পথচারী ও মাদ্রাসার ছাত্রদের মধ্যে চসিক মেয়রের খাবার বিতরণ

আগের সংবাদ

প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ : ঢাকার চারপাশে হবে এলিভেটেড ওয়ে

পরের সংবাদ

সংরক্ষিত বনাঞ্চল বেদখল হওয়ায় লোকালয়ে হাতি

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৭, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: সেপ্টেম্বর ৭, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কামাল হোসেন, রামু (কক্সবাজার) থেকে : দেশের মোট হাতির ৫৫ শতাংশই আবাস কক্সবাজার এলাকায়। সংরক্ষিত বনাঞ্চল দখল হওয়ায় বিচরণক্ষেত্র ও করিডোর হারিয়ে বাধ্য হয়ে প্রাণীটি মানুষের বসতি এলাকা দিয়ে চলাচলের চেষ্টা করছে। খাদ্যের সন্ধানে লোকালয়ে ঢুকে কৃষকের ফসল ও ঘরবাড়ি নষ্ট করে চলছে। শুধু তাই নয়- মাঝেমধ্যে মানুষকেও মেরে ফেলার ঘটনাও ঘটছে। ফলে মানুষ আতঙ্কিত হয়ে এসব হাতিকে হত্যা করে। গত ৩০ সেপ্টেম্বর রামু উপজেলার খুনিয়াপালং ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের গাইনপাড়ায় একটি হাতি ধানক্ষেতে চলে এলে এলাকার কিছু মানুষ বৈদ্যুতিক ফাঁদ পেতে বন্যহাতিটিকে হত্যা করে। ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে হাতিকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কেটে টুকরা করে মাটিতে পুঁতে ফেলা হয়।
বিভিন্ন সূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে, গত দেড় বছরে রামুতে চারটি হাতি হত্যার ঘটনা ঘটেছে। এর একটি মারা হয়েছে গুলি করে, বাকি তিনটি বৈদ্যুতিক ফাঁদ পেতে। সব মিলে গত দেড় বছরে কক্সবাজার জেলাতে হাতি মারা পড়েছে ১৫টি। এছাড়া গত দেড় বছরে হাতির আক্রমণে কক্সবাজার জেলাতে মৃত্যুবরণ করেছে ৪ জন মানুষ। এর মধ্যে রামু উপজেলায় ২ জন। আহত হয়েছেন ৩ জন। ধোয়াপালং বন রেঞ্জ কর্মকর্তা সাজ্জাদ হোসেন জানান, মঙ্গলবার রাতে মাদি হাতিটি পুঁতে রাখার স্থানটি লণ্ডভণ্ড করে ১৪-১৫টি হাতির দল। সেটি পরদিন ঠিকঠাক করা হলেও বুধবার রাতে একই ঘটনা ঘটায় ক্ষুব্ধ হাতির দল। এ জন্য এলাকার এলিফ্যান্ট রেসপন্স টিম (ইআরটি), বনকর্মী, বন জায়গীরদার ও গ্রামবাসী নিয়ে পাহারার ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
কক্সবাজার উত্তর বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. তৌহিদুল ইসলাম জানান, কক্সবাজারে হাতি চলাচলের জন্য মোট ৮টি করিডোর রয়েছে। দক্ষিণ বন বিভাগে ৩টি, উত্তর বন বিভাগে ৫টি। কক্সবাজারের দক্ষিণ বন বিভাগের উখিয়া-টেকনাফ বনাঞ্চলে গত দেড়-দুই বছরে ১২ থেকে ১৫টি হাতির জন্ম হয়েছে। হাতির বিচরণক্ষেত্র সীমিত হয়ে পড়েছে। হাতির অন্যতম বিচরণ এলাকা টেকনাফ ও উখিয়ায় ২০১৭ সালে রোহিঙ্গা শিবির গড়ে তোলা হয়। এর আগে রামুতে হাতির দুটি করিডোর এলাকায় দুটি সরকারি স্থাপনা গড়ে ওঠে। এর মধ্যে কক্সবাজারে রেললাইন নির্মাণকাজ শুরু হওয়ায় ফাসিয়াখালী, চুনতি ও মেধাকচ্ছপিয়া বনভূমিতে হাতির চলাচলের পথ কমে গেছে।
ইডিসিআর সভাপতি চাইনিজ একাডেমি অফ সায়েন্সের পরিবেশ ও বন্যপ্রাণী গবেষক ড. নাছির উদ্দিন বলেন, ২০১৬ সালের জরিপ অনুযায়ী বাংলাদেশে ২৬৮ হাতি ছিল। তার মধ্যে কক্সবাজার জেলাতেই ছিল ১১৭টি হাতি। তবে ২০১৫ থেকে আজ পর্যন্ত শুধুমাত্র কক্সবাজারেই বিভিন্ন কারণে মারা গেছে ১৯টি হাতি এবং সমগ্র দেশে মারা গেছে ৬৫টি হাতি। তিনি বলেন, হাতি হত্যার অন্যতম প্রধান কারণ হচ্ছে হাতির আবাসস্থলে মানুষের বসবাস, চাষাবাদ এবং অন্যান্য কার্যক্রম পরিচালনা করা। কাজেই হাতি সংরক্ষণকে নিশ্চিত করতে হলে বনকে অবৈধ দখলদার মুক্ত করতে হবে এবং বন্যপ্রাণী আইনের সঠিক প্রয়োগ করতে হবে। একই সঙ্গে সরকারের বিভিন্ন সংস্থা এবং অধিদপ্তরকে একযোগে কাজ করতে হবে।
তিনি আরো বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জলবায়ু উদ্বাস্তুদের খুরুশকুলে যেইভাবে খুব অল্প জায়গার মধ্যে পুনর্বাসন করেছেন। একইভাবে যেসব মানুষ শুধুমাত্র বসবাসের জন্য সংরক্ষিত বন দখল করে আছেন, তাদের সংরক্ষিত বনাঞ্চল থেকে নিয়ে এসে নির্দিষ্ট জায়গার মধ্যে বসবাসের ব্যবস্থা করা গেলে বন ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ অনেকাংশে অগ্রগামী হবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়