সবুজ বাংলাদেশকে সবুজতর করার আহ্বান আইজিপির

আগের সংবাদ

হুমকির মুখে রোহিঙ্গা জাতিসত্তা : বিশ্বব্যাংক ও জাতিসংঘের প্রস্তাব নিয়ে কূটনৈতিক বিশ্লেষকদের অভিমত

পরের সংবাদ

মডেল পৌরসভায় রূপান্তরের লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি : আলহাজ আব্দুল গনি মেয়র, সাভার পৌরসভা

প্রকাশিত: আগস্ট ১৩, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ১৩, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

মো. আজিম উদ্দিন, সাভার (ঢাকা) থেকে : সাভার পৌরসভার কার্যক্রম শুরু হয় ১৯৯২ সালের ১৬ মার্চ। ১৪ দশমিক ৮ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এ পৌরসভাকে প্রথম শ্রেণিতে উন্নীত করা হয় ১৯৯৭ সালে। সাভার পৌরসভার কার্যক্রম ৩০ বছর পেরিয়ে গেলেও এখানে সমস্যার শেষ নেই। অপরিকল্পিত নগরায়ণ ও বাড়িঘর নির্মাণ, আবাসিক এলাকায় কলকারখানা, সংস্কারবিহীন খানাখন্দেভরা রাস্তাঘাট, পানি সরবরাহের ব্যবস্থা না থাকা, প্রয়োজনীয় ড্রেন ও ডাস্টবিনের অভাব, ময়লা-আবর্জনা ও কলকারখানার বিষাক্ত বর্জ্যরে কারণে নাজুক পরিস্থিতি সাভার পৌর এলাকার।
সাভার বাজার বাসস্ট্যান্ডের কাঁচাবাজার এলাকায় ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের ওপর ফেলা হয় ময়লা-আবর্জনা। এতে নোংরা হয় মানুষের চলাচলের জন্য ব্যবহৃত গুরুত্বপূর্ণ এ মহাসড়ক। এজন্য মহাসড়কে যানবাহন চলাচলে যেমন বাধার সৃষ্টি হয়, তেমনি ময়লা-আবর্জনার পচা দুর্গন্ধে যাত্রী-পথচারীদের পোহাতে হয় দুর্ভোগ। গৃহস্থালির ব্যবহার্য বিপুল পরিমাণ ময়লা-আবর্জনা প্রতিদিন রাস্তায় জমা হচ্ছে এবং পরে সেগুলো পৌরসভার ময়লার ভ্যানে ভরে নিয়ে ফেলা হচ্ছে রাজাশনের অস্থায়ী ডাম্পিং স্টেশনে।
ভোরের কাগজের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে সাভার পৌরসভার মেয়র আলহাজ আব্দুল গনি বলেন, আমি পরপর দুবার সাভার পৌরসভার মেয়র পদে নির্বাচন করে জয়ী হয়েছি। প্রথমবার নির্বাচিত হওয়ার পর পৌর এলাকায় সরকারের উন্নয়নমূলক কাজের গতি দেখে দ্বিতীয়বার নির্বাচনে জয়ী হতে বেগ পেতে হয়নি। ঘনবসতিপূর্ণ সাভার পৌর এলাকায় সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে ড্রেনেজ ব্যবস্থা। সাভার শিল্পাঞ্চল হওয়ায় এই এলাকায় অধিক লোকের বসবাস। প্রতিদিন ২০০ টন আবর্জনা সৃষ্টি হয় পৌর এলাকায়। তিনি বলেন, পৌরসভাকে পরিকল্পিত নগরে গড়ে তুলতে সম্মিলিতভাবে সবার

সহযোগিতা প্রয়োজন। আমি দায়িত্ব গ্রহণ করার পর আমার সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল সুষ্ঠু বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিশ্চিতকরণ। সে লক্ষ্যে দৈনিক হাজিরা ভিত্তিতে প্রায় ২৫৬ জন শ্রমিক দিয়ে পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ করানো হচ্ছে। পৌরসভার ৯টি গার্বেজ ট্রাকের মধ্যে চারটি অচল। সচল পাঁচটি গার্বেজ ট্রাক ও ৭৫টি ভ্যান দিয়ে পৌর এলাকার বর্জ্য ব্যবস্থাপনা পরিচালনা করা হয়। চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল হওয়ায় বিভিন্ন দপ্তরে ১৬টি গার্বেজ ট্রাক ও এক্সক্যাভেটর ও একটি পে-লোডার বরাদ্দ চেয়ে আবেদন করা হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, ২০১৫ সালে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করে জয়ী হয়েছি। আমি যখন পৌরসভার দায়িত্বভার গ্রহণ করি, তখন পৌরসভার ছিল বিধ্বস্ত অবস্থা। একটি জনবহুল এলাকা যেখানে লাখ লাখ লোকের বসবাস, হাজারো সমস্যা নিয়ে আমি মেয়রের দায়িত্ব নেই। তবে বর্তমান সরকারের প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার যে উন্নয়ন সারা দেশে, সেই উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় সাভার পৌরসভায় উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে সমর্থ হয়েছি। এর জন্য আমি প্রধানমন্ত্রী এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমানকে ধন্যবাদ জানাই। সরকারের সার্বিক সহযোগিতায় সাভার পৌরসভা একটি মডেল পৌরসভায় রূপান্তরিত হচ্ছে। আগে পৌরসভার যে নাজুক অবস্থা ছিল গত পাঁচ বছরে তার আমূল পরিবর্তন হয়েছে।
মেয়র বলেন, পৌর এলাকায় এমন কোনো ওয়ার্ড নেই, যেখানে ড্রেন ও আরসিসি রাস্তার কাজ করা হয়নি। আমি মনে করি ৮০ পার্সেন্ট সমস্যা সমাধান করতে পেরেছি। অল্প কিছু কাজ আমার এখনো বাকি আছে। এছাড়া জনকল্যাণমূলক কাজে সব সময়ই নিয়োজিত আছি। পৌরসভার কাউন্সিলরদের সঙ্গে নিয়ে প্রতিটি ওয়ার্ডে মশক নিধন কার্যক্রম চালু রয়েছে। পৌর এলাকার ড্রেনের ময়লা পরিষ্কার করার জন্য পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা দিন-রাত কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। ময়লা-আবর্জনা অপসারণ করার জন্য পর্যাপ্ত গাড়ি ও লোকবলের প্রয়োজন, তা পৌরসভার নেই। তাই সরকারের কাছে আমার আবেদন সুষ্ঠু ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট করতে পারমানেন্ট ডাম্পিং স্টেশনের জন্য একটি জমি বরাদ্দ দিলে এই সমস্যার আশু সমাধান হয়ে যাবে। এই ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্টের সমস্যা সমাধান করতে পারলেই সাভার পৌরসভা হবে বাংলাদেশের একটি মডেল পৌরসভা।
এই করোনা সময়েও পৌরসভার অর্থায়ন ছাড়াও ব্যক্তিগত উদ্যোগে গরিবদের পাশে আছি, সার্বক্ষণিকভাবে তাদের আমরা সহযোগিতা করে যাচ্ছি। আমরা আশা করব আগামীতেও এ উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখব।
সাভারের শিল্পাঞ্চলের আবর্জনাগুলো ব্যাংক টাউনের উলাইলে রাস্তার পাশে ফেলছেন এলাকার গার্মেন্টস মালিকরা। পৌরসভার পক্ষ থেকে তাদের বারবার নিষেধ করার পরও তারা ওই এলাকাটা আবর্জনার স্তূপে পরিণত করছে। সাভার পৌরসভার এখন মূল সমস্যা ওয়েস্ট ডাম্পিং। এই বিষয়ে ফিনল্যান্ডের একটা কোম্পানির সঙ্গে আলাপ-আলোচনা অব্যাহত রয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে জায়গা বরাদ্দ হলেই ডাম্পিংয়ের সব ব্যবস্থা করে দেবে বলে আমাকে আশ্বস্ত করেছে ফিনল্যান্ডের ওই কোম্পানি।
পৌরসভা থেকে প্রতি বছর কুরবানির গরুর হাট ইজারা দিতে হয়। কিন্তু পৌরসভার নিজস্ব জমি না থাকায় হাটের জন্য বেসরকারিভাবে জমি ভাড়া নিতে হয়। সাভার পৌর এলাকার ৩নং ওয়ার্ডের বনপুকুরে অব্যবহৃত পুকুর বা জলাশয় রয়েছে। কিছু মাটি ভরাট করলেই কুরবানির গরুর হাট বসানো যেত এবং পুকুরের পাশে একটি হকার্স মার্কেটও করা সম্ভব। পৌর এলাকার হকার্সদের দীর্ঘদিনের দাবি একটি হকার্স মার্কেট স্থাপন। সরকারের পক্ষ থেকে যদি এই খাস পুকুর বা জলাশয় পৌরসভাকে বরাদ্দ দিত, তাহলে পৌরবাসী উপকৃত হতো। কার্যকর পৌরসভা গড়ে তুলতে সম্মিলিতভাবে সবার সহযোগিতা প্রয়োজন। সবার অংশগ্রহণে সুন্দর ও পরিকল্পিত নগরায়ণ করা সম্ভব বলে আমি মনে করি।
তিনি আরো বলেন, সুবিধাবঞ্চিত, দুস্থ মানুষের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে। সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা, মাতৃত্বকালীন ভাতা চালু রয়েছে এবং প্রতি বছর মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা দেয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। পৌর এলাকার বাড়িওয়ালারা পরিবেশবান্ধব ছাদ বাগান করলে ১০ শতাংশ পৌর কর মওকুফেরও ব্যবস্থা রাখা হয়েছে বলে তিনি জানান। জলাবদ্ধতা দূর করে, ময়লা-আবর্জনা পৌরসভার নিজস্ব ডাম্পিং স্টেশনে ফেলতে পারলেই সাভার পৌরসভা হবে গ্রিন সাভার, ক্লিন সাভার। দুঃখ-দুর্দশা ঘুচবে পৌরবাসীর, রূপান্তরিত হবে মডেল পৌরসভা হিসেবে। এ লক্ষ্য নিয়েই কাজ করে যাচ্ছি।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়