প্রণোদনা ঋণের জন্য ঘুষ লাগে ২৯ শতাংশ ব্যবসায়ীর

আগের সংবাদ

অসংক্রামক রোগের ঝুঁকি বাড়ছে : করোনার প্রকোপ কমার পর ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ ও বিষণ্নতার বড় আঘাত আসছে

পরের সংবাদ

কলাপাড়ায় ভূমি অধিগ্রহণে জটিলতা : পৈতৃক বসতভিটা হারিয়ে বিপাকে ২১৪ পরিবার

প্রকাশিত: আগস্ট ৩০, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ৩০, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

এস কে রঞ্জন, কলাপাড়া (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি : কলাপাড়া উপজেলার লালুয়া ইউনিয়নে প্রক্রিয়াধীন পায়রা সমুদ্রবন্দরের ভূমি অধিগ্রহণের জটিলতায় পড়ে ২১৪ পরিবার স্থায়ী সম্পত্তি ও পৈতৃক বসতবাড়ি হারিয়ে এখন অসহায় ও মানবেতর জীবনযাপন করছে। সরকারের সিদ্ধান্ত ও দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের স্বার্থে একাত্মতা পোষণ করে শত বছরের পৈতৃক সহায়-সম্পত্তি ছেড়ে দিয়ে এখন অধিগ্রহণের টাকা ও পুনর্বাসনের জন্য পটুয়াখালী ভূমি হুকুম দখল শাখা ও পায়রাবন্দর পুনর্বাসন প্রকল্প ডরপের পেছনে ঘুরছে অসহায় পরিবারগুলো। প্রায় শত পরিবার বেড়িবাঁধের বাইরে খুপরি ঘর করে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাস করছে।
সরজমিন ঘুরে দেখা যায়, উপজেলার লালুয়া ইউনিয়নের চাড়িপাড়া গ্রামে একসময় যাদের গোলা ভরা ধান আর গোয়াল ভরা গরু ছিল, আজ তারা সব হারিয়ে বেড়িবাঁধে খুপরি ঘর করে থাকছেন। ভূমি হুকুম দখল শাখা পটুয়াখালী ও পায়রাবন্দর পুনর্বাসন প্রকল্প ডরপে একশ্রেণির দালাল চক্রের কারণে বিভিন্ন মামলার জটিলতায় পড়েছে ভুক্তভোগী এই ২১৪ পরিবার। পরিবারগুলো বসতবাড়ির টাকা পেলেও তাদের কপালে জোটেনি আবাসনের ঘর। এদের মধ্যে বেড়িবাঁধের বাইরে যারা বসবাস করছেন তাদের অবস্থা করুণ। তাদের দুর্ভোগের শেষ নেই। জোয়ারের পানি এলে খুপরি ঘর ডুবে যায়। তখন পরিবারের সদস্যরা চাড়িপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবনে আশ্রয় নেন। অধিকাংশ সময় অনাহারে দিন কাটছে তাদের। উপজেলার লালুয়া ইউনিয়নের চাড়িপাড়া, নয়াকাটা, হাসনাপাড়া ও বানাতিপাড়াসহ কয়েকটি গ্রামে ভূমি অধিগ্রহণে সর্বস্বহারা মানুষের চিত্র একই রকম। অধিগ্রহণে সব হারানো চান মিয়া, আকবর ফকির, বাবুল মিয়া, মোসারেফ হাওলাদার, রিমন হাওলাদারসহ আরো অনেকে বলেন, একটি দালাল চক্র মিথ্যা মামলা দিয়ে আমাদের জমির টাকা আটকে রাখছে। একদিন আমাদের সব ছিল। এখন কিছু নাই। আমরা বেশকিছু পরিবার বেড়িবাঁধের পাশে আশ্রয় নিয়েছি। আমাদের অনেকের কাছ থেকে ডরপের মাঠকর্মীরা ঘর দেয়ার জন্য দুবার কাগজপত্র জমা নিয়েছেন, তবুও আমরা ঘর পাইনি।
অধিগ্রহণে সব হারানো রাহিমা বেগম, মলিনা বেগম, লাভলী বেগমসহ আনেকে বলেন, বন্দরের লোক বলেছিলেন, আবাসনে ঘর দিয়া আমাদের নামাবে। ঘর না দিয়া রাতের অন্ধকারে আমাদের বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে। ডরপের লোকজনকে যারা টাকা দিতে পারে তারাই ঘর পায়। আমরা টাকা দিতে পারি না, তাই ঘরও পাই না। পরিবার নিয়ে এখন বেড়িবাঁধের বাইরে খুব কষ্টে দিন কাটাচ্ছি। প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমাদের দাবি, তার কথায় সব দিয়ে দিয়েছি। এখন আমরা জমির টাকাও পাই না এবং আবাসন পাই না। আমরা থাকব কোথায়। খাব কি?
লালুয়া ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের সদস্য মো. রবিউল ইসলাম বলেন, পরিবারগুলো খুব অসহায়। ইউনিয়ন পরিষদ থেকে যতটুকু ত্রাণ পেয়েছি তা নিয়ে তাদের পাশে দাঁড়িয়েছি। বেড়িবাঁধের বাইরে থাকা মানুষের একটা ব্যবস্থা করার জন্য সরকারের কাছে আমি বিনীত অনুরোধ করছি।
পায়রাবন্দর পুনর্বাসন প্রকল্প ডরপের ডেপুটি টিম লিডার গোলাম সরোয়ার টিপু জানান, অধিগ্রহণকৃত পরিবারদের প্রতি আমার অনুরোধ- ডরপের কোনো মাঠকর্মী অথবা কর্মকর্তা যদি অপ্রীতিকর কোনো ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকে তাহলে আমার কাছে লিখিত অভিযোগ করেন, যথাযথ ব্যবস্থা নেব।
লালুয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান শওকত হোসেন তপন বিশ্বাস বলেন, সংঘবদ্ধ দালাল চক্র মিথ্যা-বানোয়াট, জালিয়াতি করে বিভিন্ন মামলা দিয়ে মানুষকে হয়রানি করে আসছে। বসতবাড়ির টাকা পেলেও মামলা থাকায় তারা অধিগ্রহণের টাকা এবং পুনর্বাসনের ঘর পাননি।
পটুয়াখালী ভূমি হুকুম দখল শাখা কর্মকর্তা মো. আল ইমরান বলেন, মামলা চলমান থাকা অবস্থায় আমরা অধিগ্রহণকৃত টাকা দিতে পারি না।
পায়রাবন্দর কর্তৃপক্ষের পরিচালক (প্রশাসন) ও যুগ্ম সচিব মহিউদ্দিন আহমেদ খান বলেন, মামলা জটিলতায় যে পরিবারগুলো এখন পর্যন্ত আবাসন পায়নি তাদের মামলা দ্রুত সমাধান করে পুনর্বাসিত করা হবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়