মির্জা ফখরুল : জিয়ার বিরুদ্ধে মিথ্যাচার মানুষ বিশ্বাস করে না

আগের সংবাদ

বিলুপ্তির পথে সোনাগাজীর ঐতিহ্য ‘পানের বরজ’

পরের সংবাদ

ক্লিনিক মালিক কারাগারে :গণটিকা কেন্দ্রের করোনার টিকাই বিক্রি হচ্ছিল সেই ক্লিনিকে

প্রকাশিত: আগস্ট ২০, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ২০, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : সরকারিভাবে দেয়া করোনার টিকা বাইরে বিক্রি ও টিকা দেয়া নিষেধ থাকলেও টাকার বিনিময়ে করোনার টিকা দিয়ে আসছিলেন রাজধানীর দক্ষিণের হাজীপাড়ার ‘দরিদ্র পরিবার সেবা সংস্থার’ (ক্লিনিক) মালিক শ্রী বিজয় কৃষ্ণ তালুকদার (৩৭)। ক্লিনিক ও ফার্মেসির আড়ালে ৭ আগস্ট থেকে ওই এলাকার অর্ধশতাধিক ব্যক্তিকে টিকা দিয়েছেন তিনি। বিনিময়ে কারো কাছ থেকে ৫০০, কারো কাছ থেকে হাজার টাকা নিয়েছেন এলাকাবাসীর কাছে পল্লী চিকিৎসক নামে পরিচিত বিজয় কৃষ্ণ তালুকদার।
আর এই টিকা তিনি গণটিকা দেয়ার জন্য নির্ধারণ করা কেন্দ্র/বুথ থেকে সংগ্রহ করেছেন। কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারাও এই অনিয়মের সঙ্গে জড়িয়েছেন। শুধু করোনার টিকাই নয়; শিশুদের জন্য সরকারিভাবে আসা হাম, পোলিও, পেন্টার মতো টিকাও টাকার বিনিময়ে বছরের পর বছর দিয়ে আসছিলেন বিজয় কৃষ্ণ। রাজধানীর দক্ষিণের হাজীপাড়ার বাসিন্দা ও থানা পুলিশের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য জানা গেছে।
এর আগে গত বুধবার রাতে দক্ষিণখানে বিজয় কৃষ্ণ তালুকদারের মালিকানাধীন দরিদ্র পরিবার সেবা সংস্থা ক্লিনিক এবং তার বাসায় অভিযান চালিয়ে মডার্নার টিকাসহ তাকে গ্রেপ্তার করে দক্ষিণখান থানা পুলিশ। এ সময় দুই অ্যাম্পুল মডার্নার টিকা ও ২০টি খালি বক্স জব্দ করা হয়। বক্সগুলোর গায়ে ‘মডার্না কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন’ লেখা রয়েছে। এদিকে গতকাল বিজয় কৃষ্ণ তালুকদারের ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করে আদালতে পাঠায় পুলিশ। পরে বিশেষ ক্ষমতা আইনে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আবু সাঈদ। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচির (ইপিআই) পক্ষ থেকে বিষয়টি তদন্তের কথা জানানো হয়েছে।
গতকাল দুপুরে দক্ষিণের হাজীপাড়ার বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ৬ আগস্ট সারাদেশে গণটিকা দেয়া শুরু হলে দক্ষিণ ও উত্তরখানের ৪৫, ৪৬ ও ৪৭নং ওয়ার্ডের তিনটি কেন্দ্রে টিকা দেয়ার দায়িত্ব পান বিজয় কৃষ্ণ তালুকদার। তিনি এসব কেন্দ্রে গিয়ে টিকা দিয়ে আসতেন। ৭ আগস্ট লোকমুখে এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে, বিজয়দা করোনার টিকা এনেছে। সবাইকে দিবে। এমন খবরে এলাকার বিভিন্ন বয়স ও পেশা-শ্রেণির মানুষেরা বিজয় কৃষ্ণ তালুকদারের ক্লিনিক দরিদ্র পরিবার সেবা সংস্থায় ছুটে যান। গিয়ে ঘটনার সত্যতাও পান তারা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক নারী বলেন, তারা সাতজন মিলে টিকা দিতে গিয়েছেন। বিজয়দা সবাইকে টিকা দিয়েছে। তার কাছ থেকে কোনো টাকা রাখেনি। তবে তার সঙ্গে যাওয়া বাকি ছয়জন নারীর কাছ থেকে টাকা নিয়েছে কিনা তা তিনি জানেন না। এই সাতজন নারীর টিকা দেয়ার খবর ছড়িয়ে পড়ে। এতে বিজয় কৃষ্ণ তালুকদারের করোনার টিকা দেয়ার বিষয়টি এলাকাজুড়ে প্রচার হয়ে যায়।
তবে বিজয় কৃষ্ণ তালুকদারের ক্লিনিকের পাশের চা দোকানি হুমায়ূন কবির জানান, তিনি ও তার স্ত্রী ৪-৫ দিন আগে বিজয়ের কাছ থেকে করোনার মডার্নার টিকা নিয়েছেন। দুজনের জন্য ৫০০ করে ১ হাজার টাকা দিতে হয়েছে। তখন বিজয় কৃষ্ণ তাদের বলেছেন, এটা ভালো ওষুধ (টিকা)। পাওয়া খুব মুশকিল। আর কেউ টিকা দিতে চাইলে তাদের যেন তার কাছে পাঠিয়ে দেয়া হয়।
দক্ষিণখান থানার ওসি (তদন্ত) আজিজুল হক মিয়া বলেন, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বিজয়কে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ঘটনার সত্যতাও পাওয়া গেছে। তার বিরুদ্ধে বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা হয়েছে, তাকে রিমান্ডে নেয়া হলে বিস্তারিত জানা যাবে।
এলাকাবাসী জানায়, বিজয় কৃষ্ণ তালুকদার শিশুদের হাম, পোলিও, পেন্টাসহ অনেক টিকাও দিতেন। আর এই টিকা ১২ মাসই দিয়ে আসছিলেন। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দক্ষিণখান থানার এসআই মো. আজিজ বলেন, বিজয়কে আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ড চাওয়া হয়েছে। আদালত ২৩ তারিখে শুনানির জন্য রেখেছেন। এদিকে বৃহস্পতিবার বিকালেও বিজয়ের ক্লিনিক ও বাসা থেকে টিকা দেয়ার বিপুল পরিমাণ কার্ড, রেজিস্ট্রেশন ও ভোটার আইডি কার্ড উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানান এসআই আজিজ।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়