প্রণোদনা ঋণের জন্য ঘুষ লাগে ২৯ শতাংশ ব্যবসায়ীর

আগের সংবাদ

অসংক্রামক রোগের ঝুঁকি বাড়ছে : করোনার প্রকোপ কমার পর ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ ও বিষণ্নতার বড় আঘাত আসছে

পরের সংবাদ

লালমনিরহাটে নদীভাঙন : পাঁচ শতাধিক ঘরবাড়ি বিলীন খোলা আকাশের নিচে মানুষ

প্রকাশিত: আগস্ট ৩০, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ৩০, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক, লালমনিরহাট : ‘তিস্তা নদীতে সব ভাসিয়া গেইছে, হামরা এখন সর্বহারা’- নদীগর্ভে বাড়ি বিলীন হওয়ার পর কান্নাজড়িত কণ্ঠে এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন দিনমজুর সায়েদ আলী (৫৫)। তিনি লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার সিন্দুর্না ইউনিয়নের তিস্তা নদীর পাড়ের এলাকা চিলমাড়ীপাড়ার বাসিন্দা।
লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, তিস্তার পানি কমতে শুরু করায় সদর, আদিতমারী, হাতীবান্ধা ও কালীগঞ্জ উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নের ২০টি গ্রামে ভাঙন দেখা দিয়েছে। পাঁচ শতাধিক পরিবারের বসতবাড়ি নদীতে বিলীন হয়েছে। পরিবার নিয়ে খোলা আকাশের নিচে দিন কাটাচ্ছেন শতাধিক মানুষ। হুমকির মুখে পড়েছে শত শত ঘরবাড়ি, প্রাথমিক বিদ্যালয়, মসজিদ, মাদ্রাসা, ফসলি জমি ও বিভিন্ন স্থাপনা। পানি ঢুকে নষ্ট হয়েছে নিম্নাঞ্চলের শত শত হেক্টর জমির রোপা আমনক্ষেত।
সরজমিন গিয়ে দেখা যায়, তিস্তার চরাঞ্চলের চারদিকে থইথই করছে পানি। নদীগর্ভে তলিয়ে গেছে অসংখ্য বাড়ি। বসতভিটা ও আবাদি জমি হারিয়ে ঘরবাড়ি নিয়ে নতুন আশ্রয়ের খোঁজে ছুটছেন ভাঙনকবলিতরা। অনেকের আশ্রয় মিলেছে আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে, কেউ আশ্রয় নিয়েছেন বাঁধে আবার কেউ পরিবার নিয়ে চলে যাচ্ছেন অন্য স্থানে। হুমকির মুখে পড়েছে চর সিন্দুর্না সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ক্লিনিক, মসজিদ ও মাদ্রাসা। এসব এলাকার কয়েকজন বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তিস্তায় টানা পানি বাড়ায় কয়েক দিন থাকতে হয় পানিবন্দি অবস্থায়। এরপর শুরু হয় ভাঙন। প্রবল ¯্রােতে অনেকের ঘরবাড়ি ভেসে যায়। হাতীবান্ধা উপজেলার চিলমারীপাড়ার বাসিন্দা নুর ইসলাম (৬০) বলেন, বাড়িঘর ভাসি যাওয়ার মতো হইছে। কোথায় বাড়ি করমো তার জায়গা নাই। বাড়িটা খুব জুলুমের ওপর আছে। কখন যে ভাঙ্গি যায়। এখন বাপ-ব্যাটা কই যে যামো?
একই গ্রামের ওমর আলী (৫৫) বলেন, তিস্তা হামাক শ্যাষ করি দিলো। হামার সাজানো সংসার ভাঙি তছনছ করি দিলো। ভাঙনের শিকার সাদেকুল ইসলাম (২৬) বলেন, ১৫ দিন আগেও আমার বসতভিটা ও ফসলি জমি ছিল। আজ সব নদীতে বিলীন। চারদিকে পানি আর পানি। এখন পরিবার নিয়ে মানুষের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছি। এখন ঘর করে থাকব তারও জায়গা নেই। বৃদ্ধা মা ও ছেলে-মেয়েকে নিয়ে কই যাবো, কী খাবো জানি না।
আদিতমারী উপজেলার মহিষখোঁচা এলাকার মোবারক হোসেন (৬০) বলেন, কদিন আগেও আমার বাড়িঘর, সংসার, আবাদি জমি, ফলের বাগান সবই ছিল। এখন আমার আর কিছুই নাই। সিন্দুর্না ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুল আমিন বলেন, তিস্তার বাম তীরে বাঁধ নির্মাণ এখন এ এলাকার মানুষের মৌলিক দাবি।
লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান জানান, তিস্তা পাড়ের বিভিন্ন স্থানে ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে। ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন ঠেকানোর কাজ চলছে। ভাঙনকবলিত এলাকা পরিদর্শনে গিয়ে জেলা প্রশাসক আবু জাফর জানান, দুর্গত পরিবারগুলোর জন্য ২১৫ টন চাল বরাদ্দ করা হয়েছে। প্রতিটি উপজেলায় খাদ্য মজুত রাখা হয়েছে। প্রয়োজনে আরো বরাদ্দ চাওয়া হবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়