১৩ দিনেও খোঁজ মেলেনি স্কুলছাত্র আব্দুর রহিমের

আগের সংবাদ

প্রত্যাবাসনে বাধা চীন-রাশিয়া! বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠাতে আন্তর্জাতিক মহলও নিষ্ক্রিয়

পরের সংবাদ

মিরসরাইয়ে ভরা মৌসুমেও ইলিশের দেখা মিলছে না

প্রকাশিত: আগস্ট ২৪, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ২৪, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

মিরসরাই (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি : ভরা মৌসুমেও বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরতে গিয়ে ইলিশের দেখা পাচ্ছেন না মিরসরাই উপকূলের জেলেরা। গত বছর নিষেধাজ্ঞা শেষে জালভরা ইলিশ মাছ পাওয়া গেলেও এ বছর সাগর থেকে অনেকটাই খালি হাতে ফিরছেন তারা। ইলিশ না পেয়ে হতাশ হয়ে সমুদ্র থেকে বিভিন্ন প্রজাতির ছোট মাছ নিয়ে ফিরছেন জেলেরা। অন্যান্য উপকূল এলাকায় জেলেদের জালে ইলিশ ধরা পড়লেও মিরসরাইয়ে উপকূলে ব্যতিক্রম চিত্র দেখা যাচ্ছে। ইলিশ না পাওয়ায় চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে জেলে পরিবারগুলোকে।
জানা গেছে, ইলিশের প্রজনন মৌসুম উপলক্ষে গত ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত ৬৫ দিন সাগরে মাছ ধরার ওপর সরকার নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। নিষেধাজ্ঞা শেষে সাগরে মাছ ধরার জন্য জেলেরা গেলেও ইলিশের দেখা মিলছে না। সাগরে যাওয়া-আসার তেল খরচের টাকাই উঠছে না অনেক জেলের। ইলিশ না পাওয়ায় এখন পরিবার-পরিজন নিয়ে দুর্বিষহ দিন কাটছে তাদের।
এদিকে মৌসুমের শুরুতে নৌকা, জাল কেনা এবং মেরামতের জন্য ধারদেনাসহ স্থানীয় পর্যায়ে ঋণ করেন জেলেরা। মৌসুম এলে চার-পাঁচ মাস ইলিশ শিকার করেন। সেই মাছ বিক্রির আয় দিয়ে দেনা ও কিস্তির ঋণ শোধ দেন। বাকি টাকায় সংসার চলে। কিন্তু আশানুরূপ মাছ না পাওয়ায় কীভাবে ঋণ পরিশোধ করবেন সেই চিন্তায় দিন কাটছে তাদের। সাহেরখালী ইউনিয়নের ডোমখালী এলাকার জেলে মৃদুল জলদাস জানান, মুহুরী প্রজেক্টের সøুইচগেট খুলে দেয়ায় এদিকে স্রোত বেড়ে গেছে। সব মাছ দক্ষিণে চলে গেছে। এখন ইলিশ ধরার মৌসুম। যদি সøুইচগেটের ৪০টি দরজা না খুলে দেয়া হতো তাহলে এ মিঠা পানি আমাদের এখানে থাকত, আমরা মাছ ধরতে পারতাম। গত বছর প্রচুর মাছ পাওয়া গেছে, এ বছর তার ছিটেফোঁটাও পাচ্ছি না।
অন্য জেলেরা জানান, সাধারণত জুন থেকে আগস্ট মাস জেলেদের জন্য অনেক কাক্সিক্ষত। মূলত বর্ষার এই তিন মাসের দিকে তাকিয়ে জেলেরা সারা বছর প্রহর গোনেন। প্রতি বছর এ সময় সমুদ্রে প্রচুর ইলিশের দেখা মেলে। আর সেই বিক্রির অর্থ দিয়েই চলে জেলেদের সারা বছর। সরজমিন উপজেলার বড় দারোগারহাট, বড় তাকিয়া, হাদি ফকিরহাট, মিরসরাই সদর, মিঠাছড়া বাজারে গিয়ে ইলিশ মাছ বিক্রি করতে দেখা যায়নি। বড় দারোগাহাট ও মিঠাছড়া বাজারে কয়েকজন জেলে ইলিশ মাছ বিক্রির জন্য নিয়ে এলেও তা আকারে ছোট এবং মাঝারি ধরনের।
বড় দারোগারহাট বাজারের প্রবীণ মাছ বিক্রেতা হরি জলদাস বলেন, ইলিশের কথা উঠলে দুঃখ লাগে। মাত্র ১০-১২ বছর আগেও এই সময়টাতে সাগর পাড়ে ইলিশের ছড়াছড়ি ছিল। দাম বেশি হওয়ায় জেলেরা অনেক সময় বাজারেও আনতে চাইতেন না মাছ। কিন্তু এখন ইলিশ দুর্লভ হওয়ায় জাটকা আকৃতির ইলিশ আড়াই থেকে তিনশ টাকা এবং মাঝারি আকারের ইলিশ ৪০০-৫০০ টাকায় বিক্রি হয়। এছাড়া বড় ইলিশের কেজি ৭০০-৮০০ থেকে ১ হাজারের ওপরে বিক্রি হয়। উপজেলার ডোমখালী জেলেপাড়ার সাধারণ সম্পাদক বাদল চন্দ্র জলদাস জানান, মূলত ফেনী নদীর মুহুরী প্রজেক্ট এলাকাসহ অর্থনৈতিক অঞ্চলের বিভিন্ন পয়েন্টের সøুইচগেটের দরজাগুলো খুলে দেয়ায় স্রোত বেড়ে গেছে সাগরের। এতে করে ইলিশ মাছ গভীর সাগরে চলে গেছে।
মিরসরাই উপকূলীয় জেলে সমন্বয় পরিষদের সাধারণ সম্পাদক হরিলাল জলদাস বলেন, মৌসুম হলেও বঙ্গোপসাগরের মিরসরাই-স›দ্বীপ চ্যানেলে পর্যাপ্ত ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে না। এরপরও তারা আশা ছাড়েননি। আগামী পূূর্ণিমার জোয়ারে হয়তো এ আকালের অবসান হবে এমনই প্রত্যাশা তাদের। মিরসরাই উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা নাসিম আল মাহমুদ বলেন, সাগরে ইলিশ না পাওয়ার বিষয়ে তাৎক্ষণিক কিছু বলা যাচ্ছে না। বিস্তারিত পর্যবেক্ষণ শেষে জানা যাবে। বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ ইলিশ প্রজনন কেন্দ্রের মধ্যে মিরসরাইয়ের সাহেরখালী হাইতকান্দি পয়েন্ট অন্যতম। প্রাথমিকভাবে ধারণা করছি, অর্থনৈতিক অঞ্চলে বালু ভরাট, পণ্য পরিবহনের কাজে ব্যবহৃত ট্রলার চলাচলের প্রভাবে ইলিশ মাছ এ বিচরণ এলাকা থেকে সরে যেতে পারে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়