বিজিএমইএ : সব স্থলবন্দর দিয়ে ইয়ার্ন আমদানির সুযোগ দাবি

আগের সংবাদ

করের আওতায় আসছেন ব্যাংকের কার্ডধারীরা!

পরের সংবাদ

পঞ্চগড়ে ঐতিহ্যবাহী ভাদর কাটানি উৎসব

প্রকাশিত: আগস্ট ১৭, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ১৭, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

পঞ্চগড় প্রতিনিধি : স্বামীর মঙ্গল কামনায় পঞ্জিকা মতে ১ ভাদ্র থেকে ঐতিহ্যবাহী ভাদর কাটানি উৎসব শুরু হয়েছে। আবহমানকাল থেকে বাঙালির ঐতিহ্যবাহী এই উৎসব পালন করার জন্য শ্রাবণ মাস শেষ হওয়ার আগেই নববধূরা দলে দলে শ্বশুর বাড়ি থেকে বাবার বাড়িতে এসেছেন। নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে ভাদর কাটানি উৎসব গ্রামের বাড়িতে বাড়িতে চলছে।
উত্তরাঞ্চলের প্রচলিত রীতি ও জনশ্রæতি অনুযায়ী ভাদ্র মাসের প্রথম ৩ থেকে ৭ দিন স্বামী নববধূর মুখ দর্শন করলে তার চোখ অন্ধ হয়ে যায় এবং স্বামীর অকল্যাণ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই বিয়ের পর প্রথম পাওয়া ভাদ্র মাসের ৩ থেকে ৭ দিন বাপের বাড়িতে অবস্থান করেন নববধূরা। তবে এর কোনো দালিলিক প্রমাণ না থাকলেও যুগ যুগ ধরে এই এলাকার মানুষ এসব আচার অনুষ্ঠান পালন করে আসছেন। প্রাচীনকাল থেকে আজো এই উৎসব পালিত হয়ে আসছে। রীতি অনুযায়ী নববধূরা এই সময় সাধারণত বাবার বাড়িতে অবস্থান করেন এবং স্বামীর মঙ্গল কামনা করেন।
ভাদর কাটানি উৎসব উপলক্ষে পঞ্চগড়ের ঘরে ঘরে ভিন্ন আমেজ বিরাজ করছে। এরই মধ্যে অধিকাংশ নববধূ স্বামীর বাড়ি থেকে বাবার বাড়িতে চলে গেছেন। এই প্রবণতাটি শহরের চেয়ে গ্রামাঞ্চলে একটু বেশি। নববধূরা তাদের স্বামীর মুখ দর্শন করবেন না ভাদ্র মাসের প্রথম ৩ থেকে ৭ দিন। তাই নববধূরা তাদের স্বামীর বাড়ি থেকে এই ৩ থেকে ৭ দিনের জন্য বাবার বাড়িতে বেড়াতে যান।
গত বছরের আশ্বিন মাস থেকে এ বছরের শ্রাবণ মাস পর্যন্ত যাদের বিয়ে হয়েছে তাদের নিয়েই মূলত এই আয়োজন। বিয়ের পর স্বামী-স্ত্রীর জীবনে প্রথম ভাদ্র মাসের প্রথম তিন দিন বা সাত দিন স্ত্রী স্বামীর মুখ দর্শন করলে স্বামীর চোখ অন্ধ হয়ে যাবে বা অমঙ্গল, ঝগড়া-বিবাদসহ তাদের দাম্পত্য জীবন সুখের হবে না- এমন বিশ্বাস থেকে উত্তরাঞ্চলজুড়ে শ্রাবণ মাসের শেষ ৭ দিন নববধূরা মা-বাবার বাড়িতে বেড়াতে যাওয়া শুরু করেন। এটাকে স্থানীয় ভাষায় বলে ভাদর কাটানি। এ উৎসবটি পালনে নববধূদের বাড়িতে পড়ে যায় সাজ সাজ রব। থাকে নানা আয়োজন। নববধূরা যে কতদিন বাবার বাড়িতে অবস্থান করবে, সে কতদিন তারা সামর্থ্য অনুযায়ী মেয়েকে ভালো-মন্দ খাওয়াবে। প্রচলিত এ প্রথাটি যুগ যুগ ধরে এ অঞ্চলে এভাবেই চলে আসছে। তবে কবে থেকে কীভাবে এই প্রথার শুরু তার সঠিক তথ্য কেউ নিশ্চিত করে বলতে পারে না। নববধূকে আনতে তার ছোট ভাই, বোন, বান্ধবী, নানি, চাচি, ফুফু ও প্রতিবেশীরা যাবেন বরের বাড়িতে। সঙ্গে নিয়ে যাবেন সাধ্যমতো মুড়ি, পায়েস, নারিকেলসহ নানা রকমের ফল, মিষ্টান্ন খাবার। কেউ ভাদ্র মাসের আগের দিন আবার কেউ কয়েকদিন বাকি থাকতেই যান বরের বাড়িতে। বরপক্ষ সাধ্যমতো তাদের আপ্যায়ন করে। নববধূরা মা-বাবার বাড়িতে তিন দিন বা সাত দিন থাকেন। এরপর বরপক্ষের লোকজনও কনেকে আনতে যান। তারা তাদের সাধ্যমতো ফল, মিষ্টি, পায়েস, মুড়ি, মুড়কি, দই ইত্যাদি নিয়ে যান।
স্থানীয় প্রবীণ লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রাচীন এ লোকাচার তারা দেখে আসছেন। এই উৎসবটি উত্তরাঞ্চলের সংস্কৃতির সঙ্গে মিশে আছে। কেউ কেউ এটাকে কুসংস্কার বললেও সামাজিক রীতির ভাদর কাটানি স্থানীয় লোকরা শ্রদ্ধার সঙ্গে পালন করে আসছেন।
জেলার সদর উপজেলার মাগুড়া ইউনিয়নের বারইপাড়া এলাকার অনীল চন্দ্র রায়ের মেয়ে অঞ্জনা রানীর শ্রাবণ মাসের ২৮ তারিখ বিয়ে হয়েছে উপজেলার ধাক্কামারা ইউনিয়নের মালাদাম এলাকার দ্বিগেন চন্দ্র রায়ের ছেলে শরনাথ চন্দ্র রায়ের সঙ্গে। ভাদর কাটানি উৎসবের অংশ হিসেবে অঞ্জনা গেছেন বাবার বাড়িতে।
অঞ্জনা বলেন, বিয়ের পর ভাদর কাটানি পালন করতে বাবার বাড়ি এসেছি। অনেকেই বলে এটা কুসংস্কার, তারপরও আমাদের পূর্বপুরুষরা এটা করে এসেছে। তাছাড়া বিয়ের দুদিনের মাথায় বাবার বাড়িতে আসতে পেরে বেশ ভালোই লাগছে। কেন না আমাদের ধর্মীয় রীতিতে বিয়ে হলে সাধারণত ৮ দিনের আগে কেউ বাবা বাড়ি যায় না। সে কারণে খুবই ভালো লাগছে।
পঞ্চগড়ের স্কুলশিক্ষক তপন কুমার রায় বলেন, ভাদর কাটানি হলো আমাদের সমাজের প্রাচীন একটি প্রথা। এটা লোকাচার হলেও আমাদের সমাজ ও সংস্কৃতিকে সমৃদ্ধ করেছে। এ উৎসব আমরা জন্ম থেকেই দেখে আসছি। তবে এই উৎসব মুসলমানদের চেয়ে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা বেশি গুরুত্ব দিয়ে পালন করে বলে জানান তিনি।
ভাদর কাটানি নিয়ে নানা মানুষের নানা মত থাকলেও এটি উত্তরাঞ্চল তথা পঞ্চগড় জনপদের একটি সমৃদ্ধ সংস্কৃতির বার্তা বহন করে। বাংলার নারী হৃদয়ে পতিভক্তির এই সংস্কৃতি এ অঞ্চলের নারীদের যেমন উজ্জ্বল করেছে তেমনি সমৃদ্ধ করেছে আবহমান কালের সংস্কৃতি। দাম্পত্য জীবনে শান্তি কামনায় ঐহিত্যবাহী এ উৎসবে পঞ্চগড় জনপদের ঘরে ঘরে নববধূকে বাবার বাড়িতে বরণ করা হয়েছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়