ই-অরেঞ্জের সাবেক সিওও রাসেল রিমান্ডে

আগের সংবাদ

যাত্রীসেবার মান তলানিতে : সড়ক আইন প্রয়োগে উদাসীনতা > নির্দেশনা দিয়েই দায়িত্ব শেষ কর্তৃপক্ষের

পরের সংবাদ

আশুলিয়ার ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক : সড়ক নয় যেন মরণফাঁদ যখন তখন ঘটে দুর্ঘটনা

প্রকাশিত: আগস্ট ৩১, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ৩১, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

মো. আজিম উদ্দিন, সাভার (ঢাকা) থেকে : শ্রমজীবী ও সাধারণ মানুষের দুর্ভোগের নাম আশুলিয়ার ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক ও বিশমাইল-জিরাবো সড়ক। পুরো সড়কজুড়েই বড় বড় খানাখন্দ দীর্ঘদিন ধরে। সামান্য বৃষ্টিতে তলিয়ে যায় সড়ক। এই সড়ক দিয়ে চলাচল করতে গিয়ে উল্টে যায় রিকশা, ভ্যান, অটোরিকশা। গর্তে আটকে পড়ে প্রাইভেটকার ও মালবাহী কাভার্ড ভ্যান। শিল্প এলাকা হওয়ায় কয়েক লাখ লোক প্রতিদিন দুর্ভোগকে সঙ্গী করে এই সড়ক দিয়ে চলাচল করলেও মেরামতের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ একেবারেই উদাসীন।
দেশের সবচেয়ে জনবহুল ও গুরুত্বপূর্ণ এলাকা আশুলিয়া শিল্পাঞ্চল। এখানে অনেক শিল্পকারখানা গড়ে ওঠার কারণে অসংখ্য মানুষের বসবাস। কিন্তু এই শিল্পাঞ্চল এলাকার রাস্তাঘাটের বেহাল দশার কারণে চরম দুর্ভোগের শিকার হতে হয় শিল্পকারখানার শ্রমিক থেকে শুরু করে এলাকার বাসিন্দাদের। সড়কের বেহাল দশার কারণে ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয় কারখানা কর্তৃপক্ষকে।
সংস্কার না করায় আশুলিয়ার জামগড়া, ইউনিক, শিমুলতলা, জিরাবো, কাঠগড়াসহ বিভিন্ন এলাকার সড়কে অল্প বৃষ্টিতেই পানি জমে অসহনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হয়। আবার খানাখন্দে ভরা এসব সড়কের কারণে যানবাহন চলাচলে বিঘœ ঘটায় সৃষ্টি হয় দীর্ঘ যানজটের।
সরজমিন গতকাল রবিবার ঘুরে দেখা গেছে, ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের মতো গুরুত্বপূর্ণ এ সড়ক দিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার যানবাহন চলাচল করে। কিন্তু এ সড়কের শিমুলতলা, ইউনিক ও জামগড়া চৌরাস্তা মোড় পর্যন্ত বেহাল অবস্থা। পরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকা, দীর্ঘদিনেও ড্রেনের কাজ সম্পন্ন না হওয়া এবং বিভিন্ন কলকারখানার পানি সরাসরি সড়কে পড়ার কারণেই সেগুলো জমে সড়কে খনাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে। এই খনাখন্দের কারণে সড়কটিতে কোথাও হাঁটু পানি জমে রয়েছে। যানবাহন চলাচলে বিঘœ ঘটায় জিরাবো থেকে বাইপাইল পর্যন্ত প্রায় তিন কিলোমিটার এলাকাজুড়ে রয়েছে দীর্ঘ যানজট। আবার সড়কের কোথাও ভাঙা অংশ জোড়াতালি দিয়ে অর্থাৎ ইট বিছিয়ে সংস্কার করতে দেখা গেছে। সেখানেও ব্যবহার হচ্ছে নি¤œমানের ইট।
স্থানীয়দের অভিযোগ, নি¤œমানের এসব ইটের উপর দিয়ে ভারী যানবাহন চলাচল করলে ইট গুঁড়া হয়ে যায়। গুঁড়া ইট পানির সঙ্গে মিশে ভোগান্তি বাড়ায় পথচারীদের। জামগড়া এলাকায় নি¤œমানের ইট বিছিয়ে সড়ক সংস্কার কাজে নিয়োজিত শ্রমিকদের সঙ্গে এ প্রসঙ্গে কথা বলতে চাইলে কেউ রাজি হয়নি। ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের শিমুলতলা এলাকায় যানজটে আটকে থাকা অটোরিকশা চালক মো. আলম বলেন, এ যানজট নিত্যদিনের। সড়ক ভাঙাচুরা ও পানি জমে থাকায় গাড়ি চলাচল করতে পারে না, তাই এ যানজট। এই যানজটে কখনো ঘণ্টার পর ঘণ্টাও পার হয়ে যায়, বলেন তিনি।
ঢাকা জেলা ট্রাফিক পুলিশের ইন্সপেক্টর (টিআই) মো. আব্দুস সালাম জানান, ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের জামগড়া, শিমুলতলা, ইউনিক এলাকায় ভয়াবহ ভাঙনের কারণে এই যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। এছাড়া যানজটের আর কোনো কারণ নেই।
তিনি বলেন, সড়ক ভাঙার বিষয়টি একাধিকবার সড়ক ও জনপথ বিভাগের কর্মকর্তাদের অবহিত করেছি। তারা শুধু বলছে, এই রোডটি হাইওয়ে রোড, সড়ক প্রশস্তকরণের জন্য টেন্ডার হয়েছে। তবে বর্ষা মৌসুমে কাজ শুরু হবে না। কিন্তু ছোট-বড় গর্ত অস্থায়ীভাবে ইট ফেলে মেরামত করা হবে। এখন সওজ কর্তৃপক্ষ ইট ফেলে রাস্তা সংস্কারের কাজ করছে। তিনি আরো বলেন, সওজ কর্তৃপক্ষ যে নি¤œমানের ইট দিয়ে সড়ক সংস্কার করছে সেই ইটের উপর দিয়ে ভারী কোনো যানবাহন চলাচল করলেই ইট ভেঙে গুঁড়িয়ে যাচ্ছে, নয়তো সরে যাচ্ছে।
সামান্য বৃষ্টিতে বাইপাইল-আব্দুল্লাপুর সড়কটিতে পানি জমে থাকার কারণে টিআই মো. আব্দুস সালাম বলেন, সড়কের পানি নামার একটি মাত্র খাল ছিল ‘নয়নজুড়ি’ খাল। খালটি ৩০ ফুট প্রশস্ত ছিল। কিন্তু দখলের কারণে খালটি এখন ৩ ফুটের মতো রয়েছে। এই কারণে সড়কের পানি বের হতে না পারায় জমে থাকছে- এমনটাই তাকে জানিয়েছেন সওজ কতর্মকর্তারা।
সরজমিন জিরাবো-বিশমাইল আঞ্চলিক সড়কসহ বিভিন্ন শাখা সড়কেরও বেহাল অবস্থা দেখা গেছে। গুরুত্বপূর্ণ এই সড়কগুলো দিয়ে প্রতিদিন যাতায়াত করে শ্রমিক, শিক্ষার্থীসহ নানা পেশার লাখ লাখ মানুষ। দীর্ঘদিন সংস্কার না করায় খানাখন্দের সৃষ্টি হয়ে সড়কগুলো চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। বর্ষা মৌসুমে অবস্থা এতটাই নাজুক হয়েছে হেঁটে চলাচলও দায় হয়ে পড়েছে। কোথাও কোথাও হাঁটু পানি পার হয়ে চলাচল করতে হয়।
বিশমাইল-জিরাবো আঞ্চলিক সড়কটি দিয়ে প্রতিদিন রিকশা-ভ্যান, অটোরিকশা, বাস-ট্রাক ও বিভিন্ন শিল্পকারখানার যানবাহনসহ হাজারো পরিবহন চলাচল করে। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে পুরো রাস্তায় খানাখন্দের সৃষ্টি হয়ে সেখানে পানি জমে কাদার সৃষ্টি হওয়ায় চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।
জিরাব থেকে কাঠগড়া, আমতলা পর্যন্ত এ সড়কের অবস্থা এতটাই নাজুক যে রিকশা-ভ্যানতো দূরের কথা, খালি পায়ে হেঁটে চলাচলও দুরূহ ব্যাপার। প্রতিদিনই এ সড়কে চলাচলরত যানবাহন ছোট-বড় দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে। উল্টে যাচ্ছে রিকশা, অটোরিকশা এবং রাস্তার মাঝখানে আটকে যাচ্ছে ভারী যানবাহন। ফলে প্রতিদিনই দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। আর চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে এ সড়ক দিয়ে চলাচলরত লাখো মানুষের।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানায়, বিশমাইল-জিরাবো আঞ্চলিক সড়কটি পাঁচ বছর আগে সংস্কার করা হয়েছিল। কিন্তু এরপর আর কোনো সংস্কার করা হয়নি। সড়ক সংস্কারের সময় পরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকা এবং তিতাসের গ্যাসলাইনের পাইপ বসাতে গিয়ে খোঁড়াখুঁড়ির কারণে রাস্তায় পানি জমে কাদায় এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। কোনো ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি।
জিরাবো এলাকার সিলভার এ্যাপারেলস লিমিটেডের মহাব্যবস্থাপক নুরুর রহমান জানান, সড়ক ভাঙাচুরার কারণে আমাদেরও কম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে না। রাস্তার কারণে শ্রমিক-কর্মচারীরা সময়মতো কর্মস্থলে উপস্থিত হতে না পারায় কর্তৃপক্ষের কথা শুনতে হয়। সড়কের এই ভয়াবহতার কারণে শিপমেন্টের মালও সময়মতো গন্তব্যে পৌঁছতে না পারায় ক্ষতির সন্মুখীন হতে হয়। প্রায়ই সড়কের গর্তে ট্রান্সপোর্টের গাড়ি বিকল হয়ে পড়ার কারণে আমাদের লোকশান গুণতে হয়।
এ প্রসঙ্গে জানতে সড়ক ও জনপথের সহকারী প্রকৌশলী মো. আলমগীর রেজাউল করিরে মুঠফোনে একাধিকবার চেষ্টা করলেও কেউ ফোন রিসিভ করেননি।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়