প্রণোদনা ঋণের জন্য ঘুষ লাগে ২৯ শতাংশ ব্যবসায়ীর

আগের সংবাদ

অসংক্রামক রোগের ঝুঁকি বাড়ছে : করোনার প্রকোপ কমার পর ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ ও বিষণ্নতার বড় আঘাত আসছে

পরের সংবাদ

বছরের নয় মাসই বেকার! হাওরে সম্ভাবনাময় কৃষি শিল্প না থাকায় নেই কর্মসংস্থান

প্রকাশিত: আগস্ট ৩০, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ৩০, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

হোসাইন আহমদ, শান্তিগঞ্জ (সুনামগঞ্জ) থেকে : খাদ্যশস্যের অফুরন্ত ভাণ্ডার সুনামগঞ্জ হাওরের জনপদ। জেলার শান্তিগঞ্জ উপজেলায় কৃষিকাজ ও মাছ ধরা ছাড়া বিকল্প কোনো কর্মসংস্থান ও সম্ভাবনাময় কৃষি শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে না ওঠায় বিশাল জনগোষ্ঠীর বড় একটি অংশ বাড়িতে বসে অলস সময় পার করে। যে কারণে এখানে দিন দিন বাড়ছে বেকারত্বের সংখ্যা। উপজেলার অধিকাংশ গ্রামের মানুষ বছরের তিন মাস হাওরে কৃষিজমি চাষ এবং এক মাস ধান কাটা ও মাড়াইয়ের মাধ্যমে সেই ফসল ঘরে তুলে বাকি প্রায় ৯ মাস বেকার থাকেন। হাওরে বছরের ছয় থেকে সাত মাস হাওর এলাকায় পানিতে ভরপুর থাকে। এ সময় এলাকার কিছু লোক হাওরে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করলেও বিকল্প কর্মসংস্থান না থাকায় বছরের ৯ মাস বেকার বসে থাকেন।
শান্তিগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলার আট ইউনিয়নে প্রায় ২ লক্ষাধিক লোকের বসবাস। এর মধ্যে কৃষি পরিবারের সংখ্যা ২৯ হাজার ২২৭। বৈশাখ মাসে গোলায় ধান উঠানের পর তাদের আর কোনো কাজ থাকে না। ফলে কোনো উপার্জনও থাকে না। এ সময় কৃষক পরিবারগুলো তাদের গোলায় থাকা ধান বিক্রি করে সংসারের খরচ, আগামী দিনে কৃষিকাজের খরচ, কৃষি শ্রমিকের মজুরি, সন্তানদের লেখাপড়ার খরচসহ যাবতীয় খরচ মেটাতে হয়। পরবর্তী বছরে বোরো মৌসুমের ধান কেটে ঘরে তোলার আগেই ভাণ্ডার খালি হয়ে যায়।
কৃষক পরিবারে বাড়ির চারপাশে বর্ষার পানি থাকায় বসতঘরের পাশে ছোট্ট টিনশেড বা খড়ের ঘরে আড় তৈরি করে তাতে গবাদিপশু বেঁধে রাখা হয় জুন-নভেম্বর মাস পর্যন্ত। এতে কৃষকদের পশু লালন-পালনে বাড়তি অর্থ ব্যয় করতে হয়।
শান্তিগঞ্জ উপজেলার ডুংরিয়া গ্রামের কৃষক মুজিবুর রহমান বলেন, হাওরে ৫ বিঘা অন্যের জমি বর্গা নিয়ে চাষাবাদ করেছি। জমির অর্ধেক ধান জমির মালিককে দিয়েছি। বাকি ধান দিয়ে তিন মাস সংসার চালানো যাবে। কিন্তু পরের মাসগুলো কীভাবে চলব? এলাকায় কোনো কাজ নাই। সবাই বেকার। সংসারে আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি। তাই ঋণ করে চলতে হয়।
শান্তিগঞ্জ প্রেস ক্লাব সভাপতি কাজী জমিরুল ইসলাম মমতাজ বলেন, সুনামগঞ্জের হাওর এলাকার কৃষকরা কৃষিজমির ওপর নির্ভরশীল। এখানে সারা বছর কৃষিকাজের সুযোগ নেই। কৃষকরা বছরে একবার ধান উৎপাদন করে সারা বছর সেই ফসলের ওপর নির্ভর করেন। বৈশাখ থেকে আশ্বিন মাস পর্যন্ত হাওরবাসীর তেমন অভাবে থাকে না। কার্তিকের শুরু থেকে নতুন ফসল ওঠার আগ পর্যন্ত তাদের কষ্টে থাকতে হয়। তাই কৃষক পরিবারের যুবকদের কাজে লাগাতে হলে প্রয়োজন সময়োপযোগী বিকল্প কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে স্থায়ীভাবে বেকারত্ব দূর করা।
পরিকল্পনামন্ত্রী আলহাজ এম এ মান্নান বলেন, হাওরাঞ্চলে যোগাযোগ ও বিদ্যুৎ ব্যবস্থায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন এসেছে। এ অঞ্চলে কাজের সুযোগ খুবই কম। এখন গ্রামগঞ্জের মানুষ গবাদিপশু পালন, পোল্ট্রি ফার্ম, হাঁস পালন ও মৎস্য খাতে কাজের সুযোগ সৃষ্টি করে কাজ করছে। আগের তুলনায় বেকারের সংখ্যা অনেক কমে গেছে।
গ্রামের অনেক মানুষ মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করছে। আরো কর্মসংস্থান বাড়া দরকার। এ লক্ষ্যে সরকার আগামী দিনে যেসব কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে আশা করি ১০-১৫ বছরের মধ্যে এর সুফল ভোগ করা যাবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়