অভিনন্দন জানাল প্রজ্ঞা : রাষ্ট্রপতির শিল্প উন্নয়ন পুরস্কারের অযোগ্য তামাক কোম্পানি

আগের সংবাদ

স্বাস্থ্যবিধি গায়েব, তদারকি নেই : গণপরিবহন, দোকান, কাঁচাবাজার, বিনোদন কেন্দ্রে চলাচল স্বাভাবিক

পরের সংবাদ

সেই পল্লী চিকিৎসকের রিমান্ড শুনানি কাল : যেভাবে সরানো হয় মডার্নার টিকা

প্রকাশিত: আগস্ট ২২, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ২২, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : রাজধানীর দক্ষিণখান ও উত্তরখানের ৪৫, ৪৬ ও ৪৭নং ওয়ার্ডের তিনটি কেন্দ্রে টিকা দেয়ার দায়িত্ব পান ‘দরিদ্র পরিবার সেবা সংস্থা’ নামের একটি বেসরকারি ক্লিনিকের মালিক পল্লী চিকিৎসক বিজয় কৃষ্ণ তালুকদার। ৭ আগস্ট দেশজুড়ে শুরু হওয়া গণটিকাদানের বিশেষ ক্যাম্পেইনের অংশ হিসেবে ওই ৩ কেন্দ্রে মার্কিন কোম্পানি মডার্নার তৈরি টিকা দেয়া শুরু হয়। তিন শ্রেণির জনগোষ্ঠীকে (পঞ্চাশোর্ধ্ব বয়স্ক জনগোষ্ঠী, শারীরিক প্রতিবন্ধী এবং দুর্গম ও প্রত্যন্ত অঞ্চলের জনগোষ্ঠী) অগ্রাধিকার দেয়ার বিষয়টিকেই কাজে লাগান তিনি। ক্যাম্পেইনের জন্য বরাদ্দ টিকা বাসায় মজুত করে নিজ ক্লিনিকে টাকার বিনিময়ে বিক্রি শুরু করেন।
পরে টিকাগ্রহীতাদের ভোটার আইডির মাধ্যমে রেজিস্ট্রেশনও করে দিতেন বিজয় কৃষ্ণ তালুকদার। ফলে সরকারের পক্ষ থেকে বিনামূল্যে দেয়া টিকার হিসাব ঠিক থাকলেও মাঝখান দিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছিলেন তিনি। শুধু করোনার টিকাই নয়, শিশুদের জন্য সরকারিভাবে আসা হাম, পোলিও, পেন্টার মতো টিকাও বিভিন্ন এনজিওর মাধ্যমে বিনামূল্যে সংগ্রহ করে টাকার বিনিময়ে বছরের পর বছর ধরে দিয়ে আসছিলেন তিনি। তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। এর আগে গত বুধবার রাতে বিজয় কৃষ্ণ তালুকদারের ক্লিনিকে ও বাসায় অভিযান চালিয়ে মডার্নার টিকাসহ তাকে গ্রেপ্তার করে দক্ষিণখান থানা পুলিশ। এ সময় দুই অ্যাম্পুল মডার্নার টিকা ও ২০টি খালি বক্স জব্দ করা হয়। বক্সগুলোর গায়ে ‘মডার্না কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন’ লেখা রয়েছে। পরে এ ঘটনার তদন্ত শুরু করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচির (ইপিআই) সংশ্লিষ্টরা।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ক্যাম্পেইনের টিকা বাসায় এনে মজুত করতেন বিজয় কৃষ্ণ তালুকদার। এক অ্যাম্পুল থেকে ১৪ জনকে টিকা দেয়া হতো। প্রত্যেকের কাছ থেকে নেয়া হতো ৫০০-১০০০ টাকা। এভাবে প্রায় অর্ধশত মানুষের কাছে টিকা বিক্রি করেছেন তিনি। এমনকি টাকার বিনিময়ে যারা টিকা নিয়েছেন, তাদের উৎসাহী করতেন আরো মানুষকে বিষয়টি জানাতে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে বিজয় কৃষ্ণ তালুকদার পুলিশের কাছে স্বীকার করেছেন, ক্যাম্পেইনের দায়িত্ব পাওয়ার পর টিকা বেহাত করার আইডিয়াটি তার মাথায় আসে। ওই ক্যাম্পেইনের টিকাই তিনি সরিয়েছেন। তবে কী পরিমাণ টিকা সরিয়েছেন এবং তার সঙ্গে কতজন জড়িত সে বিষয়ে কোনো তথ্য দেননি তিনি। যেহেতু স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সিটি করপোরেশনের মাধ্যমে ক্যাম্পেইনটি পরিচালনা করছিল, সেক্ষেত্রে সিটি করপোরেশনের স্বাস্থ্য বিভাগের কেউ এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকতে পারে বলে আশঙ্কা করছে পুলিশ।
দরিদ্র পরিবার সেবা সংস্থার পাশের চা দোকানি মো. হুমায়ূন কবির জানান, তিনি ও তার স্ত্রী ৪-৫ দিন আগে বিজয়ের কাছ থেকে মডার্নার টিকা নিয়েছেন। দুজনের জন্য ৫০০ করে ১ হাজার টাকা দিতে হয়েছে। তখন বিজয় কৃষ্ণ তাদের বলেছেন, এটা ভালো ওষুধ (টিকা)। পাওয়া খুব মুশকিল। আর কেউ টিকা দিতে চাইলে তাদের যেন তার কাছে পাঠিয়ে দেয়া হয়।
এদিকে ক্যাম্পেইনের মডার্নার টিকা বাসায় নিয়ে আসা হতো বলে স্বীকার করেছেন বিজয় কৃষ্ণ তালুকদার ছেলে চয়ন। সেগুলো আবার টিকাকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হতো দাবি করে তিনি বলেন, তার বাবা তিনটি কেন্দ্রে করোনার গণটিকা দেয়ার দায়িত্ব পান। প্রথমদিন (৭ আগস্ট) থেকে ৬ দিন কেন্দ্রে গিয়ে টিকা দিয়েছেন। কেন্দ্র থেকে আসার সময় করোনার কিছু টিকা নিয়ে আসতেন, পরের দিন সঙ্গে করে আবার কেন্দ্রে নিয়ে যাবেন বলে। তখন হয়তো কোনোভাবে টিকার খালি বক্স তাদের ক্লিনিকে পড়ে যেতে পারে। আর পুলিশ সেই খালি বক্সগুলোই উদ্ধার করেছে, এছাড়া কোনো অ্যাম্পুল পায়নি বলে চয়নের দাবি।
দক্ষিণখান থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) মো. আজিজুল হক মিয়া ভোরের কাগজকে বলেন, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বিজয় কৃষ্ণ তালুকদারকে গ্রেপ্তারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে বেশকিছু তথ্য পাওয়া গেছে। তবে টিকার উৎস সম্পর্কে এখনো আমরা নিশ্চিত হতে পারিনি। তিনি টিকাগুলো চুরি করেছেন, নাকি টিকাকেন্দ্র থেকে নিয়েছেন সেসব বিষয়ে নিশ্চিত হতে আরেকটু সময় লাগবে। আদালতের নির্দেশে তিনি কারাগারে রয়েছেন। আগামীকাল (সোমবার) তার রিমান্ড শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে। আদালত রিমান্ডের নির্দেশ দিলে জিজ্ঞাসাবাদে সব বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যাবে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচির (ইপিআই) প্রোগ্রাম ম্যানেজার ডা. মওলা বক্স চৌধুরী ভোরের কাগজকে বলেন, মডার্নার টিকা কীভাবে দরিদ্র পরিবার সেবা সংস্থায় গেল তা জানতে আমাদের তদন্ত চলছে। তদন্ত শেষ না হলে কিছুই বলা সম্ভব নয়। তবে কীভাবে তিনি টিকা বেহাত করলেন এবং এর সঙ্গে কে বা কারা জড়িত সবই তদন্তে বেরিয়ে আসবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়