সবুজ বাংলাদেশকে সবুজতর করার আহ্বান আইজিপির

আগের সংবাদ

হুমকির মুখে রোহিঙ্গা জাতিসত্তা : বিশ্বব্যাংক ও জাতিসংঘের প্রস্তাব নিয়ে কূটনৈতিক বিশ্লেষকদের অভিমত

পরের সংবাদ

করোনায় বেসরকারি শিক্ষক সমাজ

প্রকাশিত: আগস্ট ১৩, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ১৩, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

করোনা মহামারি শুরু হওয়ার পরপরই এর প্রথম প্রভাব পড়ে শিক্ষা খাতে, পরে স্বাস্থ্য এবং অর্থনৈতিক খাতে। স্বাস্থ্য খাতের ঝুঁকি কমিয়ে আনার জন্য বিশ্বের নামিদামি বিজ্ঞানী, চিকিৎসকের অক্লান্ত পরিশ্রমে আমাদের গৃহে কার্যকর কয়েক প্রকার টিকা চলে আসে। আমরা কিছুটা হলেও স্বস্তির নিশ্বাস ফেলার সুযোগ পাই। আর অর্থনীতির চাকা চালু রাখার জন্য নেয়া হয় বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপ। সরকারি পর্যায়ে নেয়া হয় বিভিন্ন প্রকার প্যাকেজের সিদ্ধান্ত, বেসরকারি পর্যায়ে শ্রমিকের স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়ে কলকারখানা সচল রাখার অমানবিক পদক্ষেপ। ফলে দ্রুতগতিতে না হলেও ধীরে ধীরে চলতে থাকে আমাদের অর্থের চাকা। আর শিক্ষা খাত! সবার আগে বন্ধ হওয়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সবার শেষে খুলবে। কিন্তু কবে খুলবে ঈশ্বরই জানেন। আমার এই লেখাটি শিক্ষা খাতে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের চালচিত্র নিয়ে।
আমরা বিশ্বাস করি মানুষ মেরুদণ্ডবিশিষ্ট উন্নত শ্রেণির প্রাণী। আর সভ্যতার মেরুদণ্ড হচ্ছে শিক্ষা। করোনার প্রভাবে বাঙালি জাতির ভঙ্গুর মেরুদণ্ড একেবারে বিলীন হওয়ার পথে। শিক্ষার ছিটেফোঁটা এদেশে থাকলেও সুশিক্ষা একেবারে দুর্লভ। এই ভঙ্গুর মেরুদণ্ড মেরামতের যারা কারিগর তাদের হালহকিকত হাল আমলে বড়ই বেহাল। এদেশে শিক্ষক সমাজের অবস্থা এমনিতেই মন্দের শেষ সীমায়। করোনা সংকটের পরিপ্রেক্ষিতে তাদের সামাজিক, পারিবারিক এবং সর্বোপরি আর্থিক দৈন্য প্রকাশযোগ্য নয়। বিশেষ করে বেসরকারি স্কুল-কলেজের শিক্ষকদের জীবন তো একেবারে টিকটিকির চেয়েও নগণ্য। জীবনের অন্যান্য সাধ-আহ্লাদের কথা শিকেয় তুলে রেখে শুধু পরিবারের সদস্যদের মুখে অন্ন তুলে দেয়ার প্রয়োজনে কত শিক্ষক যে পেশা বদল করেছেন তার হিসাব কে রাখবে? পত্রিকার পাতা খুললে যখন সামনে ভেসে আসে একজন প্রধান শিক্ষক অন্যের গরুর খামারে রাখালের কাজ নিয়েছেন। যাদের সামান্য পুঁজি ছিল সেসব শিক্ষক সবজির ব্যবসা শুরু করেছেন। বাংলাদেশে শিক্ষিত মানুষের পেশা বদল করা খুবই কঠিন একটি কাজ। বিশেষ করে শিক্ষক শ্রেণির।
সরকারি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা মানসিক ও শারীরিক দিক থেকে করোনার প্রভাব উপলব্ধি করলেও আর্থিক থেকে তারা কিছুটা হলেও ভালো আছেন। আর এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীরাও বেসরকারি স্কুল-কলেজের শিক্ষকদের তুলনায় ভালোই আছেন। সরকারি এবং এমপিওভুক্ত বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রী আর্থিক দিক বিবেচনায় বেসরকারি নন-এমপিও প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের তুলনায় সুবিধায় আছে। বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জড়িত মালিকপক্ষ ছাড়া সবাই নিদারুণ কষ্টে জীবনযাপন করছে। ছাত্রছাত্রীরা ফুল টিউশন ফি দিচ্ছে কিন্তু কাক্সিক্ষত শিক্ষা পাচ্ছে না। আর শিক্ষকরা অনলাইনে, জুমে যে কোনো উপায়ে শিক্ষার্থীদের ক্লাস নেয়ার সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু মাস শেষে বেতনের সময় কোনো প্রতিষ্ঠানে অর্ধেক, কোথাও এক-তৃতীয়াংশ আর কোথাও বা কোনো বেতনই দেয়া হচ্ছে না। চাকরি হারানোর ভয়ে তারা প্রতিবাদ করার সাহসটুকুও হারিয়ে বসে আছেন। কারণ এখানে একজন শিক্ষকের কথায় দুজন শিক্ষার্থীর টিসি নয়, বরং দুজন শিক্ষার্থীর অভিযোগে একজন শিক্ষকের চাকরি চলে যায়। মালিক সবসময় শিক্ষার্থীবান্ধব হয়, শিক্ষকবান্ধব কিংবা শিক্ষক-শিক্ষার্থীবান্ধব নয়। সরকারের পক্ষ থেকেও এ ব্যাপারে কোনো নীতিমালার প্রয়োগ নেই বললেই চলে। বেসরকারি শিক্ষকসমাজ কতটা মানবেতর জীবনযাপন করছে তার খবর শুধু সংশ্লিষ্ট সমাজ সদস্যরাই জানেন।
নন-এমপিও বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারীদের আর্থিক দৈন্য সামান্য পরিমাণ হলেও ঘুচানোর জন্য সরকারের তরফ থেকে গত বছর কিছু টাকা দেয়া হয়েছিল। শিক্ষকদের ৫ হাজার আর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আড়াই হাজার করে টাকা প্রণোদনা হিসেবে দেয়া হয়। গত বছরের মতো এ বছরও এমন কিছু দেয়ার কথা শোনা গেলেও গুটিকয়েক শিক্ষক ছাড়া অধিকাংশই এ টাকার টিকিটাও দেখতে পাননি। দুই বছরে ১০ হাজার টাকা হলে মাসে কত করে পড়ে তার হিসাব সরকারের মহাহিসাব রক্ষকের হাতেই ছেড়ে দিলাম।
করোনা-উত্তর বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থাকে স্বাভাবিক করার ক্ষেত্রে শিক্ষক-সমাজের ভূমিকা থাকবে অগ্রভাগে। ১০ বছর পিছিয়ে পড়া শিক্ষা খাতকে ২০ বছর পিছিয়ে পড়ার হাত থেকে রক্ষা করার জন্য পরিকল্পিত পদক্ষেপ নেয়ার সময় এখনো আছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মানবিক বোধবুদ্ধির প্রতি বিশেষ অনুরোধ- বেসরকারি শিক্ষকসমাজ বাঁচানোর দিকে একটু মনোযোগ দিন। তা না হলে শিক্ষকতা যে মহান পেশা এ বাক্যটি বাংলা ভাষা থেকে উঠিয়ে দিন। অথবা বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আইন করে বন্ধ করে দিন।

লেখক : একটি বেসরকারি কলেজের
শিক্ষক, ঢাকা।
রবিউল হাসান
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়