পথচারী ও মাদ্রাসার ছাত্রদের মধ্যে চসিক মেয়রের খাবার বিতরণ

আগের সংবাদ

প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ : ঢাকার চারপাশে হবে এলিভেটেড ওয়ে

পরের সংবাদ

দৃষ্টিহীনরা যেভাবে ফুটবল খেলেন

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৭, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: সেপ্টেম্বর ৭, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

দৃষ্টিহীন বা অন্ধরাও ফুটবল খেলে থাকেন। এ কথা অনেকেরই অজানা। এমনকি প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচ বা বিশ্বমঞ্চেও খেলে থাকেন তারা।
বিশেষ মানুষ বা শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধী মানুষদের সবচেয়ে বড় ক্রীড়াযজ্ঞ প্যারাঅলিম্পিকে স্বর্ণপদকের জন্য লড়েন দৃষ্টিহীন ফুটবলাররা। আর এবার প্যারাঅলিম্পিকে ব্লাইন্ড ফুটবল বা দৃষ্টিহীনদের ফুটবলে স্বর্ণপদক জয় করেছে ব্রাজিল। স্বর্ণপদকের ম্যাচে তারা হারিয়েছে চির প্রতিদ্ব›দ্বী আর্জেন্টিনাকে। ২০০৫ সালের পর প্যারাঅলিম্পিকে যুক্ত হয় দৃষ্টিহীনদের ফুটবল। আর এ ইভেন্টে প্রতিবারই স্বর্ণপদক জয় করেছে ব্রাজিল। ফুটবল আর ব্রাজিল একে অপরের সঙ্গে জড়িত। আর ব্রাজিল ফুটবলের যে কোনো ফরমেটেই খেলুক না কেন তাদের কাছে পাত্তা পায় না কেউ। তারাই হয় সেরাদের সেরা। আর দৃষ্টিহীনদের ফুটবলেও এর ব্যতিক্রম হয়নি।
ফুটবল খেলা মানেই আমাদের কাছে বল নিয়ে পায়ের জাদু দেখানো। কিন্তু সেই বলটিই যদি চোখে না দেখা যায় তাহলে কীভাবে ফুটবল খেলবে। এ নিয়ে সবার মনে প্রশ্ন আসতেই পারে। যেখানে বেশিরভাগ মানুষই দৃষ্টিহীনদের ফুটবল নিয়ে কোন ধারণা নেই, সেখানে কীভাবে দৃষ্টিহীনরা খেলে থাকে এটি অজানা থাকাটাই স্বাভাবিক।
দৃষ্টিহীনদের ফুটবলও স্বাভাবিক মানুষদের থেকে আলাদা। এমনকি এর বলও আলাদা। ফরমেটেও আলাদা। খেলোয়াড়ের সংখ্যাও ভিন্ন। স্বাভাবিক মানুষদের ফুটবলে গোলরক্ষকসহ মোট ১১ জন ফুটবলার খেলে থাকেন। তবে দৃষ্টিহীনদের ফুটবলে থাকেন মাত্র ৫ জন। ৪ জন মাঠে থাকেন।
আর শুধুমাত্র গোলরক্ষক ছাড়া বাকি সবার চোখ কালো কাপড় বা চশমা দিয়ে ঢাকা থাকে। মাঠে যারা খেলে থাকেন তাদের চোখ অন্ধ। আর গোলবারের দায়িত্বে যিনি থাকেন অর্থাৎ গোলরক্ষকের চোখ ভালো। তিনি অন্য সাধারণ মানুষের মতোই।
দৃষ্টিহীনদের ফুটবলে ব্যবহার করা বলটিও সাধারণ ফুটবল থেকে আলাদা। এই ফুটবলের ভেতর থাকে ছোট ছোট আরো বল। ফলে বল যখন কেউ লাথি দেয় তখন সেই বলে শব্দ হয়। আর শব্দ শুনে খেলোয়াড়রা বলের অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত হন। তাছাড়া খেলোয়াড়রা ভয়, গো এই দুটি শব্দ করে চিৎকার করে। ফলে সতীর্থ খেলোয়াড়ের অবস্থান সম্পর্কে জানতে পারেন বল পায়ে থাকা খেলোয়াড়। তখন সেই ফুটবলার বলকে নিজের সতীর্থের কাছে পাস দিয়ে থাকেন। তাছাড়া মাঠের বাইরে বা ডাগ আউটে একজন থাকেন। তিনি নিজ দলের খেলোয়াড়দের নির্দেশনা দিয়ে থাকেন। সেই নির্দেশনা অনুযায়ীও খেলোয়াড়রা খেলে থাকেন।
দৃষ্টিহীনদের ফুটবল অনেকটা ফুটসালের মতো। ফুটসাল হলো ইনডোর ফুটবল। যেখানে ৫ জন খেলোয়াড় খেলে থাকেন। তবে ফুটসালে সবাই থাকেন সুস্থ সবল, সাধারণ ফুটবলারদের মতো। দৃষ্টিহীনদের ফুটবলেও গোলবারের সাইজ ছোট।
দৃষ্টিহীনদের ফুটবল আবার দুভাগে বিভক্ত। একটি হলো বি-ওয়ান। আরেকটি হলো বি-টু। বি-ওয়ান ক্যাটাগরিতে যারা খেলে থাকেন তারা পুরোপুরি অন্ধ। তাদের চোখের কোনো দৃষ্টি নেই। আর বি-টু ক্যাটাগরিতে যারা খেলে থাকেন তারা আংশিকভাবে অন্ধ। তবে বি-ওয়ান ও বি-টু দুই ক্যাটাগরিতেই খেলোয়াড়দের চোখ কালো চশমা বা কাপড় দিয়ে ঢাকা থাকে।
দৃষ্টিহীন ফুটবল আবার ফিফার অধীনে চলে না। এটি চলে আন্তর্জাতিক ব্লাইন্ড স্পোর্টস এসোসিয়েশনের অধীনে। এই সংস্থাটি দৃষ্টিহীনদের জন্য বিশ্বচ্যাম্পিয়নশিপের আয়োজন করে থাকে। যা দৃষ্টিহীনদের জন্য বিশ্বকাপ হিসেবে পরিচিত।
বি-ওয়ান ক্যাটাগরির চ্যাম্পিয়নশিপ বা বিশ্বকাপের প্রথম আসর হয় ১৯৯৮ সালে। এ পর্যন্ত সাতবার চ্যাম্পিয়নশিপ হয়েছে। এর মধ্যে পাঁচবার ব্রাজিল হয়েছে সেরা। আর বাকি দুবার শিরোপা জয় করেছে আর্জেন্টিনা। অপরদিকে বি-টু ক্যাটাগরিতে চারবার চ্যাম্পিয়নশিপ হয়েছে। এ চারবারের মধ্যে দুইবার শিরোপা জিতেছে বেলারুশ। আর একবার করে শিরোপা জয় করেছে রাশিয়া ও ইউক্রেন। আগে শুধু পুরুষদের চ্যাম্পিয়নশিপ থাকলেও এখন নারীদেরও চ্যাম্পিয়নশিপ শুরু হয়েছে। ২০১৭ সালে একবার চ্যাম্পিয়নশিপ হয়েছে। আর প্রথম আসরে জাপানের নারীরা শিরোপা নিয়ে যায়।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়