সবুজ বাংলাদেশকে সবুজতর করার আহ্বান আইজিপির

আগের সংবাদ

হুমকির মুখে রোহিঙ্গা জাতিসত্তা : বিশ্বব্যাংক ও জাতিসংঘের প্রস্তাব নিয়ে কূটনৈতিক বিশ্লেষকদের অভিমত

পরের সংবাদ

রাজধানীর শাহ আলী কলেজ : অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে সোয়া কোটি টাকা লোপাটের অভিযোগ

প্রকাশিত: আগস্ট ১৩, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ১৩, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : বৈদ্যুতিক মালামাল না কিনেও বিল-ভাউচার দেখানো, শিক্ষকদের আয়কর না দিয়েও আয়কর দেয়া হয়েছে বলে দেখানো এবং ভ্যাট দেয়ার নাম করে গত সাত অর্থবছরে কলেজ থেকে এক কোটি ২৩ লাখ ২৩ হাজার ৬২৯ টাকা ‘মেরে’ দিলেন রাজধানীর মিরপুরের হজরত শাহ আলী কলেজের অধ্যক্ষ ময়েজ উদ্দিন। ২০১৩-১৪ থেকে ২০১৯-২০ অর্থবছরের মধ্যে এসব টাকা ‘মারার’ ঘটনা ঘটে বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্ত প্রতিবেদনে বেরিয়ে এসেছে। এই টাকা অধ্যক্ষ কলেজের কাজে নগদে খরচ হয়েছে বলে জানালে ‘প্রবিধান মালা ২০০৯’-এর নির্দেশনার পরিপন্থি। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি দেয়ার পাশাপাশি অধ্যক্ষকে মেরে দেয়া টাকা সরকারি কোষাগারে ফেরত দেয়ার কথা তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। গত বছরের ১৭ থেকে ১৯ অক্টোবর কলেজটিতে তদন্ত চালায় সরকারি এই সংস্থা এবং গত ৩১ মার্চ প্রতিবেদনটি দাখিল করেন তদন্তকারীরা।
শুধু ওই কলেজের অধ্যক্ষই নয়, আরো কয়েকজন শিক্ষকের কুকীর্তির কথাও তদন্ত প্রতিবেদনে বেরিয়ে এসেছে। একজন অফিস সহকারীও কলেজ থেকে পৌনে দুই লাখ টাকা মেরে খেয়েছেন বলে তদন্ত কমিটি প্রমাণ পেয়েছে। শিক্ষক-শিক্ষিকা, শিক্ষক-ছাত্রী, শিক্ষক-ছাত্রীর মায়ের মধ্যে যৌনাচারসংক্রান্ত ঘটনা থাকলেও তা কলেজ অধ্যক্ষের কক্ষে সালিশি সভায় শেষ হয়েছে বলে তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
নথিপত্র ঘেঁটে দেখা গেছে, ২০১২ সালে রাজধানীর এই কলেজে অধ্যক্ষ পদে যোগ দেন ময়েজ উদ্দিন। যোগ দেয়ার পরের বছর থেকেই টাকা সরানোর ‘ধান্দা’ শুরু করেন বলে অভিযোগ উঠতে থাকে। ময়েজ উদ্দিন শুধু এই কলেজেই নয়, আগে যে কলেজে ছিলেন অর্থাৎ নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ জিআর ইনস্টিটিউশনে নিয়ম ভেঙে অধ্যক্ষ

থাকাকালে পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণির ছাত্রছাত্রীদের বৃত্তির টাকা এফএসএসপির উপবৃত্তির টাকাও মেরে খেয়েছেন। সেবারও ডিআইএ তদন্তে অধ্যক্ষ ময়েজ উদ্দিন দোষী সাব্যস্ত হয়েছিলেন। এরপর শিক্ষা মন্ত্রণালয় তাকে শোকজ করে। একইসঙ্গে তার এমপিও বাতিল করে নয় লাখ আট হাজার ১২৫ টাকা সরকারের কোষাগারে ফেরত দেয়ার নির্দেশ দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। সব মিলিয়ে যখন যে কলেজে গুণধর এই অধ্যক্ষ দায়িত্বে ছিলেন তখনই টাকা মেরেছেন বলে নানা অভিযোগ এবং সরকারি তদন্তে বেরিয়ে এসেছে।
জানতে চাইলে অধ্যক্ষ ময়েজ উদ্দিন ভোরের কাগজকে বলেন, ভুল তথ্যের ভিত্তিতে ডিআইএ হজরত শাহ আলী কলেজ নিয়ে আমার বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন তৈরি করেছে। তদন্ত প্রতিবেদনে প্রায় সোয়া কোটি টাকা মেরে দিয়েছেন বলে যে অভিযোগ করা হয়েছে সে বিষয়ে তিনি বলেন, এই টাকা আত্মসাৎ করা হয়নি। আমি এ বিষয়টি সংশোধনের জন্য কাজ শুরু করেছি। তিনি বলেন, ডিআইএ তদন্ত প্রতিবেদনের ওপর ‘ব্রডশিটে’ জবাব দিতে হয়। আমি সেই ব্রডশিটে টাকা আত্মসাৎ হয়নি বলে জবাব দেব। ভ্যাটের টাকা ফেরত দেয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ব্রডশিটে জবাব দেয়ার পর আমাকে কত টাকা দিতে হবে তা মন্ত্রণালয় জানাবে। মন্ত্রণালয় জানানোর পরই আমি টাকা ফেরত দেব। নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ জিআর ইনস্টিটিউশনের অধ্যক্ষ থাকাকালে উপবৃত্তির টাকা মেরে খাওয়ার অপরাধেও আপনাকে প্রথমে শোকজ ও এমপিওর টাকা ফেরত দেয়ার নির্দেশ দিয়েছিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সেবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশের পর আমি উচ্চ আদালতে গিয়েছিলাম। আদালত আমার পক্ষে রায় দিয়েছিল। এরফলে আমার এমপিও টিকে যায়। এবারো এমন কিছু ঘটলে তিনি আদালতে যাবেন বলে জানান।
কলেজের নথিপত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে ডিআইএর তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কলেজের বিভিন্ন মালামাল কেনার জন্য ২০১৮ সালের জানুয়ারি মাসে অধ্যক্ষ একটি ক্রয় কমিটি গঠন করেন। কিন্তু মালামাল কেনা হলেও মালামাল সরবরাহকারীর নামে চেক ইস্যু করা হয়নি। ক্রয় কমিটির নামে চেক দেয়া হয়। ক্রয় কমিটি চেকের বিপরীতে ব্যাংক থেকে টাকা তুলে মালামাল সরবরাহকারীদের দেয়। তবে এই ধারাটিও আর্থিক বিধির পরিপন্থি। কলেজের সব দায়দেনা ক্রসড চেকের মাধ্যমে পরিশোধ করতে হবে। কিন্তু এক্ষেত্রে তা মানা হয়নি।
তদন্ত প্রতিবেদনে এও বলা হয়েছে, ২০১৬-১৭, ১৭-১৮ এবং ১৯-২০ অর্থবছরের ভ্যাটবাবদ ছয় লাখ ২৭ হাজার ১৪৮ টাকা ট্রেজারি চালানের মাধ্যমে সরকারি কোষাগারে জমা দিতে অধ্যক্ষকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, কলেজ থেকে ৩৫ হাজার ৫০০ টাকার বৈদ্যুতিক মালামাল দোকান থেকে কলেজের নামে কেনা হয়েছে বলে অধ্যক্ষ তদন্ত কমিটিকে জানান। কিন্তু তদন্তে দেখা গেছে ২৭ হাজার ৬০ টাকার মালামাল কেনাই হয়নি বলে দোকান কর্তৃপক্ষ তদন্ত কর্মকর্তাকে জানান। এতে তদন্ত কমিটি বলেছে, মালামাল না কিনেও কেনার কথা বলা এবং তা প্রমাণ না হওয়ায় এই টাকা আত্মসাৎ হয়েছে। এছাড়াও শিক্ষকদের সম্মানী বণ্টনেও আয়কর না দিয়েও দেখানো হয়েছে আট লাখ ৬২ হাজার ১৫৮ টাকা আয়কর দেয়া হয়েছে। এই টাকাটিও সরকারি কোষাগারে ফেরত দেয়ার জন্য অধ্যক্ষকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়