অক্সিজেন ঘাটতি নিয়ে রওশন এরশাদ আইসিইউতে

আগের সংবাদ

এবার লক্ষ্য কূটনৈতিক জয় : তালেবানের ওপর বাড়ছে আন্তর্জাতিক চাপ >> চ্যালেঞ্জের মুখে ভারত

পরের সংবাদ

বন্ড ও বিল বিক্রি করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক : অলস অর্থে বেকায়দায় ব্যাংকিং খাত

প্রকাশিত: আগস্ট ১৮, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ১৮, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

মরিয়ম সেঁজুতি : করোনা মহামারির মধ্যে প্রণোদনার ঋণ ছাড়া ব্যাংকের নিয়মিত ঋণ বিতরণে তেমন অগ্রগতি নেই। এ কারণে প্রতি মাসেই বেসরকারি খাতের ঋণের প্রবৃদ্ধি কমছে। ফলে ব্যাংকগুলো আমানত হিসেবে যা নিয়ে রেখেছে, তা অলস পড়ে আছে। আর এর সঙ্গে প্রতি মাসেই রেমিট্যান্সের অর্থ যুক্ত হচ্ছে। এতে ব্যাংকগুলোতে অলস টাকার পাহাড় জমে গেছে। বর্তমানে ব্যাংকগুলোতে প্রায় ২ লাখ ৩১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা জমা আছে। আর একেবারেই অলস পড়ে আছে ৬২ হাজার ৫০০ কোটি টাকার মতো। একই সঙ্গে বাজারে বেশি টাকা চলে যাওয়ায় তা মূল্যস্ফীতি বাড়ার ঝুঁকিও তৈরি করে। এই অবস্থায় ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে অলস টাকা তুলে নিতে বিভিন্ন ‘বন্ড’ ও ‘বিল’ নিলামে বিক্রির উদ্যোগ নেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ইতোমধ্যে কয়েক দফায় ‘বাংলাদেশ ব্যাংক বিল’-এর নিলাম অনুষ্ঠিত হয়েছে। এর বাইরে ৫ বছর ও ৩০ দিন মেয়াদি বন্ডেরও নিলাম করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। কিন্তু নামমাত্র সুদ হার নির্ধারণের কারণে ব্যাংকগুলোর আগ্রহ নেই এ বিনিয়োগে। যদিও গত সোমবার ৭ ও ১৪ দিন মেয়াদি বিলে ৪ হাজার ৬৯০ কোটি টাকা বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা রাখতে ব্যাংকগুলো আবেদন করে। কিন্তু এদিন নিলাম ডেকেও শেষ পর্যন্ত এক টাকাও নেয়নি কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
জানা গেছে, বাজার থেকে টাকা তুলতে বেশ কয়েকটি মাধ্যম ব্যবহার করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এগুলো হলো- রিভার্স রেপো, ‘বাংলাদেশ ব্যাংক বিল’ ও নগদ জমার হার (সিআরআর)। এর মধ্যে প্রথম ২টির মাধ্যমেই ব্যাংকগুলোর সুদ আয় বেশি হয়ে থাকে। বর্তমানে রিভার্স রেপোর সুদ হার ৪ শতাংশ। আর ‘বাংলাদেশ ব্যাংক বিলের’ সুদ হার বাজার চাহিদার ভিত্তিতে নির্ধারিত হয়। তবে তা কলমানির সুদ হারের চেয়ে কিছুটা কম।
বর্তমানে ৭, ১৪ ও ৩০ দিন মেয়াদি ‘বাংলাদেশ ব্যাংক বিল’ চালু রয়েছে। এর মানে ‘বাংলাদেশ ব্যাংক বিলের’ মাধ্যমে সর্বোচ্চ ৩০ দিনের জন্য ব্যাংকগুলো কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভল্টে টাকা জমা রাখতে পারবে। বর্তমানে প্রণোদনার ঋণ ছাড়া নতুন ঋণ চাহিদা নেই বললেই চলে। মহামারির মধ্যেও গত অর্থবছরে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স বেড়েছে ৩৬ দশমিক ১০ শতাংশ। এসব কারণেই ব্যাংকগুলোতে অতিরিক্ত টাকা জমা হয়েছে।
সর্বশেষ হিসাবে, জুন শেষে এই অর্থের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৩১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৬২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা একেবারেই অলস; অর্থাৎ এই টাকা থেকে কোনো ধরনের সুদ বা মুনাফা পাচ্ছে না ব্যাংকগুলো। বাকি টাকায় কেনা হয়েছে বিভিন্ন বিল ও বন্ড। অনেক ব্যাংক অলস টাকার অপব্যবহার করছে বলেও অভিযোগ আছে।
সম্প্রতি কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ বিষয়ে ২টি সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ‘বাংলাদেশ ব্যাংক বিল’ ছেড়ে অলস টাকা তুলে নেয়ার পাশাপাশি আমানতের সুদ হার মূল্যস্ফীতির হারের চেয়ে কম হতে পারবে না বলে জানিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংক মনে করছে, তারা অতিরিক্ত টাকা তুলে নিলে ব্যাংকগুলো আবার আমানত সংগ্রহে আগ্রহী হবে। ইতোমধ্যে কয়েক দফায় ‘বাংলাদেশ ব্যাংক বিল’ নিলাম করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। চলতি মাসেই আরো ৪টি নিলাম হওয়ার কথা রয়েছে। এর মধ্যে ৭ ও ১৪ দিন মেয়াদি বিলের ওপর ২টি নিলাম হবে আগামী ২৫ আগস্ট। অন্যদিকে ৩০ দিন মেয়াদি বিলের পরের ২টি নিলাম হবে ২৩ ও ৩১ আগস্ট।
জানা গেছে, গত ১১ আগস্ট বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো ৩০ দিন মেয়াদে ‘বাংলাদেশ ব্যাংক বিলে’ যে বিনিয়োগ করেছে, তাতে সুদ হার দশমিক ৫৪ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। অর্থাৎ ৬০৭০ কোটি টাকা বিনিয়োগে ব্যাংকগুলো মুনাফা করবে ২ কোটি ৭৩ লাখ ১৫ হাজার টাকা। এর আগে ৯ আগস্ট ৭ ও ১৪ দিন মেয়াদি বিলের নিলাম হয়। সাত দিন মেয়াদি বিলে ব্যাংকগুলো বার্ষিক শূন্য দশমিক ৫৪ শতাংশ সুদে বিনিয়োগ করে ১ হাজার ৫০৫ কোটি টাকা। ব্যাংকগুলো এ বিলের বিপরীতে সুদ হিসেবে আয় করে ১৫ লাখ ৬২ হাজার ৮৮৪ কোটি টাকা। ১৪ দিন মেয়াদি বিলে বিনিয়োগ করা হয় ১ হাজার ১০০ কোটি টাকা। এই বিলের সুদ হার নির্ধারণ করা হয় শূন্য দশমিক ৭৫ শতাংশ। এ বিলের বিপরীতে ব্যাংকগুলো সুদ হিসেবে আয় করবে ৩১ লাখ ৭৩ হাজার ৭৬ টাকা।
সব মিলিয়ে প্রথম দিনের নিলামে ২ হাজার ৬০৫ কোটি বিনিয়োগ করে ব্যুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুাংকগুলো ৪৭ লাখ ৩৫ হাজার ৯৬০ টাকা মুনাফা করেছে। গত সোমবার নিলাম ডেকেও শেষ পর্যন্ত এক টাকাও নেয়নি কেন্দ্রীয় ব্যাংক। যদিও ৭ ও ১৪ দিন মেয়াদি বিলে ৪ হাজার ৬৯০ কোটি টাকা বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা রাখতে ব্যাংকগুলো আবেদন করে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি বেসরকারি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ভোরের কাগজকে বলেন, ব্যাংকগুলোতে প্রচুর উদ্বৃত্ত তারল্যের এ সময়ে ব্যক্তি পর্যায়ের আমানতে মূল্যস্ফীতির কম সুদ না দেয়ার নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এ পরিস্থিতিতে বাজারে সুদ হার বাড়ানোর বিকল্প নেই। বাংলাদেশ ব্যাংক বিলের নিলামের পর আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে সুদ হার সামান্য বাড়তির দিকে ছিল। আবার একেবারে ফেলে না রেখে সেখান থেকেও সামান্য হলেও সুদ আসছিল। তবে গত সোমবার বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়ে দেয়, এক টাকাও নেয়া হবে না। শেষ সময়ে না জানালে ব্যাংকগুলো আন্তঃব্যাংক কলমানি বা রেপোতে খাটাতে পারত।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক সিরাজুল ইসলাম ভোরের কাগজকে বলেন, নিলাম ডাকলেই বাজার থেকে টাকা তুলতে হবে এমন কোনো কথা নেই। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাজার পরিস্থিতি যাচাইয়ের জন্য নিলাম ডাকতে পারে। এর মাধ্যমে বাজারে কী পরিমাণ তারল্য আছে, কোন ব্যাংকে বেশি উদ্বৃত্ত অর্থ রয়েছে এসব বোঝা যায়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলেন, বর্তমানে আন্তঃব্যাংক কলমানিতে সর্বনি¤œ সুদ ১ শতাংশ এবং আন্তঃব্যাংক রেপোতে শূন্য দশমিক ৭৫ শতাংশ বার্ষিক সুদ হার নির্ধারিত আছে। সর্বনি¤œ এই সুদে টাকা খাটানোর পরও অধিকাংশ ব্যাংকের কাছে অলস টাকা থাকছে। বাংলাদেশ ব্যাংক তো এই টাকা বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহার করবে না। ফলে যেটুকু সুদ পাওয়া যাচ্ছে, তাতেই ব্যাংকগুলো খুশি।
সর্বশেষ ২০১৯ সালের ৩ জানুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংক বিলের নিলাম অনুষ্ঠিত হয়। ওই দিন একটি ব্যাংক মাত্র শূন্য দশমিক শূন্য ২ শতাংশ তথা ২ পয়সা সুদে সাত দিনের জন্য ১৫০ কোটি টাকা রেখেছিল। এরপর থেকে নিলাম বন্ধ ছিল।
বাজারে তারল্য বেড়ে যাওয়ায় সম্প্রতি সব ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীকে চিঠি দিয়ে নিলামের বিষয়টি অবহিত করা হয়। এর আগে ২৯ জুলাই চলতি অর্থবছরের মুদ্রানীতি ঘোষণায় বাংলাদেশ ব্যাংক জানায়, অতিরিক্ত তারল্য আর্থিক খাতে বুদ্বুুদ্ তৈরি করলে তা তুলে নেবে বাংলাদেশ ব্যাংক। অতিরিক্ত তারল্যের কারণে মূল্যস্ফীতি বা সম্পদের দাম বেড়ে গেলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক নতুন নীতি গ্রহণে দ্বিধা করবে না।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়