ওবায়দুল কাদের : ২১ আগস্ট মামলার আপিল শুনানি শুরু শিগগিরই

আগের সংবাদ

মহামারিতে মেগা প্রকল্পে স্থবিরতা

পরের সংবাদ

মধ্যপাড়া খনির মজুত শেষ : দায়িত্ব পাচ্ছে জিটিসি

প্রকাশিত: আগস্ট ২৬, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ২৬, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

মোস্তাফিজুর রহমান বকুল, পার্বতীপুর (দিনাজপুর) থেকে : পার্বতীপুরে মধ্যপাড়া কঠিন শিলাখনির উৎপাদন, পরিচালন ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব ছয় বছরের জন্য পুনরায় বর্তমান ইউরোপিয়ান ঠিকাদার ‘জিটিসি’কেই দেয়া হচ্ছে। কয়েক দিনের মধ্যে খনি কর্তৃপক্ষ ও জিটিসির মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষর হওয়ার কথা রয়েছে। জিটিসির সঙ্গে খনি কর্তৃপক্ষের বর্তমান চুক্তির মেয়াদ ২ সেপ্টেম্বর শেষ হবে।
মধ্যপাড়া খনির উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেলে একদিকে বিপাকে পড়বে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, পায়রা, মাতারবাড়ী সমুদ্রবন্দর, শাহজালাল বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনালসহ দেশের মেগা প্রকল্পগুলো। এসব প্রকল্প মধ্যপাড়ার পাথরের ওপর নির্ভরশীল। অন্যদিকে বেকার হয়ে পড়বেন ৭০০-এর বেশি কর্মকর্তা-কর্মচারী। পাশাপাশি খনির ওপর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জীবিকা নির্ভরশীল আরো ১০ সহস্রাধিক মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। বৈশ্বিক মহামারি করোনার কারণে ৭ দফা আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করেও বিদেশিদের তেমন সাড়া না মেলায় এবং খনির পাথর উৎপাদন যাতে ব্যাহত না হয় সেজন্য এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এদিকে খনি ইয়ার্ডে পাথরের মজুত প্রায় শেষ। প্রয়োজনীয় সাইজের পাথর না পেয়ে ক্রেতারা ফিরে যাচ্ছেন। জানা গেছে, মধ্যপাড়া খনির বর্তমান উৎপাদন, রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচালন ঠিকাদার বেলারুশের জার্মানিয়া ট্রেস্ট কনসোর্টিয়ামের (জিটিসি) চুক্তির মেয়াদ ২ সেপ্টেম্বর শেষ হচ্ছে। জিটিসি পূর্ণমাত্রায় পাথর উৎপাদন করায় পর পর টানা তিন অর্থবছর প্রায় ৫০ কোটি টাকা মুনাফা করে খনিটি। অথচ ২০০৭ সালে উৎপাদনে যাওয়ার পর থেকেই খনিটি লোকসান দিয়ে আসছিল। নিয়ম অনুযায়ী চুক্তি শেষ হওয়ার অন্তত ৬ মাস আগে নতুন ঠিকাদার নিয়োগ দেয়ার কথা। কিন্তু বৈশ্বিক মহামারি করোনার কারণে তা সম্ভব হয়নি। এ অবস্থায় জিটিসির মেয়াদকাল আরো এক দফা বাড়ানোর নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। কিন্তু অসাধু একটি চক্রের কারণে চুক্তি সম্পাদনে অযথাই বিলম্ব করা হচ্ছে।
গত রবিবার সরজমিন খনি এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, পাথর নিতে আসা ট্রাকের দীর্ঘ সারি। ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করেও পাথর পাচ্ছে না। ডিলারদের অভিযোগ, ব্যাংকে অগ্রিম টাকা জমা দিয়েও মজুত না থাকায় খনি কর্তৃপক্ষ পাথর সরবরাহ দিতে পারছে না।
মধ্যপাড়া গ্রানাইট মাইনিং কোম্পানি লিমিটেডের (এমজিএমসিএল) মহাব্যবস্থাপক (জিএম-অপারেশন) মো. আবু তালেব ফারাজী জানান, খনির উৎপাদন যাতে বন্ধ না হয়, সেদিকে লক্ষ্য রেখেই কাজ চলছে। বর্তমান চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই জিটিসির সঙ্গে পুনরায় ছয় বছরের জন্য চুক্তি স্বাক্ষর হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, খনি ইয়ার্ডে বিক্রি করার মতো প্রায় ৯০ হাজার টন পাথর মজুত আছে। এর মধ্যে বোল্ডার ৫০ হাজার টন, ডাস্ট (পাথরের গুঁড়া) ৩৫ হাজার টন এবং ৪০-৬০, ৬০-৮০ মিমি সাইজ ৫ হাজার টন। তবে সবচেয়ে বেশি চাহিদার ৫-২০ ও ২৫-৩০ মিমি সাইজের বিক্রির মতো কোনো পাথর মজুত নেই।
উল্লেখ্য, অব্যাহত লোকসানের মুখে বন্ধ হওয়ার উপক্রম হওয়ায় মধ্যপাড়া খনির উৎপাদন, রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচালন ঠিকাদার হিসেবে জিটিসিকে দায়িত্ব দেয়া হয়। জিটিসি ২০১৪ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি পাথর উৎপাদন শুরু করে। নানা বাধা পেরিয়ে ২০১৮-১৯ অর্থবছর থেকে খনিটি মুনাফা করে আসছে। জিটিসির সঙ্গে প্রথম দফা চুক্তির মেয়াদ শেষ হয় ২০১৯ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি। পরে জিটিসির চুক্তির মেয়াদ এক বছর বাড়ানো হয়, যা ২ সেপ্টেম্বর শেষ হবে।
জিটিসি খনি পরিচালনার পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে। খনির প্রধান গেটের সামনে ‘চ্যারিটি হোম’ নামে একটি দাতব্য সংস্থা স্থাপন করে অভিজ্ঞ চিকিৎসক দ্বারা বিনামূল্যে চিকিৎসা পরামর্শ সেবা দিয়ে যাচ্ছে। খনি শ্রমিকদের উচ্চশিক্ষায় অধ্যয়নরত সন্তানদের প্রতি মাসে শিক্ষা বৃত্তিও প্রদান করছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়