মৌসুমে খোদ রাজধানীর এক বিশাল এলাকাতেই তীব্র গ্যাসের সংকট দেখা দেয়। গ্যাস সংকটে উৎপাদন ব্যবস্থা স্থবির হয়ে পড়েছে। পাইপলাইনে বাসাবাড়িতে গ্যাস সরবরাহ পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে। গ্যাস সংকট মেটাতে কয়েক বছর ধরে বিদেশ থেকে এলএনজি আমদানি করা হলেও সংকট কাটছে না। উপরন্তু আন্তর্জাতিক বাজারে এলএনজির দাম দিন দিন বেড়েই চলছে। বাড়তি দামে এলএনজি আমদানি করতে সরকার এখন হিমশিম খাচ্ছে। দাম বাড়ার পর এলএনজি আমদানির পরিমাণ কমিয়ে দেয়া হয়েছে। সরকারের তরফ থেকে পেট্রোবাংলা প্রয়োজনীয় ভর্তুকিও পাচ্ছে না। বাধ্য হয়েই তাদের আমদানি কমাতে হয়েছে। এখন পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, গ্যাসের অভাব থাকায় গত সপ্তাহে থেকে সিএনজি ফিলিং স্টেশনগুলোতে পিকআওয়ারে প্রতিদিন ৪ ঘণ্টা গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রাখা হয়েছে।
বিদ্যুৎ, জ¦ালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, এলএনজি আমদানিতে এবার পেট্রোবাংলা মাত্র ২৫ শতাংশ ভর্তুকি পেয়েছে। ৩ হাজার ৯৪১ কোটি টাকা ভর্তুকি চাওয়া হলেও পাওয়া গেছে মাত্র ১ হাজার কোটি টাকা। এই অর্থের পরিমাণ সরকারের চাহিদার চার ভাগের এক ভাগ। এতে এলএনজির ভর্তুকি সংস্থানের জন্য পেট্রোবাংলার জন্য চাপ সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া গত দুই বছরে অর্থ মন্ত্রণালয় চার হাজার করে মোট ৮ হাজার কোটি টাকা পেট্রোবাংলার কাছ থেকে নিয়ে গেছে। যে পরিমাণ টাকা মন্ত্রণালয় নিচ্ছে সেই পরিমাণ ভর্তুকি পেট্রোবাংলা পাচ্ছে না। এ কারণে পেট্রোবাংলা তাদের নিজেদের প্রকল্প ব্যয় মেটাতেই এখন হিমশিম খাচ্ছে। অপরদিকে গ্যাসভিত্তিক চারটি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের কাজ এগিয়ে চলছে। নারায়ণগঞ্জের মেঘনা ঘাটে ৩টি এবং খুলনার রূপসায় ১টি বিদ্যুৎকেন্দ্র আগামী দুই বছরের মধ্যে উৎপাদনে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে। তখন এগুলো চালিয়ে রাখতে প্রতিদিন ১২ থেকে ১৫ কোটি ঘনফুট গ্যাসের প্রয়োজন হবে। স্থানীয় গ্যাসের স্বল্পতার কারণে চড়া দামে আমদানি করা এলএনজি দিয়ে এই বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো চালানোর চিন্তা করা হচ্ছিল। এখন এলএনজির দাম বেড়ে যাওয়ায় তা আরো কঠিন হয়ে উঠেছে। এলএনজি আমদানি কমানো হলেও দেশীয় ক্ষেত্রগুলো থেকে গ্যাস উত্তোলন বাড়ানোর জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
জ্বালানি বিভাগ সূত্র জানায়, দেশের নিয়মিত গ্যাসক্ষেত্রগুলো থেকে সরকার গ্যাসের উৎপাদন বাড়ানোর চেষ্টা চালাচ্ছে। চলমান গ্যাসকূপের পাশাপাশি নতুন এবং আরো গভীর কূপ খনন করছে। সিলেট অঞ্চলে বাপেক্সের নতুন ৩টি কূপ থেকে গ্যাসের উৎপাদন ২০ মিলিয়ন ঘনফুট বাড়বে। আগামী বছরের জুন মাসে এই গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আরো কয়েকটি কূপ খননের কাজ চলছে। সব প্রকল্প চালু হলে দেশে গ্যাসের ঘাটতি কিছুটা কমবে।
স্থানীয় পর্যায়ে গ্যাস উৎপাদন আশানুরূপ না হওয়া এবং আন্তর্জাতিক বাজারে এলএনজির দাম বেড়ে যাওয়ায় সরকার ও জ¦ালানি বিশেষজ্ঞরা সরকারকে বিকল্প উপায় খুঁজতে পরামর্শ দিয়েছেন। তারা বলছেন, সরকারকে বসে থাকলে চলবে না। অতীতে অনেক সময় পেয়েও পেট্রোবাংলাকে কাজে লাগাতে পারেনি। নতুন নতুন গ্যাসকূপ অনুসন্ধানে বিদেশি কোম্পানিকে কাজ দেয়ার জন্য চেষ্টা হয়েছে। এসব কারণেই এখন দেশে গ্যাসের সংকট তৈরি হয়েছে।
জ¦ালানি বিভাগের সিনিয়র সচিব আনিছুর রহমান জানান, বিশ্ববাজারে এলএনজির দাম বেড়েছে। চাহিদা অনুযায়ী এলএনজি আমদানি করতে হলে ভর্তুকিও বাড়াতে হচ্ছে। কিন্তু বিপুল পরিমাণ ভর্তুকি দেয়া সম্ভব হচ্ছে না।
তিনি বলেন, এভাবে কত দিন চালিয়ে নেয়া সম্ভব হবে তা এখনই বলা মুশকিল। তবে সংকট সমাধানে আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। বিকল্প উপায় খোঁজা হচ্ছে। অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বাড়ানোর চেষ্টা চলছে।
বাপেক্সের এমডি মোহাম্মদ আলী বলেন, শুধু এলএনজির ওপর ভরসা করে থাকলে চলবে না। বিকল্প উপায় হিসেবে এবং গ্যাস সংকট মোকাবিলার জন্য বাপেক্সকে শক্তিশালী করার কাজ চলছে। সরকার সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে। বাপেক্স বিশেষজ্ঞ নিয়োগের কাজ শেষ করেছে। অভিজ্ঞ বাপেক্স কর্মীদেরও চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের মাধ্যমে ধরে রাখা হয়েছে। আমরা চ্যালেঞ্জ নিতে পুরোপুরি প্রস্তুত।
জ¦ালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক শামসুল আলম বলেন, এলএনজি ব্যয়বহুল গ্যাস, আমদানির খরচ অনেক বেশি। দিন দিন এলএনজির দাম বেড়েই চলছে। সামনের দিনগুলোতে গ্যাসের চাহিদা আরো বাড়বে। ভবিষ্যতে গ্যাসের সংকট মোকাবিলা করতে হলে দেশে গ্যাসের উত্তোলন বাড়াতে হবে। নতুন নতুন গ্যাসক্ষেত্র খুঁজে বের করে গ্যাস উত্তোলনে বাপেক্সকে বড় ভূমিকা রাখতে হবে। এজন্য বাপেক্সকে সরকারের পক্ষ থেকে সার্বিক সহযোগিতা আরো বাড়াতে হবে। বিশেষজ্ঞ ও দক্ষ জনবল দিয়ে বাপেক্সকে আরো শক্তিশালী করতে হবে। বাপেক্স শক্তিশালী হলে এবং দেশীয় গ্যাসের উত্তোলন বাড়ানো হলে এখন আমাদের এলএনজি আমদানির প্রয়োজন হতো না।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়