অক্সিজেন ঘাটতি নিয়ে রওশন এরশাদ আইসিইউতে

আগের সংবাদ

এবার লক্ষ্য কূটনৈতিক জয় : তালেবানের ওপর বাড়ছে আন্তর্জাতিক চাপ >> চ্যালেঞ্জের মুখে ভারত

পরের সংবাদ

বরিশালের চরকাউয়া খেয়াঘাট : দুর্ভোগ পিছু ছাড়ছে না যাত্রীদের

প্রকাশিত: আগস্ট ১৮, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ১৮, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

এম কে রানা, বরিশাল থেকে : বরিশাল নগরীঘেঁষা কীর্তনখোলার চরকাউয়া খেয়াঘাট। দুর্ভোগ নিত্যসঙ্গী এখানকার যাত্রীদের। ৯ বছর আগে তৎকালীন মেয়র খেয়াটি ইজারামুক্ত করার পর ঘাটটির দিকে কোনো নজরদারি নেই বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষের। এ সুযোগে স্থানীয় একটি মহল কৌশলে ঘাটটিতে ধরি মাছ না ছুঁই পানির মতো কৌশলে দখলদারত্ব চালিয়ে যাচ্ছে। ফলে দীর্ঘ বছর কেটে গেলেও ঘাটের উন্নয়ন হয়নি। একদিকে কোনো ধরনের নাগরিক সুবিধা নেই, অপরদিকে নীরব চাঁদাবাজি। ফলে দুর্ভোগ পিছু ছাড়ছে না এ ঘাট দিয়ে যাতায়াতকারী সাধারণ মানুষের।
খেয়ার মাঝি ও বিআইডব্লিউটিএ সূত্র জানিয়েছে, দৈনিক প্রায় অর্ধলাখ মানুষ কীর্তনখোলা পাড়ি দিয়ে নগরীতে আসা-যাওয়া করেন। কিন্তু বিপুল পরিমাণ যাত্রীর জন্য নাগরিক সুবিধার ছোঁয়া নেই এ ঘাটে। নদীভাঙনে ঘাটের অবস্থা বেহাল। সরজমিন গতকাল চরকাউয়া খেয়াঘাটে গিয়ে দেখা যায়, ভাটার সময় নগরীর প্রান্তের ঘাট থেকে পানি প্রায় ৮ ফুট নেমে যাওয়ার পরও গোড়ালি ডুবিয়ে যাত্রীদের ট্রলারে ওঠানামা করতে হচ্ছে। ঘাটের এ প্রান্তে বিআইডব্লিউটিএর জমি দখল করে স্থাপন করা হয়েছে ভ্রাম্যমাণ দোকানপাট। যে কারণে এখানে সব সময়ই জট লেগেই থাকে। অপরদিকে চরকাউয়া প্রান্তে নদীভাঙনের মুখে পড়ায় যাত্রীদের ট্রলারে উঠতে বেগ পেতে হয়।
ভরা বর্ষায় খেয়া পারাপারে সবচেয়ে শঙ্কার বিষয় বেপরোয়া ট্রলার চালানো। দুপুর ১২টায় দেখা গেছে, প্রতি দুই-তিন মিনিটে ট্রলার আসছে আর যাচ্ছে। ট্রলারগুলো ঘাটে ভেড়ানোর সময় একটি আর একটির ওপর বেপরোয়া গতিতে আছড়ে পড়ছে। এতে আতঙ্কিত যাত্রীরা।
ঘাটের মাঝি রাকিব হাওলাদার জানান, তারা সমিতির আওতায় এখানে ট্রলার পরিচালনা করেন। ট্রলার চালানোর কোনো প্রশিক্ষণ নেই। চরকাউয়া খেয়াঘাটের এক মাঝি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ওপারের নেতারা এ ঘাট চালান। টাকা-পয়সা তারাই নেন।
চরকাউয়া মাঝিমাল্লা সমবায় সমিতির সভাপতি ওমর আলী বলেন, খেয়াঘাটে ১০৫ জন মাঝি ও ১৫০ জনের বেশি মাল্লা রয়েছেন। প্রতিদিন ২৫ থেকে ৩০ হাজার মানুষ এই ঘাট থেকে যাত্রা করেন। ৫টি রুটে ডিসিঘাট, গোমা, কাটাদিয়া, নেহালগঞ্জ, লাহারহাট, টুমচর যায় এখান থেকে। তিনি বলেন, তৎকালীন সিটি মেয়র শওকত হোসেন হিরণ ঘাটের ইজারা প্রত্যাহার করে নেন। এরপর আর বিআইডব্লিউটিএ এটির তদারকি করছে না। ঘাটে জনদুর্ভোগ ও ঝুঁকি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, দুর্ঘটনা এড়াতে মাঝিদের সতর্ক করা হয়েছে। ইজারা না নিলেও একটি মহলের এ ঘাট নিয়ন্ত্রণ প্রসঙ্গে তিনি কোনো জবাব দেননি।
স্থানীয় যাত্রী ও মাঝিমাল্লাদের তথ্যমতে, চরকাউয়া খেয়াঘাট থেকে প্রতি মিনিটে একটি করে ট্রলার দুই প্রান্ত থেকে গন্তব্যের উদ্দেশ্যে ছাড়ে। অর্থাৎ ৬০ মিনিটে ১২০টি ট্রলার আসা-যাওয়া করছে। প্রতিটি ট্রলারে ২০ জন করে যাত্রী তোলা হয়। সে হিসাবে এক ঘণ্টায় ২ হাজার ৪০০ মানুষ কীর্তনখোলা পাড়ি দেয়। তথ্যানুযায়ী, এ খেয়াঘাট থেকে ২৪ ঘণ্টায় প্রায় ৫০ হাজার মানুষ পারাপার হন।
জানা যায়, সদর উপজেলার ৬টি ইউনিয়নকে নগরীর সঙ্গে বিচ্ছিন্ন করেছে কীর্তনখোলা। এ ইউনিয়নগুলোর সীমানাঘেঁষা আরো সাতটি ইউনিয়ন আছে যেগুলো বাকেরগঞ্জ উপজেলাভুক্ত। বরিশাল থেকে সড়কপথে ভোলা জেলা ও পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলায় যেতে হয় চরকাউয়া খেয়া পাড়ি দিয়ে। এসব কারণে এ খেয়াঘাটে ২৪ ঘণ্টা যাত্রী পারাপার চলে। এসব যাত্রী নিয়ন্ত্রণ করে চরকাউয়ার ওপারের এক প্রভাবশালী জনপ্রতিনিধি ও তার অনুসারীরা।
বিআইডব্লিউটিএর নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের সহকারী পরিচালক শহিদুল ইসলাম বলেন, ২০১২ সালে চরকাউয়া খেয়াঘাট উন্মুক্ত করে দেয়া হয়। ওই ঘটনায় প্রতি বছর তাদের ঘাটের জন্য অডিট অবজেকশন দিতে হয়। তার দাবি, খেয়া তাদের দখলে নেই। ইজারা না হলেও একটি পক্ষ তো যাত্রীদের কাছ থেকে ভাড়া নিচ্ছে। ওই টাকা সরকারি কোষাগারে যায় না, ব্যক্তিপর্যায়ে চলে যায়। তিনি বলেন, বরিশাল নৌবন্দর সম্প্রসারণের লক্ষ্যে বিশ্বব্যাংকের একটি প্রকল্প অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। যাতে পন্টুন সম্প্রসারণ হবে। খেয়াঘাট দক্ষিণে চলে যাবে। তখন খেয়া সরাতেই হবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়