অভিনন্দন জানাল প্রজ্ঞা : রাষ্ট্রপতির শিল্প উন্নয়ন পুরস্কারের অযোগ্য তামাক কোম্পানি

আগের সংবাদ

স্বাস্থ্যবিধি গায়েব, তদারকি নেই : গণপরিবহন, দোকান, কাঁচাবাজার, বিনোদন কেন্দ্রে চলাচল স্বাভাবিক

পরের সংবাদ

৪ ঘণ্টায় নিভেছে এমিকন গোডাউনের আগুন : পরিত্যক্ত ভবনে ছিল অনেক কেমিকেল ও দাহ্য পদার্থ

প্রকাশিত: আগস্ট ২২, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ২২, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : রাজধানীর বনানীতে চেয়ারম্যানবাড়ী এলাকার একটি ৭ তলা বাণিজ্যিক ভবনের তৃতীয় তলায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। গতকাল শনিবার সকাল সোয়া ৯টার দিকে মহাখালী বিমানবন্দর সড়ক সংলগ্ন ৭৯/৩ নম্বর ভবনে ক্রেস্ট ও ট্রফি তৈরির প্রতিষ্ঠান এমিকনের গোডাউনে আগুনের সূত্রপাত হয়। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের ১৫টি ইউনিট আগুন নির্বাপণের কাজ শুরু করে। ৪ ঘণ্টার চেষ্টার পর দুপুর ১টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। ফায়ার সার্ভিসের সঙ্গে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করে বিমানবাহিনী, পুলিশ, ওয়াসা ও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)।
তাৎক্ষণিকভাবে আগুন লাগার কারণ ও ক্ষয়ক্ষতি নিশ্চিত করতে পারেনি ফায়ার সার্ভিস। এমিকন নামের এ প্রতিষ্ঠানটি মুক্তিযুদ্ধে অবদানের জন্য বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রনায়ক, রাজনীতিবিদ ও সংগঠনকে দেয়া সম্মাননা পদকে স্বর্ণে ভেজাল দিয়ে আলোচনায় এসেছিল।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ২০১৬ সালে বুয়েট কর্তৃক পরিত্যক্ত ঘোষিত ভবনটির এমিকনের গোডাউনে কেমিকেল ও দাহ্য পদার্থ থাকায় দাউ দাউ করে আগুনের লেলিহান শিখা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। বিল্ডিং কোড না মানা এবং তাৎক্ষণিকভাবে অগ্নিনির্বাপণে আনার কোনো সরঞ্জাম না থাকায় শুরুতেই আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে বেগ পেতে হয়। এমিকনের কর্মচারীদের দাবি, গোডাউনে তারের জঞ্জালের কারণে সকালে প্রতিষ্ঠানটির প্রধান বৈদ্যুতিক সুইচ চালু করার পর শর্টসার্কিট থেকে এ ঘটনা ঘটেছে। এদিকে, ভবনের ভেতর থেকে ধোঁয়ার কুণ্ডলী বের হতে থাকলে আশপাশের লোকজনের মধ্যে আতংকের সৃষ্টি হয়। সেই সঙ্গে মহাখালী-বিমানবন্দর সড়কে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়।
সরেজমিনে দেখা যায়, ৭৯ নম্বর ভবনটির ৪,৫,৬,৭ তলায় আনন্দ টেলিভিশনের অফিস। ২য় ও ৩য় তলায় এমিকনের শোরুম, গোডাউন ও কারখানা। ভবনটিতে আরো কয়েকটি প্রতিষ্ঠান থাকলেও মানা হয়নি বিল্ডিং কোড। ভবনটির মাঝখানে, এর উত্তর ও দক্ষিণ সারির ভবনগুলো একটি আরেকটির সঙ্গে লাগোয়া। এক ভবন থেকে আরেক ভবনের দূরত্বের ক্ষেত্রে এক ইঞ্চিও ফাঁকা নেই। ৭৯ নম্বর ভবনটির চতুর্থ ও পঞ্চম তলার সামনের অংশে জানালা কিংবা কাঁচও দেয়া নেই। পুরোপুরি ইটের ওয়াল দেয়া। আগুনে ওই দুটি ফ্লোরের ধোঁয়া বের হতে না পারায় ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা দেয়ালের বাইরের অংশ ছিদ্র করে সেখান দিয়ে পানি ছিটান। ভবনটি মূল সড়কের পাশে হলেও পানির উৎস কাছাকাছি না থাকায় আগুন নেভাতে বেশ বেগ পেতে হয়েছে ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের।
তৃতীয় তলার এমিকনের গোডাউনের সিকিউরিটি গার্ড ইউনুছ জানান, শনিবার সকাল সোয়া ৮টার দিকে তিনি গোডাউনের দরজা খোলেন। এর আগে দরজার বাইরে থাকা গোডাউনের বিদ্যুতের লাইনের মেইন সুইচ চালু করেন। তখন গোডাউনে কাজ করা স্টাফরা অফিসে ঢুকছিলেন। সুইচ চালু করার অল্প সময়ের মধ্যে গোডাউনের যে অংশে ক্রেস্ট তৈরি করার দাহ্য পদার্থ রাখা হয়, সেখান থেকে ধোঁয়া বের হতে দেখেন এবং পোড়া গন্ধ পাওয়া যায়। অল্প সময়ের মধ্যে চতুর্দিক ধোঁয়ায় ছেয়ে যায়। তখন গোডাউনের স্টাফরা দ্রুত নিচে নেমে আসেন।
এমিকন গোডাউনে কাজ করা স্টাফদের সুপারভাইজার হাকিম জানান, তৃতীয় তলায় এমিকনের গোডাউনের রুমের বাইরে বিদ্যুতের মেইন সুইচ। কাজ শেষে সেটি অফ করে রাখা হয়। আবার পরের দিন অফিস খোলার সময় সুইচ অন করা হয়। গোডাউনের ভেতরে ক্রেস্ট তৈরির চায়না মালামাল ছিল। সকালে দারোয়ান বিদ্যুতের সুইচটি চালু করার কিছুক্ষণ পরই ধোঁয়া উড়তে দেখা যায়। পরে দ্রুত আগুন ধরে যায়। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের পরিচালক (অপারেশন ও মেইনটেন্যান্স) জিল্লুর রহমান ঘটনাস্থলে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে জানান, ভবনটিতে পর্যাপ্ত অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা ছিল না। এমিকন গোডাউন ভেতরে প্রচুর পরিমাণে দাহ্য পদার্থ থাকায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে কিছুটা বেগ পেতে হয়েছে। তিনি বলেন, বিল্ডিং কোড অনুযায়ী আমরা এখনো ভবনটিতে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা দেখতে পাইনি। বলতে গেলে ভবনের নিজস্ব কোনো ফায়ারফাইটিং ব্যবস্থা ছিল না।
ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাজ্জাদ হোসাইন বলেন, এ ঘটনায় ৩ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারা রিপোর্ট দিলে আগুনের সূত্রপাতসহ সব বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যাবে। এদিকে আগুন লাগার খবরে ঘটনাস্থলে ছুটে যান ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আতিকুল ইসলাম। তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, বাংলাদেশ ন্যাশনাল বিল্ডিং কোড (বিএনবিসি) না মানলে ট্রেড লাইসেন্স নবায়ন করা হবে না। ‘এটা পুরনো বিল্ডিং। তবে ঝুঁকিপূর্ণ কিনা সেটা বলবে বুয়েট। বিল্ডিং কোড হয়েছে ২০০৬ সালে। তার আগে এ বিল্ডিং হয়েছে। আমাদের কথা হলো- যারা আগে বিল্ডিং করেছেন, গার্মেন্টসও অনেক আগে হয়েছে। কিন্তু এরপরও লোহার সিঁড়ি করা হচ্ছে। তিনি অগ্নিনির্বাপণে সহায়তা করার জন্য বিমানবাহিনীকে ধন্যবাদ জানান।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়