ওবায়দুল কাদের : ২১ আগস্ট মামলার আপিল শুনানি শুরু শিগগিরই

আগের সংবাদ

মহামারিতে মেগা প্রকল্পে স্থবিরতা

পরের সংবাদ

চট্টগ্রামে কয়েক ঘণ্টার বৃষ্টিতে জলজট-যানজট

প্রকাশিত: আগস্ট ২৬, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ২৬, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম অফিস : কয়েক ঘণ্টার বৃষ্টিতে চট্টগ্রাম মহানগরের নিম্নাঞ্চল ডুবে যাওয়ায় ভোগান্তিতে পড়ে সাধারণ মানুষ। নগরীর বিভিন্ন এলাকায় হাঁটু থেকে কোমরপানিতে সড়ক, দোকানপাট ডুবে যায়। জলাবদ্ধতার কারণে ভোগান্তিতে পড়েন অফিসগামী লোকজন। পানিতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে থাকে শত শত যানবাহন।
এদিকে নগরের মুরাদপুর এলাকায় বৃষ্টির পানির তীব্র ¯্রােতে নালায় পড়ে এক পথচারী নিখোঁজ হয়েছেন। ফায়ার সার্ভিসের কয়েক ঘণ্টার চেষ্টায়ও তার সন্ধান মিলেনি। গতকাল বুধবার বেলা ১১টায় নগরীর পাঁচলাইশ থানাধীন মুরাদপুর পুলিশ বক্স এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। অতিরিক্ত পানির ¯্রােতের কারণে এ দুর্ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস। বিকাল ৫টা পর্যন্ত তার কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি।
মঙ্গলবার গভীর রাত থেকে বুধবার সকাল পর্যন্ত চট্টগ্রাম মহানগরে মাঝারি থেকে ভারি বৃষ্টিপাত হয়। সকালে জোয়ার শুরু হওয়ায় জমে থাকা পানি নামতে দেরি হয়। টানা বৃষ্টির কারণে হাঁটু থেকে কোমরপানি পর্যন্ত ডুবে যায় নগরীর অধিকাংশ নিচু এলাকা। ডুবে গেছে সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরীর বাড়িও। এছাড়া নগরের আগ্রাবাদ সিডিএ, বহদ্দারহাট, মুরাদপুর, ষোলশহর দুই নম্বর গেট, চকবাজার ও বাকলিয়া এলাকা হাঁটুপানিতে তলিয়ে যায়। অফিসগামীরা হেঁটে ও রিকশায় অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে গন্তব্যে পৌঁছেন। যানবাহন না পেয়ে অনেকেই আবার হাঁটুপানি মাড়িয়ে কর্মস্থলে যান। জলাবদ্ধতায় সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েন কর্মজীবী নারীরা।
প্রায় ১১ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে জলাবদ্ধতা নিরসনে চারটি প্রকল্পের কাজ চলমান থাকলেও বৃষ্টি হলেই এমন দুর্ভোগে নগরবাসী ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। যদিও সিটি করপোরেশনের কর্তারা বলছেন, নালা-নর্দমায় প্রতিবন্ধকতার কারণে পানি জমলেও তা ধীরে ধীরে সরে যাচ্ছে।
মুরাদপুর এলাকায় পানির ¯্রােতে পথচারী ভেসে যাওয়ার ঘটনা সম্পর্কে আগ্রাবাদ ফায়ার স্টেশনের লিডার বিপ্লব কুমার নাথ বলেন, নালায় পড়ে এক ব্যক্তি নিখোঁজ হওয়ার খবর পেয়ে বেলা ১১টায় ঘটনাস্থলে গিয়ে কয়েক ঘণ্টা তল্লাশি চালিয়েও তার সন্ধান মিলেনি। ফায়ার সার্ভিসের পাঁচ সদস্যের ডুবুরি দল নিখোঁজ যুবককে উদ্ধারে কাজ করছে। এর আগে গত ৩০ জুন ষোলশহর ২ নম্বর গেটের মেয়র গলিতে বৃষ্টির সময় সিএনজিচালিত অটোরিকশা নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে নালায় পড়ে গেলে চালকসহ দুজনের মৃত্যু হয়। এ সময় আহত হন আরো তিনজন।
চট্টগ্রাম মা ও শিশু জেনারেল হাসপাতালের নিচতলা যথারীতি পানির নিচে। হাসপাতালের অনুসন্ধান বিভাগের কর্মকর্তা গিয়াস উদ্দিন বলেন, সকালে শুরুতে হাসপাতালের প্রবেশমুখে পানি জমে। কিছুক্ষণের মধ্যে পানি নিচতলায় প্রবেশ করে। পরে নিচতলার সব কার্যক্রম সরিয়ে নেয়া হয়।
চট্টগ্রাম নগরের জলাবদ্ধতা নিরসনে ১০ হাজার ৯২১ কোটি টাকা ব্যয়ে চারটি প্রকল্পের কাজ চলছে। এর মধ্যে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (চউক) দুটি, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন একটি এবং পানি উন্নয়ন বোর্ড একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। চউকের একটি প্রকল্প সরাসরি বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রকৌশল বিভাগ। বিপুল অর্থ ব্যয়ে প্রকল্পের কাজ চললেও এর কোনো সুফল পাওয়া যাচ্ছে না বলে অভিযোগ নগরবাসীর।
নগরীর মুরাদপুর এলাকার বাসিন্দা জামশেদুর রহমান বলেন, সামান্য বৃষ্টি হলেই মুরাদপুরসহ আশপাশের পুরো এলাকা পানিতে তলিয়ে যায়। চলাচল করা যায় না। ঘরের মধ্যে পানি ওঠায় আসবাব নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। কয়েক বছর ধরে শুনছি, জলাবদ্ধতা নিরসনে কাজ চলছে। চারটি প্রকল্প চলমান। কিন্তু এসব প্রকল্পের কোনো সুফল পাওয়া যাচ্ছে না। নালা-খালগুলো পরিষ্কার করা হয় না। জলাবদ্ধতার এ দুর্ভোগ থেকে কবে মুক্তি পাব? কবে এ সমস্যা সমাধান হবে জানি না।
চউকের জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্প পরিচালক আহমেদ মাঈন উদ্দীন বলেন, ভারি বৃষ্টিপাতের পাশপাশি পূর্ণিমার কারণে কর্ণফুলী নদীতে জোয়ার আসায় নগরের রাস্তায় পানি বেড়ে গেছে। জলাবদ্ধতা প্রকল্পের কাজ শেষ হলে এই দুর্ভোগ থাকবে না।
চসিকের জলাবদ্ধতা স্ট্যান্ডিং কমিটির সভাপতি কাউন্সিলর মোবারক আলী বলেন, নালা-নর্দমায় পলিথিনসহ বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতার কারণে পানি জমেছে। সিটি করপোরেশনের কর্মীরা প্রতিবন্ধকতা অপসারণে কাজ করছেন।
পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিস বলছে, মৌসুমি বায়ু সক্রিয় থাকায় বৃষ্টিপাত আরো দুদিন অব্যাহত থাকতে পারে। গতকাল বুধবার বেলা ১২টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রামে ১১০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিসের আবহাওয়াবিদ শেখ ফরিদ আহমদ ভোরের কাগজকে বলেন, মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে বৃষ্টিপাত আগামী দুদিন অব্যাহত থাকতে পারে। তবে কোনো সতর্ক সংকেত নেই।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়