প্রণোদনা ঋণের জন্য ঘুষ লাগে ২৯ শতাংশ ব্যবসায়ীর

আগের সংবাদ

অসংক্রামক রোগের ঝুঁকি বাড়ছে : করোনার প্রকোপ কমার পর ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ ও বিষণ্নতার বড় আঘাত আসছে

পরের সংবাদ

জবির নতুন ক্যাম্পাস প্রকল্প : হিসাব নেই ৫৪১ কোটি টাকার!

প্রকাশিত: আগস্ট ৩০, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ৩০, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

রকি আহমেদ, জবি : ২০১৮ সালের অক্টোবরে একনেক সভায় পাস হওয়া ‘জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন ক্যাম্পাস স্থাপন : ভূমি অধিগ্রহণ ও উন্নয়ন’ প্রকল্পের ব্যয়ে প্রায় ৫৪১ কোটি টাকার হিসাব না পাওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, প্রকল্পটি পাস হওয়ার সময় ব্যয় ধরা হয় ১৯২০ কোটি ৯৪ লাখ টাকা। এর পরের বছর ২০১৯ সালে ৮৯৯ কোটি ৮০ লাখ টাকা ব্যয়ে ১৮৮ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়। কিন্তু ২০২১ সালের ১১ মার্চ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক বার্ষিক সভার তথ্যে দেখা যায় নতুন ক্যাম্পাস প্রকল্পের জন্য ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত ১৪৪১ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। তবে জমি অধিগ্রহণ ব্যতীত অতিরিক্ত ৫৪১ কোটি টাকা কোন কোন খাতে ব্যয় হয়েছে তা জানাতে পারছেন না প্রকল্প কর্মকর্তারা। অতিরিক্ত ব্যয়ের বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী সাহাদাত হোসেন বলেন, এত টাকা ব্যয় হয়নি। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ব্যয়ের তথ্য ভুয়া।
এ ছাড়া এ প্রকল্পের পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগে নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে বিশ্ববিদ্যালয়টির সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান সর্বোচ্চ স্কোর পাওয়া প্রতিষ্ঠানকে বাদ দিয়ে প্রায় চারগুণ দাম চাওয়া প্রতিষ্ঠানকে নিয়োগের প্রস্তাব দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। জানা যায়, ২০১৯ সালের শুরুর দিকে নতুন ক্যাম্পাস প্রকল্পের পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়। এরপর ১৮টি প্রতিষ্ঠান দরপত্র জমা দেয়। এগুলো যাচাই বাছাই শেষে ওই বছরের নভেম্বরে প্রস্তাব মূল্যায়ন কমিটি পাঁচটি প্রতিষ্ঠানের সংক্ষিপ্ত তালিকা করে।
পরে কমিটির নির্দেশে ২০২০ সালের মার্চে তিনটি পরামর্শক প্রতিষ্ঠান কারিগরি ও আর্থিক প্রস্তাব দাখিল করে। এই তিনটি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সৃজনী উপদেষ্টা লিমিটেড কারিগরি মূল্যায়নে সর্বোচ্চ স্কোর অর্জন করে। তারা তাদের সেবার মূল্য চায় ৪ কোটি ৮ লাখ ৫১ হাজার টাকা। কিন্তু তৎকালীন উপাচার্য মীজানুর রহমানের পরামর্শে নির্মাণ প্রতিষ্ঠান আরবানাকে ২১ কোটি ৬০ লাখ টাকার সেবামূল্যে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান হিসাবে নিয়োগের সুপারিশ করা হয়। কিন্তু পরামর্শক নিয়োগ ও মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ণের ক্রয় প্রক্রিয়া পিপিআর অনুযায়ী না হওয়ায় প্রস্তাবটি শিক্ষা মন্ত্রণালয় নাকচ করে দিয়েছেন বলে জানা গেছে।
এ অভিযোগের বিষয়ে জানাজানি হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মাঝে ক্ষোভ দেখা দেয়। নতুন ক্যাম্পাসের এ দুর্নীতি ও অনিয়মের তীব্র নিন্দা জানিয়ে গতকাল সুষ্ঠু তদন্তের দাবি জানিয়ে বিবৃতি দেয় সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট ও ছাত্র ইউনিয়নের জবি শাখার নেতারা।
এ ছাড়া ৫৪১ কোটি টাকার অনিয়ম ও দুর্নীতির তদন্ত চেয়ে গতকাল দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসসহ বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক ড. ইমদাদুল হকের কক্ষের সামনে বিক্ষোভ করেন জবি শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এ সময় তারা স্লোগানে বলেন ৫৪১ কোটি টাকা গেল কই? বিশ্ববিদ্যালয়ের টাকা কার পকেটে?
পরে নতুন ক্যাম্পাসের এসব অভিযোগের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. ইমদাদুল হক ভোরের কাগজকে বলেন, নতুন ক্যাম্পাসের হিসাবে অনিয়ম সম্পর্কিত একটি প্রতিবেদন আমাদের নজরে এসেছে। ক্যাম্পাসের কাজে কোনো অনিয়ম আছে কিনা তা তদন্তের জন্য দুদকের কাছে পাঠানো হবে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবে দুদক।
তিনি আরো বলেন, পূর্বের মাস্টারপ্ল্যানের দরপত্রে জটিলতা ছিল। আগের পুরো প্রক্রিয়া বাতিল করে নতুন করে দরপত্র আহ্বানের প্রক্রিয়া চলছে।
উল্লেখ্য, জবির নতুন ক্যাম্পাস প্রকল্পের আওতায় ভূমি অধিগ্রহণ, ভূমি উন্নয়ন, পরিকল্পনা ও প্রকৌশল ভবন, সীমানা প্রাচীর, অভ্যন্তরীণ রাস্তা নির্মাণ, হ্রদ খনন, পুকুর খনন, ঘাট নির্মাণ, সংযোগ সেতু নির্মাণ, অভ্যন্তরীণ সারফেস ড্রেন নির্মাণ ও মাস্টারপ্ল্যানের কাজ করার কথা থাকলেও প্রায় তিন বছরে শুধু জমি অধিগ্রহণেই আটকে আছে প্রকল্পের কাজ। এ অবস্থায় প্রকল্পের মেয়াদ তিন দফা বাড়িয়ে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়েছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়