সবুজ বাংলাদেশকে সবুজতর করার আহ্বান আইজিপির

আগের সংবাদ

হুমকির মুখে রোহিঙ্গা জাতিসত্তা : বিশ্বব্যাংক ও জাতিসংঘের প্রস্তাব নিয়ে কূটনৈতিক বিশ্লেষকদের অভিমত

পরের সংবাদ

ফেসবুক এবং শিক্ষা

প্রকাশিত: আগস্ট ১৩, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ১৩, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

বর্তমানে সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় গণমাধ্যমে পরিণত হয়েছে ফেসবুক। সেই সঙ্গে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে ইউটিউব ও বিভিন্ন ইউটিউব টিভি চ্যানেলসহ ইন্টারনেটের টুইটার, মেসেঞ্জার, হোয়াটসআপসহ বেশ কিছু ব্যবস্থা। এই ব্যবস্থাগুলো ধারণ করার বা ব্যবহার করার মতো কতটুকু নৈতিক শিক্ষা আছে এদেশের মানুষের। তাও নির্ধারণ করা দরকার। কারণ এসব কিছুর ব্যবহার করার কারণে সমাজে বাড়ছে অনৈতিকতা। নেটের অপব্যবহারের ফলে সামাজিক অশান্তি সৃষ্টি হচ্ছে। অশান্তির এমন রূপ নিয়েছে যে, ফেসবুকের স্ট্যাটাস নিয়ে মারামারিসহ সৃষ্টি হয় সাম্প্রদায়িক সহিংসতা। রামু, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, রংপুরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ফেসবুকের স্ট্যাটাসকে কেন্দ্র করে ঘটেছে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ। ফেসবুককে কেন্দ্র করে ঘটা সহিংস ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছে অনেক মানুষ। সুতরাং এই জনপ্রিয় মাধ্যমটি নিয়ন্ত্রণ ও মনিটরিংয়ের ব্যবস্থাটা খুবই জরুরি। রাজশাহী মহানগরীর এক ফেসবুক ব্যবহারকারী একজনের স্ট্যাটাসকে অপব্যাখ্যা দেয়ায় সৃষ্টি হয়েছে ভয়াবহ সামাজিক বিবাদ। ওই ফেসবুক ব্যবহারকারীর কোনো মৌলিক শিক্ষা নেই। আর ফেসবুক ব্যবহার করে নিজেকে তিনি শিক্ষিত মনে করেন। যে ব্যক্তিটি এই ফেসবুক ব্যবহারকারীর কথা শুনে কোমর বেঁধে ঝগড়া শুরু করেছেন। তার ফেসবুকে কোনো আইডি নেই। কারণ সে ফেসবুকটা ব্যবহার করতে জানে না এবং ইন্টারনেট সম্পর্কে তার কোনো প্রকার জ্ঞান নেই। কান নিয়ে গেছে চিলে- এই বলে যেভাবে চিলের পেছনে দৌড়ানোর একটি প্রবাদ রয়েছে, ঠিক তেমনটি ঘটেছে এই অর্ধশিক্ষিত ব্যক্তিটির। বর্তমানে দেখা যাচ্ছে, এ ধরনের অশিক্ষিত গোয়ার মানুষগুলোকে ফেসবুক ব্যবহারকারীরা বিভিন্নভাবে ব্যবহার করে সমাজের শান্তিশৃঙ্খলা বিনষ্ট করছে এবং নিজেদের হীনস্বার্থ সিদ্ধি করে চলেছে। তাই ফেসবুকের অপব্যাখ্যাকারীকে ৫৭ ধারার আলোকে শাস্তি দেয়ার ব্যবস্থা করা দরকার। ধর্মচর্চার অন্যতম কেন্দ্রে এখন ফেসবুক। বর্তমানে ধর্মীয় কিছু বিষয় ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে ফেসবুকে। ধর্মীয় মৌলিক জ্ঞান নেই অর্থাৎ ধর্ম সম্পর্কে নিজেই কিছু জানে না, অথচ ফেসবুক ব্যবহারের বদৌলতে কেউ কেউ হয়ে উঠছে মহাধার্মিক। ফেসবুকের মাধ্যমে এ ধরনের ব্যবহারকারী মৌলবাদী ব্যক্তিদের ভুল ও উগ্র ওয়াজ শুনে থাকে। আর এ ধরনের ওয়াজে প্রলুব্ধ হয়ে এ রকম অর্ধশিক্ষিতরা সমাজে সৃষ্টি করছে ধর্মীয় বিভেদ। একজন এমপিওভুক্ত কলেজের শিক্ষককে দেখা গেছে, শিক্ষা কী? বা শিক্ষার সংজ্ঞাটা সে ভালো করেই জানে না, অথচ ওই কলেজ শিক্ষককেও দেখা যায়, ফেসবুক, ইউটিউব থেকে প্রাপ্ত ভুল তথ্য নিয়ে নিরীহ মানুষকে ভিন্ন পথে প্রবাহিত করতে। নেটে কৃষিবিষয়ক নানা তথ্য পরিবেশন করা হয়। এই কৃষিবিষয়ক তথ্যগুলো কতটা সঠিক তা যাচাই করার কোনো কর্তৃপক্ষ নেই। তাই অনেক ভুল তথ্য দেয়া থাকে কৃষিবিষয়ক বিভিন্ন পেজে আর এই ভুল তথ্যের কারণে কৃষি সম্পর্কিত বিষয়গুলোতে সৃষ্টি হয় নানা জটিলতা। যেমন তৈল বীজ তার একটি উদাহরণ। রাই বা সরিষার গুণগতমান সম্পর্কিত তথ্য দেখা যায় ফেসবুকে। রাই বা সরিষার এই দুটোর মধ্যে কতটুকু পার্থক্য রয়েছে তা নিরূপণ করার মতো জ্ঞান নেই, এমন ব্যক্তিকেও দেখা যায়, রাই সরিষা সম্পর্কে মানুষকে জ্ঞান দিচ্ছেন যার একটি বিরূপ প্রভাব পড়ে কৃষি বিষয়ে। এ ধরনের কৃষিবিষয়ক অনেক শস্য সম্পর্কিত ভুল তথ্য দেখা যায় নেটের বিভিন্ন মাধ্যমে। ফেসবুকের যথাযথ নিয়ন্ত্রণ না থাকার কারণে নিজস্ব স্বার্থ হাসিলের জন্য অসাধু ব্যক্তিরা খুলছেন ফেইক আইডি। আর এই ফেইক আইডির মাধ্যমে ভুল তথ্য এবং পর্নোগ্রাফি ত্বরিত প্রবাহের ন্যায় ছড়িয়ে পড়ছে। এ রকম তথ্যগুলোর যাচাই করার মতো শিক্ষা শতকরা ৭০ ভাগ ফেসবুক ব্যবহারকারীরই নেই। আর এই কারণে মৌলবাদ, অপসংস্কৃতি সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঢুকে পড়ছে। ফলে নানা বয়সি মানুষ জড়িয়ে পড়ছেন নানা ধরনের অপকর্মে। যার জন্য সামাজিক ও পারিবারিক অশান্তি দিন দিন বাড়ছে। ঘটছে সামাজিক মূল্যবোধ এবং নৈতিকতার অবক্ষয়।
ফেসবুক এখন সেলিব্রেটি তৈরির একটি কারখানায় পরিণত হয়ে গেছে। টিকটকের মাধ্যমে নিজের ছবি প্রদর্শন করে অন্যের কণ্ঠের গান নিজে গেয়ে রাতারাতি হয়ে যায় অনেকেই জনপ্রিয়। করোনা টিকার অপব্যবহারসহ নানা বিষয়ে চালানো হয়েছে বিভিন্ন রকমের অপপ্রচার। আর এ ধরনের অপপ্রচারে সাড়া দিয়ে অসংখ্য মানুষ লাইক ও কমেন্ট করেছেন। তার কারণ ৭০ ভাগ ফেসবুক ব্যবহারকারীই প্রকৃত শিক্ষা নেই। তারা নিজেরা কি মূল্যায়ন করতে পারে প্রকৃত বিষয়টা কী? তাই তারা এ ধরনের স্ট্যাটাসে লাইক কমেন্ট করতে দ্বিধা করে না। ঈদে কোরবানির পশু নিয়ে দেখা গেছে নানা ধরনের অভিনব স্ট্যাটাস এবং ব্যাখ্যা, যা পবিত্র ইসলাম ধর্মের কোথাও নেই। অথচ কোরবানির পশু নিয়েও হয়েছে হারাম-হালাল বিষয়ক প্রশ্ন উঠতে দেখা গেছে। তাছাড়া পর্নোগ্রাফিতে ভিডিওতে ছেয়ে গেছে নেটের বিভিন্ন মাধ্যম। এর ফলে উঠতি বয়সি তরুণ-তরুণীরা বিপথগামী হচ্ছে প্রতিনিয়ত। বর্তমানে দেশের কিশোর গ্যাং নেটেরই উৎপাদিত ফসল। ফেবুকের যত অপব্যবহার থাকুক না কেন, তারপরও ফেসবুক মানুষের জীবনের একটি অপরিহার্য বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফেসবুকের ব্যবহার তো আর বন্ধ করা যাবে না। তাই সরকারের উচিত ফেসবুকের সামগ্রিক ব্যবস্থাটা নিয়ন্ত্রণে আনা। এর ব্যবহৃত স্ট্যাটাস নিয়ে যারা অপব্যাখ্যা দেয় তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা। এর জন্য কিছু নিয়ম বেঁধে দেয়া উচিত যেমন-
ফেসবুক ব্যবহারকারীর ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা নির্ধারণ করা। ২. ব্যবহারকারীরা কোনো ধরনের তথ্য নিজ ফেসবুকে স্ট্যাটাস হিসেবে দিতে পারবে তার সুস্পষ্ট বৈশিষ্ট্যগুলো বরে দেয়া। ৩. ফেসবুক আইডি খুলতে সঠিক ঠিকানা বাধ্যতামূলক করা। ৩. প্রতিটি আইডিতে ভোটার আইডি কার্ডের নম্বর প্রদর্শন করা। ভোটার আইডি কার্ড ছাড়া কেউ ফেসবুকে আইডি খুলতে পারবে না এই নিয়মটা করা। ৪. ধর্মীয় সংক্রান্ত বিষয়ে কোনো তথ্য ফেসবুক বা নেটের কোনো মাধ্যমে উপস্থাপনের পূর্বে ধর্ম মন্ত্রণালয় কর্তৃক অনুমতি নেয়া। (ইউটিউব, ইউটিউব চ্যানেলসহ সর্ব ক্ষেত্রে)। ৫. ফেসবুককে ধর্ম চর্চার কেন্দ্রে পরিণত না করা। ৬. ইউটিউব বা ইউটিউব টিভি চ্যানেলগুলোতে ধর্মীয় মৌলবাদী নেতাদের ওয়াজ প্রচার করা বন্ধ করা। ৭. কৃষিবিষয়ক কোনো তথ্য কৃষি তথ্য অধিদপ্তরের অনুমতি ছাড়া উপস্থাপন যাতে না হয় সেদিকে খেয়াল রাখা। ৮. বিভিন্ন উদ্ভিদের উপকারিতার বিষয়ক যে তথ্য ফেসবুকে উপস্থাপন করা হচ্ছে তার সঠিকতা সংশ্লিষ্ট দপ্তর কর্তৃক যাচাই করা এবং ভুল তথ্য পরিবেশনকারীকে আইনের আওতায় আনা। কারণ আজকাল ফেসবুকে দেখা যাচ্ছে যে, একটি গোষ্ঠী নানা ধরনের গাছের পাতা ছালমূল ব্যবহার করলে কী কী রোগ ভালো হয়, এ ধরনের তথ্য পরিবেশন করছেন আর এ রকম তথ্য বিশ্বাস করে সাধারণ মানুষ তা ব্যবহার করে মারাত্মক ক্ষতিকারক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়ছে। ৯. গোমূত্র পান এবং দৈনিক পাঁচবার অজু করলে মাস্ক ব্যবহার না করলেও চলে, এ কথাটিও ছড়িয়েছে ফেসবুকের মাধ্যমে। এর ফলে করোনার মতো প্রাণঘাতী ব্যাধি ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়েছে। সুতরাং এ ধরনের অবৈজ্ঞানিক তথ্য যদি কেউ পরিবেশন করে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়াটা দরকার। ১০. বিভিন্ন ধরনের শরীরিক রোগের উপসর্গের বর্ণনা দিয়ে তা উপশমের জন্য কিছু ওষুধের কথা ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে নেটের মাধ্যমে। আর নেটে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ওষুধ সেবন করে সাধারণ মানুষের মাঝে দেখা দিচ্ছে নানা ধরনের অসুখ। এ রকম বিষয়গুলো সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দেখা প্রয়োজন।
তাই ফেসবুক ব্যবহার সম্পর্কিত সচেতনতামূলক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থার করা দরকার। কারণ প্রতি বছরেই ফেসবুকের অপব্যবহারের কারণে সমাজে নানা ধরনের অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে। আর এ ধরনের অপরাধ নিরসন করতে না পারলে সামাজিক বিশৃঙ্খলা দিন দিন বেড়ে যাবে। তাই সরকারের তথ্য অধিদপ্তরের উচিত সারাদেশে ফেসবুক ব্যবহারের নিয়ম তৈরি করা এবং তা প্রচারের ব্যবস্থা নেয়া।
শাহ মো. জিয়াউদ্দিন : কলাম লেখক।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়