কারচাপায় স্কুলছাত্র নিহত, সড়ক অবরোধ

আগের সংবাদ

শঙ্কা নিয়ে আনন্দের পাঠে ফেরা

পরের সংবাদ

শাবানা আজমি : বলিউডের শক্তিমান অভিনেত্রী

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১১, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: সেপ্টেম্বর ১১, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

তার অভিনীত প্রত্যেকটি সিনেমাতেই রয়েছে কোনো না কোনো অন্তর্নিহিত মোরাল কিংবা মেসেজ। কখনো তা লিঙ্গবৈষ্যমের বিরুদ্ধে, কখনো সংখ্যালঘুদের বিষয়ে, আবার কখনো বা সহিংসতা ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে। তিনি মূলত একজন অভিনেত্রী। অভিনয় করছেন মঞ্চে, টেলিভিশনে এবং হিন্দি, বাংলা ও ইংরেজি ভাষার চলচ্চিত্রে। কাজ করেছেন অস্কারজয়ী নির্মাতা সত্যজিৎ রায়সহ অসংখ্য গুণী নির্মাতাদের সঙ্গে। ভারতীয় জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার জিতেছেন পাঁচবার। এ ছাড়াও তিনি পেয়েছেন ভারতের সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সম্মান পদ্মশ্রী ও পদ্মভূষণ। ভারতের রাজ্যসভারও একজন সদস্য ছিলেন তিনি। তার নাম শাবানা আজমি। বলিউড তথা ভারতীয় চলচ্চিত্রের একজন শক্তিমান অভিনেত্রী তিনি
১৯৫০ সালে শাবানা আজমি হায়দ্রাবাদের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম কমিউনিস্ট পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা ভারতীয় কবি কাইফি আজমি এবং মা থিয়েটার অভিনেত্রী শওকত আজমি। শাবানা আজমির বাব-মা দুজনই ভারতের সমাজতান্ত্রিক দলের সক্রিয় সদস্য ছিলেন।
যার ফলে ছোটবেলা থেকেই তিনি রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে বেড়ে উঠেন। শাবানা প্রথমে পড়েন কুইন মেরি কলেজে, পরে এসটি জেভিয়ার কলেজ থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেন। এরপর তিনি পুনের ‘ফিল্ম এন্ড টেলিভিশন ইনস্টিটিউট অফ ইন্ডিয়া’ থেকে অভিনয়ের ওপর কোর্স সম্পন্ন করেন।
১৯৭৪ সালে শ্যাম বেনেগাল পরিচালিত ‘অংকুর’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে চলচ্চিত্রে অভিষেক ঘটে শাবানা আজমির। এই চলচ্চিত্রটি হায়দ্রাবাদের একটি সত্য ঘটনার ওপর নির্মিত। শাবানা এতে ল²ী নামের এক বিবাহিত গ্রাম্য নারীর চরিত্রে অভিনয় করেন। প্রথম অভিনীত চলচ্চিত্র দিয়েই বাজিমাত করেন শাবানা। সেরা অভিনেত্রী হিসেবে জিতে নেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার।
অংকুরের পরপরই পরবর্তী বছরগুলোতে শাবানাকে দেখা যায় বেশ কিছু বাণিজ্যিক ও ভিন্ন ধারার চলচ্চিত্রে। এগুলো হলো ইশক ইশক ইশক, নিশান্ত, শতরঞ্জ কি খিলাড়ি, ওমর আকবর অ্যান্থনি, কিস্সা কুরসি কা এবং স্বামী। এর মধ্যে বাসু চট্টোপাধ্যায় নির্মিত ‘স্বামী’ চলচ্চিত্রটির জন্য তিনি পান সেরা অভিনেত্রী হিসেবে ফিল্মফেয়ার পুরস্কার।
১৯৮৩ থেকে ৮৫, এই তিন বছর যেন ছিল শাবানার জন্য আশীর্বাদস্বরূপ। কেননা এই তিন বছরে মহেশভাটের ‘আর্থ’ মৃণাল সেনের ‘কান্দাহার’ এবং গৌতম ঘোষের ‘পার’ চলচ্চিত্রের জন্য পরপর তিনবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার জিতে নেন তিনি। আর এই সাফল্য শাবানাকে অভিনেত্রী হিসেবে অন্যতম উচ্চতায় নিয়ে যায়। ইতোমধ্যে শাবানা হয়ে উঠেছেন একজন দুর্দান্ত চরিত্র অভিনেত্রী। তার প্রত্যেকটি চলচ্চিত্র যেন সমাজ ও রাষ্ট্রের প্রতিবিম্ব হয়ে ওঠে।
১৯৮৯ সালে শাবানা প্রথম বাংলা ভাষার চলচ্চিত্র অপর্ণা সেন নির্মিত ‘সাতী’তে অভিনয় করেন। চলচ্চিত্রটিতে তিনি একজন বোবা মেয়ের চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন। সাতী চলচ্চিত্রটির মাধ্যমে অপর্ণা সেন শক্ত গলায় নারীদের বিভিন্ন সমস্যা ও লিঙ্গবৈষম্যের কথা বলেছেন। ১৯৯২ সালে শাবানা নির্মাণ করেন তার প্রথম আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র ‘সিটি অফ জয়’। এখানে তার সঙ্গে আরো অভিনয় করেন ওম পুরি ও প্যাট্রিক সুয়েজ।
এবার শাবানার সঙ্গে যুক্ত হন প্রতিভাবান নির্মাতা মীরা নায়ার। এই জুটির সফল সৃষ্টিগুলো হচ্ছে কন্ট্রোভার্সাল, আর্থ এবং ওয়াটার। কন্ট্রোভার্সাল চলচ্চিত্রে শাবানা অভিনয় করেন ‘রাধা’ নামের একটি চরিত্রে। শাবানার অভিনয় জীবনের আরেকটি স্মরণীয় চলচ্চিত্র হচ্ছে ‘গডমাদার’।
‘গডমাদার’ চলচ্চিত্রটি নির্মিত হয়েছিল মাফিয়া থেকে রাজনীতিবিদ রূপান্তরিত হওয়া সান্তোকবেন জাদেজাকে নিয়ে। চলচ্চিত্রটি পরিচালনা করেন বিনয় শুক্লা। ১৯৯৯ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত গডমাদার শাবানা আজমির ঝুলিতে এনে দেয় পঞ্চমবারের মতো জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার।
বিংশ শতাব্দীর পর থেকেই চরিত্র বাছাইয়ের ক্ষেত্রে আরো বেশি খুঁতখুঁতে হয়ে ওঠেন এবং খুবই বেছে বেছে কাজ করা শুরু করেন শাবানা। যার ফলস্বরূপ শাবানাকে আমরা দেখতে পাই মাকদি, ১৫ পার্ক এভিনিউ এবং হানিমুন ট্রাভেলস প্রাইভেট লিমিটেডের মতো মনে রাখার মতো চলচ্চিত্রগুলোতে।
শাবানা আজমির তুখোড় অভিনয় তাকে নিয়ে যায় দেশের গণ্ডি পেরিয়ে অন্য ভাষার অন্য দেশের চলচ্চিত্রে। এগুলো হলো গুরিন্ডার চাধার ব্রিটিশ কমেডি মুভি ‘ইটস এ ওয়ান্ডারফুল আফটার লাইফ’, দীপা মেহতার কানাডিয়ান-ব্রিটিশ চলচ্চিত্র মিডনাইট’স চিলড্রেন এবং মীরা নায়ারের আমেরিকান রাজনৈতিক চলচ্চিত্র ‘দ্য রেলাকট্যান্ট ফান্ডামেন্টালিস্ট’। চলচ্চিত্রটি তার অভিনীত চলচ্চিত্রগুলোর মধ্যে একটি উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্র।
২০১৬ সালে শাবানা আজমি দুটি চলচ্চিত্র নিয়ে আসেন। চলচ্চিত্র দুটির হচ্ছে ‘চক এন দুস্তের’ এবং ‘নিরজা’। চক এন দুস্তের বক্স অফিসে মুখ থুবড়ে পড়লেও জীবনভিত্তিক চলচ্চিত্র ‘নিরজা’ কিন্তু ফাটিয়ে দেয়। আজমি অভিনীত সুপারহিট চলচ্চিত্রগুলোর মধ্যে ‘নিরজা’ একটি। রাম মাদভানি পরিচালিত ‘নিরজা’ তাকে এনে দেয় সেরা সহকারী অভিনেত্রী হিসেবে ফিল্মফেয়ার পুরস্কার।
চলচ্চিত্রের পাশাপাশি মঞ্চ ও টেলিভিশনেও কাজ করেছেন শাবানা। শাবানার মঞ্চে পরিবেশিত কাজগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে সফেদ কুন্ডালি, তাম্বুরি অমৃতা এবং ব্রিটিশ প্রোডাকশন কর্তৃক পরিবেশিত ‘হ্যাপি বার্থডে সুনিতা’। হ্যাপি বার্থডে সুনিতা ইন্ডিয়া ছাড়াও পরিবেশিত হয়েছে যুক্তরাজ্য এবং দুবাইয়ে। এবার না হয় শাবানার টেলিভিশনের কাজগুলোর কথা বলা যাক।
টিভি সিরিজ অনুপমার মাধ্যমে শাবানা ছোট পর্দায় নিজের অবস্থান গড়ে তোলেন। সিরিজটিতে একজন ভারতীয় মহিলার চরিত্রে অভিনয় করেন, যে এই সমাজ থেকে মুক্তি চায়। এ ছাড়াও তিনি আরো বেশ কিছু সিরিজে অভিনয় করেন এবং আমেরিকান টিভি সিরিজের আদলে নির্মিত একটি টিভি শো’তে অনিল কাপুরের সঙ্গে অভিনয় করেন।
ব্যক্তিগত জীবনে তিনি বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী ও সমাজ সচেতনতামূলক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত। তিনি দীর্ঘদিন ধরে এইডসের বিরুদ্ধে জনসচেতনতা তৈরি করতে কাজ করে যাচ্ছেন, জড়িত আছেন সমাজকে বদলে দেয়ার প্রচেষ্টায় আরো অনেক স্বেচ্ছাসেবী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে। শাবানা আজমির স্বামী জাভেদ আখতার একজন গীতিকার এবং চিত্রনাট্যকার। দীর্ঘ ছয় বছরের প্রেমের পর শাবানা-আখতারের আজকের এই দীর্ঘ দাম্পত্য জীবন।
:: মেলা ডেস্ক

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়