কাগজ প্রতিবেদক : আগামী ছয় মাসের মধ্যে দেশীয় প্রযুক্তিতে ওষুধ প্রস্তুতকারী একমাত্র সরকারি প্রতিষ্ঠান এসেনশিয়াল ড্রাগসের মাধ্যমে করোনা ভাইরাসের টিকা উৎপাদন করার জোর সুপারিশ করেছে জাতীয় সংসদের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটি। গতকাল মঙ্গলবার জাতীয় সংসদে অনুষ্ঠিত বৈঠকে এ সুপারিশ করা হয়। একই সঙ্গে টিকা দেয়ার বয়সসীমা কমানোরও সুপারিশ করে কমিটি।
চীনা কোম্পানি সিনোফার্মের তৈরি করোনা ভাইরাসের টিকা বাংলাদেশে এনে বোতলজাতকরণ ও সরবরাহের জন্য বাংলাদেশ সরকার ও ইনসেপ্টা ভ্যাকসিন লিমিটেডের মধ্যে যৌথ চুক্তিতে সই করার পরদিন গতকাল মঙ্গলবার সংসদীয় কমিটির বৈঠকে এ সুপারিশ করা হলো।
বৈঠকে কমিটির সদস্য আ.ফ.ম. রুহুল হক, মুহিবুর রহমান মানিক, মনসুর রহমান, আব্দুল আজিজ, সৈয়দা জাকিয়া নুর এবং আমিরুল আলম মিলন অংশ নেন । বৈঠক শেষে কমিটির সভাপতি শেখ ফজলুল করিম সেলিম সাংবাদিকদের জানান, বৈঠকে দেশীয় কোম্পানি এসেনশিয়াল ড্রাগসের মাধ্যমে জি টুজি পদ্ধতিতে টিকা উৎপাদনের বিষয়টি জোরালোভাবে উঠে এসেছে। আগামী ছয় মাসের মধ্যে এসেনশিয়াল ড্রাগসের মাধ্যমে টিকা উৎপাদন করতে হবে। কমিটি টিকা উৎপাদনের ক্ষেত্রে জিটুজি (সরকারের সঙ্গে সরকারের) চুক্তি করার জন্যও বলেছে।
সংসদীয় কমিটি সূত্রে জানা গেছে, বৈঠকে কমিটির এক সদস্য বলেন, করোনা ভাইরাসের টিকা উৎপাদন নিয়ে যাতে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের লাভের কথা ভাবা না হয়। টিকা আমাদের অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সরকার সর্বাত্মক চেষ্টা করছে। এখানে কোনো মহল যাতে কোনো বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে লাভ দেয়ার চিন্তা না করে। সে বিষয়টিকে গুরুত্ব দিতে হবে। সে কারণে কমিটি সরকারি প্রতিষ্ঠান এসেনশিয়াল ড্রাগসের মাধ্যমে জিটুজি পদ্ধতিতে টিকা উৎপাদনের ওপর জোর দেয়ার কথা বলেছে।
প্রথমে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের কাছ থেকে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা কোভিশিল্ডের তিন কোটি ডোজ কেনার জন্য গত বছরের শেষ দিকে চুক্তি করেছিল বাংলাদেশ। সেই টিকার প্রথম চালান পাওয়ার পর ৭ ফেব্রুয়ারি সারাদেশে গণটিকাদান শুরু হয়। কিন্তু সেরাম ইনস্টিটিউট দুই চালানে ৭০ লাখ ডোজ পাঠানোর পর ভারত রপ্তানি বন্ধ করে দিলে টিকার সংকটে পড়ে বাংলাদেশ। এর পরে জরুরিভাবে দেশে সিনোফার্ম ও রাশিয়ার স্পুৎনিক-ভি টিকার অনুমোদন দেয়া হয়। চীন থেকে কেনার পাশাপাশি দেশে যৌথ উৎপাদনের আলোচনাও তখনই শুরু হয়। বাংলাদেশ সিনোফার্মের কাছ থেকে সাড়ে সাত কোটি ডোজ টিকা কিনবে বলে সরকারের তরফ থেকে জানানো হয়েছে। এর মধ্যে দেড় কোটি ডোজের বিষয়ে চুক্তিও হয়েছে।
গত সোমবার সিনোফার্ম, ইনসেপ্টা ও বাংলাদেশ সরকারের ত্রিপক্ষীয় চুক্তির আওতায় চীন থেকে বাল্ক টিকা এনে বাংলাদেশে ভায়ালে ভরা এবং লেবেলিংয়ের কাজটি করবে ইনসেপ্টা। তাদের কাছ থেকে সরকার সেই টিকা কিনে নেবে।
সব ঠিক থাকলে ‘মাস তিনেকের মধ্যে’ ইনসেপ্টা দেশে কোভিড টিকার কাজ শুরু করতে পারবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। তিনি বলেন, সরকারিভাবেও আমরা টিকার যৌথ উৎপাদন করব। সে বিষয়ে উদ্যোগ নিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইতোমধ্যে আমাদের নির্দেশ দিয়েছেন।
যদিও এর আগে গত জুন মাসে সংসদীয় কমিটির বৈঠকে সরকারিভাবে টিকা উৎপাদনের বিষয়ে আলোচনা হয়। ওই বৈঠকের কার্যপত্র থেকে জানা গেছে, গত এপ্রিল মাসে যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব শেফিল্ডের গবেষক সানজান কে দাস স্বাস্থ্য সচিবের কাছে সরকারি পর্যায়ে টিকা উৎপাদনের লক্ষ্যে অবকাঠামো তৈরি করতে একটি প্রস্তাব পাঠান। সানজান দাসের টিকা তৈরির প্রযুক্তির আরএনডি ও প্রিক্লিনিক্যাল ট্রায়াল হয়েছে বলে কার্যপত্রে বলা হয়। সরকারি প্রতিষ্ঠান এসেনশিয়াল ড্রাগসের বিদ্যামান কিছু অবকাঠামো এবং নতুন কিছু যন্ত্রপাতি কিনলে টিকা উৎপাদন সম্ভব বলে কার্যপত্রে উল্লেখ করা হয়। বিষয়টির কারিগরি দিক পর্যালোচনার ব্যাপারে মন্ত্রণালয় এখন বিবেচনা করছে বলে জানা গেছে।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।