করোনা পরিস্থিতি : শনাক্ত কমলেও প্রাণহানি কিছুটা বেড়েছে

আগের সংবাদ

আতঙ্কিত চট্টগ্রামের হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা : বিভিন্ন স্থানে পূজামণ্ডপ ও মন্দিরে হামলা-ভাঙচুর

পরের সংবাদ

অষ্টমীতে কুমারী পূজা অনুষ্ঠিত : চট্টগ্রামে মণ্ডপে মণ্ডপে ভিড়

প্রকাশিত: অক্টোবর ১৪, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: অক্টোবর ১৪, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম অফিস : শারদীয় দুর্গাপূজা হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় অনুষ্ঠান হলেও এটি এখন বাঙালিদের উৎসবে পরিণত হয়েছে। বাঙালি সংস্কৃতির একটি অবিচ্ছেদ্য অংশে রূপ লাভ করেছে এ উৎসব। এবার করোনা মহামারির কারণে সার্বজনীন এ দুর্গোৎসবের আয়োজন অনাড়ম্বর হলেও এই উৎসবকে ঘিরে আগ্রহ ও আনন্দ সবার। তাই শারদীয় দুর্গাপূজার অষ্টমীতে নগরীর বিভিন্ন পূজামণ্ডপে ছিল ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষ সব শ্রেণি-পেশার মানুষের ঢল। নগরীর অধিকাংশ মণ্ডপে স্বাস্থ্যবিধি মেনে, মুখে মাক্স পরে, সামাজিক দূরত্ব মানা হলেও কিছু কিছু মণ্ডপে তা মানা হয়নি।
শারদীয়া দুর্গাপূজার সবচেয়ে বড় আকর্ষণ কুমারী পূজা। অষ্টমীর এই মহাতিথিতে কুমারী পূজা হয়ে থাকে। সব নারীর মধ্যে রয়েছে দেবীশক্তি। তবে কুমারী রূপে মা দুর্গা বিশেষভাবে প্রকটিত হয়েছিলেন। তাই কুমারীকে দেবীজ্ঞানে সম্মান জানানোর উদাহরণ হচ্ছে কুমারী পূজা। নগরীর পাথরঘাটার রাধাগোবিন্দ ও শান্তনেশ্বরী মাতৃমন্দিরে গতকাল বুধবার মহাঅষ্টমী পুণ্যলগ্নে কুমারী পূজা অনুষ্ঠিত হয়। কুমারী পূজার জন্য মাতৃভাবের পবিত্রতার প্রতীক হিসেবে এ বছর কুমারী মায়ের আসনে বসানো হয় ৬ বছর বয়সি প্রীত ধরকে। সে সেন্ট স্কলাস্টিকাস স্কুলের কেজি শ্রেণিতে অধ্যয়ন করছে। গতকাল বুধবার সকাল সাড়ে ১০টায় মাতৃরূপে ফুল, চন্দন, বেলপাতা, তুলসীপাতা দিয়ে শুরু হয় পূজা আর্চনা।
পূজা কার্যক্রম পরিচালনা করেন শান্তন্বেশ্বরী মাতৃমন্দিরের পুরোহিত শ্রীমৎ শ্যামল সাধু মোহন্ত মহারাজ। প্রতি বছর ভক্তদের উপচে পড়া ভিড় থাকলেও এবার করোনা মহামারির কারণে সবার মুখে ছিল মাস্ক। শান্তনেশ্বরী মন্দিরে ২০০৪ সাল থেকে কুমারী পূজা হয়ে আসছে। পুরোহিত শ্যামল সাধু বলেন, হিন্দু শাস্ত্র মতে ১-১৬ বছরের অজাতপুষ্প সুলক্ষণা যে কোনো বর্ণের ও গোত্রের কুমারীকে পূজা করার কথা বলা হয়েছে। বয়স ভেদে কুমারীর নাম ভিন্ন হয়। তিনি বলেন, শাস্ত্রমতে ১৬টি উপকরণ দিয়ে পূজার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। এরপর অগ্নি, জল, বস্ত্র, পুষ্প ও বাতাস এই পাঁচ উপকরণে দেয়া হয় ‘কুমারী’ মা’-এর পূজায়। অর্ঘ্য প্রদানের পর দেবীর গলায় পরানো হয় পুষ্পমাল্য।
এদিকে গতকাল বুধবার নগরীর রাজাপুকুর লেন পঞ্চমাতা বিগ্রহ ও সেবাশ্রমেও কুমারী পূজা অনুষ্ঠিত হয়। এখানে কুমারী রূপে পূজিত হন মালিনী চক্রবর্তী। মালিনীর বাবা সুমন ভট্টাচার্য ও মা শীলা চক্রবর্তী। দুর্গাপূজার অষ্টমীতে কুমারী রূপে দেবীর আরাধনার মধ্য দিয়ে নারীর প্রতি সহিংস আচরণ ও বঞ্চনার বিনাশ কামনা করা হয়েছে। আশ্রমটির অধ্যক্ষ শ্রীমৎ প্রেমানন্দ ব্রহ্মচারী বলেন, গত দুবছর ধরে পৃথিবীব্যাপী যে মহামারি, তা থেকে মুক্তি পেতে মায়ের কাছে প্রার্থনা। মায়ের অনেক রূপের মধ্যে একটি রূপ কুমারী। এই রূপে আরাধনার মাধ্যমে মূলত মাতৃশক্তিরই আরাধনা করা হচ্ছে। এছাড়া নগরের মনোহরখালী সার্বজনীন শ্রীশ্রী দুর্গামন্দিরেও আয়োজন করা হয় কুমারী পূজার। এতে ১০ বছরের কুমারী রাধিকা দাশকে দেবী রূপে পূজা করা হয়।
হিন্দু শাস্ত্রমতে, কুমারী পূজার উদ্ভব হয় কোলাসুরকে বধের মধ্য দিয়ে। কোলাসুর একসময় স্বর্গ-মর্ত্য অধিকার করায় বাকি বিপন্ন দেবরা মহাকালীর শরণাপন্ন হয়। সেসব দেবের আহ্বানে সাড়া দিয়ে দেবী কুমারী রূপে কোলাসুরকে বধ করেন। এরপর থেকে মর্ত্যে কুমারী পূজার প্রচলন শুরু হয়। কুমারী আদ্যাশক্তি মহামায়ার প্রতীক। দুর্গার আরেক নাম কুমারী। মূলত, নারীকে যথাযথ মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করতে এ পূজা করা হয়। মাটির প্রতিমায় দেবীর যে পূজা করা হয় তারই বাস্তব রূপ কুমারী পূজা। কুমারী প্রতীকে জগৎজননীর পূজায় পরম সৌভাগ্য হয়। তিনি এক হাতে অভয় এবং অন্য হাতে বর দেন।
এদিকে উলুধ্বনি, ঢাকঢোল, বাদ্য-বাজনা আর উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে চট্টগ্রামে শারদীয় দুর্গোৎসবের মহাঅষ্টমী উদযাপিত হয়। গতকাল বুধবার সকাল থেকেই বিভিন্ন মণ্ডপে ভিড় জমাতে থাকেন পূজারিরা। বিপুলসংখ্যক হিন্দু নারী-পুরুষ মহাঅষ্টমী পূজার পুণ্যতিথিতে বিশেষ প্রার্থনা ও অঞ্জলি প্রদান করেন। হিন্দু ছাড়াও মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিস্টানসহ সব ধর্মের মানুষ গভীর রাত পর্যন্ত পূজা দেখে। দর্শনার্থী, পূজারি ও ভক্তরা এক মণ্ডপ থেকে আরেক মণ্ডপে ভিড় করছেন দেবী দর্শনের উদ্দেশ্যে। এ বছর চট্টগ্রাম মহানগরসহ জেলায় মোট ২২৪০টি পূজামণ্ডপে শারদীয় দুর্গাপূজার আয়োজন করা হয়েছে। এর মধ্যে জেলার আওতাধীন ১৫ উপজেলায় সার্বজনীন ১ হাজার ৫৫৩টি এবং পারিবারিক ৪১১টি মণ্ডপসহ মোট ১ হাজার ৯৬৪টি এবং চট্টগ্রাম মহানগরের ১৬টি থানায় ব্যক্তিগত, ঘটপূজাসহ ২৭৬টি পূজামণ্ডপে দুর্গাপূজার আয়োজন করা হয়েছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়