সবুজ বাংলাদেশকে সবুজতর করার আহ্বান আইজিপির

আগের সংবাদ

হুমকির মুখে রোহিঙ্গা জাতিসত্তা : বিশ্বব্যাংক ও জাতিসংঘের প্রস্তাব নিয়ে কূটনৈতিক বিশ্লেষকদের অভিমত

পরের সংবাদ

এখনো হিল্লা বিয়ে! তালাকের ফতোয়ায় বিপর্যস্ত এক পরিবার

প্রকাশিত: আগস্ট ১৩, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ১৩, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

পঞ্চগড় প্রতিনিধি : মৌখিক তিন তালাকের জেরে পঞ্চগড়ে এক দম্পতিকে চার মাস ধরে একঘরে করে রেখেছেন সমাজপতিরা। হিল্লা বিয়ে না করায় ওই দম্পতিকে সমাজচ্যুত করে একঘরে রাখেন তারা। ঘটনাটি ঘটেছে জেলার দেবীগঞ্জ উপজেলার ৫নং সুন্দরদিঘী ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের ছলিমনগর গ্রামে।
জানা গেছে, ছলিমনগর গ্রামের আয়নাল হক ও জামিরন বেগম নামে ওই দম্পতি ৩৫ বছর ধরে সংসার করে আসছেন। তাদের চার সন্তান ও নাতি-নাতনি রয়েছে। দরিদ্র ওই পরিবারের টানাটানির সংসার। দিনমজুরি করে সংসার চালান আয়নাল।
৬-৭ মাস ধরে পারিবারিক কারণে তাদের মধ্যে ঝগড়া বিবাদ চলে আসছিল। চার মাস আগে বিবাদের সময় স্ত্রীকে মুখে তিন তালাক দেন স্বামী আয়নাল হক। বিষয়টি জানাজানি হলে ছলিমনগর জামে মসজিদের সভাপতি নাসিরউদ্দিন, সাধারণ সম্পাদক মোমিনুর ইসলাম, সদস্য শাহজাহান আলী, ঈমান আলী, হাফেজ মোস্তফা কামাল, জুলহাস, গফুর আজাদ, সুরমান মেম্বার, আমির চাঁদ, আব্দুর রশিদ, দেলোয়ার হোসেনসহ কয়েকজন সমাজপতি বৈঠক করেন। বৈঠকে সমাজপতিরা অন্য গ্রাম থেকে মুফতি আনোয়ার হোসাইন ও হাফেজ মোস্তফাকে আনেন। তারা ফতোয়া দেন স্ত্রীকে হিল্লা বিয়ে দেয়ার পর আবার বিয়ে করে সংসার করার। এর আগে সংসার এবং একসঙ্গে বসবাস করতে পারবেন না ওই দম্পতি।
এদিকে, স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ভুল বোঝাবুঝির অবসান হলে সমাজপতিদের সিদ্ধান্ত না মেনে খানসামা উপজেলার এক মাওলানার বাসায় গিয়ে বিয়ে করে সংসার শুরু করেন দম্পতি। এতে ফতোয়াবাজরা ক্ষুব্ধ হন। পরে ছলিমনগর জামে মসজিদের সব সদস্যকে ওই দম্পতি ও তার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথাবার্তা বলা নিষেধ করে দেয়া হয়। সেই সঙ্গে তাদের বাড়িতে অন্যদের যাতায়াত, জিনিসপত্র আদান-প্রদান ও হাটবাজারে যাওয়া নিষেধ করা হয়। গ্রামের দোকানিরা ওই পরিবারের সদস্যদের কাছে পণ্য বিক্রি বন্ধ করে দেন। সমাজপতিদের চাপে দুই মাস ধরে ঘরবন্দি হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন তারা। তাদের সঙ্গে যারা যোগাযোগ করবে তাদেরও একঘরে করা হবে এবং ৫০০ টাকা জরিমানা করা হবে বলে হুমকি দেয়া হয়।
এ ঘটনায় ওই দম্পতি গত সোমবার দেবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে ১০ জন সমাজপতির নামে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। সুন্দরদিঘী ইউনিয়ন পরিষদের ৯নং ওয়ার্ডের সদস্য ল²ণ চন্দ্র রায় বলেন, ওই দম্পতির

সংসারে ঝগড়া-বিবাদ হচ্ছিল। তিন মাস আগে স্ত্রীকে তালাক দেন স্বামী। এর পর তারা আবার বিয়ে করে সংসার শুরু করেন। কিন্তু হিল্লা বিয়ে না করায় দুই মাস ধরে তাদের একঘরে করে রাখা হয়েছে। পরে নাসিরউদ্দিন, মোমিনুর রহমান, ঈমান আলী, গফুর আজাদ, আমির চাঁদ, শাহজাহান, আব্দুর রশিদ, দেলোয়ার হোসেনসহ কয়েকজন সমাজপতিকে নিয়ে বসেছিলাম। কিন্তু ইসলামি আইনের কথা বলে তারা হিল্লা বিয়ের পক্ষে মতামত দেন। অনুরোধ করলেও বিষয়টি সমাধান করেননি তারা।
ছলিমনগর জামে মসজিদের সভাপতি নাসিরউদ্দিন ও সাধারণ সম্পাদক মোমিনুর রহমান জানান, মসজিদে অনুষ্ঠিত বৈঠকে সমাজের লোকজনের উপস্থিতিতে মুফতি আনোয়ার হোসাইন, হাফেজ মোস্তফা কামাল ওই দম্পতিকে সমাজচ্যুত করার ঘোষণা দেন।
তারা বলেন, বৈঠকে মুফতি আনোয়ার হোসাইন ও হাফেজ মোস্তফা কামাল ফতোয়া দিয়েছেন, যেহেতু মুখে তালাকের কথা বলেছে, তার মানে তালাক হয়ে গেছে। কাজেই ওই নারীকে হিল্লা বিয়ে দিতে হবে। তার মুখ দেখা যাবে না। বাড়ি থেকে বের করে দিতে হবে। লোকজন তাদের সঙ্গে চলাফেরা করতে পারবে না। 
আয়নাল-জামিরন দম্পতি জানান, বিষয়টি নিয়ে সমাজপতিরা একাধিকবার বৈঠক করেছেন। সর্বশেষ বৈঠকে সমাজপতিরা তাদের আলাদা করেন। ছেলেমেয়ের সঙ্গে তাদের দেখা করতে দেয়া হয়নি। ছেলেমেয়েকে বলা হয়েছিল, মা-বাবার সঙ্গে দেখা কিংবা কথা বললে ৫০০ টাকা জরিমানা করা হবে। পুরো পরিবারকে বিচ্ছিন্ন ও বিপর্যস্ত করে ফেলেছেন সমাজপতিরা। 
ওই দম্পতির বড় ছেলে ওমর ফারুক জানান, আমার আব্বা-আম্মা তাদের ভুল বুঝতে পেরেছে। তারা আবারো এক হয়ে গেছেন। আমি আমার আব্বা-মার সঙ্গে কথা বলতে পারি না। তাদের সঙ্গে কথা বললে নাকি আমাকেও একঘরে রাখা হবে। ৫০০ টাকা জরিমানা করা হবে।
দেবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. প্রত্যয় হাসান বলেন, ওই দম্পতির লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি মীমাংসার জন্য স্থানীয় চেয়ারম্যানকে বলেছি।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়