খুলনায় মন্দির ও প্রতিমা ভাঙচুর : সম্প্রীতি পরিষদ ও বিশিষ্ট নাগরিকদের প্রতিবাদ

আগের সংবাদ

হার্ড ইমিউনিটি কতটা সম্ভব : নতুন নতুন ধরন নিয়ে শঙ্কা >> টিকার সুফল কিছুটা হলেও মিলবে : আশা বিশেষজ্ঞদের

পরের সংবাদ

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কবে খুলতে পারে, জানালেন শিক্ষামন্ত্রী

প্রকাশিত: আগস্ট ১২, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ১২, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : সেপ্টেম্বরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার ব্যাপারে সরকার চিন্তা-ভাবনা করছে বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। গতকাল বুধবার রাজধানীর মিন্টো রোডের বাসভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার সার্বিক প্রস্তুতি নিয়ে কাজ করছে সরকার। তবে এখনই অটোপাসের চিন্তা নয়। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে নভেম্বর-ডিসেম্বরে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষাও নেয়া হবে বলে জানান তিনি।
গত বছরের ৮ মার্চ দেশে করোনা সংক্রমণ ধরা পড়ে। এরপর ১৭ মার্চ থেকে দেশের সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়। পর্যায়ক্রমে এই বন্ধের মেয়াদ দফায় দফায় বাড়ানো হয়। সর্বশেষ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আগামী ৩১ আগস্ট পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে। যদিও এ বছর কয়েকবার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার চেষ্টা করেও করোনা পরিস্থিতির কারণে শেষ পর্যন্ত আর সম্ভব হয়নি। সরকার থেকে বলা হচ্ছে, করোনা প্রতিরোধে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের ভ্যাকসিন দিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া হবে। ইতোমধ্যে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের ভ্যাকসিন দেয়া শুরু হয়েছে।
যেভাবে খোলার পরিকল্পনা : মহামারির কারণে ১৭ মাসেরও বেশি সময় বন্ধ থাকার পর সেপ্টেম্বর মাস থেকে বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের দিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার পরিকল্পনা করছে সরকার। স্কুল পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের আপাতত এ পরিকল্পনা থেকে বাদ রাখা হয়েছে, যদিও নভেম্বর-ডিসেম্বরে এসএসসি পরীক্ষা আয়োজনের চিন্তাও সরকারের রয়েছে। স্কুল পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের এ পরিকল্পনার বাইরে রাখার পেছনে যুক্তি হলো- চলতি শিক্ষাবর্ষ প্রায় শেষ। সেপ্টেম্বরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা হলেও অর্ধ বার্ষিক, বার্ষিক পরীক্ষা নেয়া সম্ভব হবে না।
এরইমধ্যে দুবার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার চিন্তা করেও শেষ পর্যন্ত সরে আসতে হয়েছে সরকারকে। ফলে এবার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো খোলার বিষয়ে আগাম ও আনুষ্ঠানিকভাবে কেউ কিছু বলতে চাইছেন না। তবে যতদূর সম্ভব শিক্ষার্থী, শিক্ষক-কর্মকর্তাদের করোনার টিকার আওতায় আনার চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে। মূলত এই টিকাপ্রদানের ওপর ভিত্তি করেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার পরিকল্পনা করছে সরকার।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সব পরিকল্পনা নির্ভর করছে চলতি মাসে কত সংখ্যক শিক্ষার্থীকে টিকার আওতায় আনা যায় তার ওপর। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার পর স্থগিত থাকা পরীক্ষাগুলো আগে নেয়া হবে। এরই অংশ হিসেবে দুদিন পরপর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচ্ছন্ন করতে প্রতিষ্ঠান প্রধানদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সর্বস্তরের শিক্ষকদের টিকাদান কার্যক্রম দ্রুত এগিয়ে নিতে টাইমলাইন দেয়া হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় আবাসিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের টিকা দেয়ার কাজও চলছে জোরেশোরে।

সম্প্রতি শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি জানিয়েছিলেন, সরকারি পর্যায়ের প্রায় শতভাগ শিক্ষকই টিকা নিয়েছেন। বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের তিন লাখ ৬৩ হাজার ২২২ শিক্ষক-কর্মচারীর মধ্যে টিকা নিয়েছেন দুই লাখ ৭৮ হাজার ৪২৬ জন। বাকি আছেন প্রায় ৮৪ হাজার জন। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৪ হাজারের বেশি শিক্ষক টিকার জন্য নিবন্ধন করেছেন, তাদের মধ্যে টিকা নিয়েছেন ৩০ হাজারের বেশি। আগামী চার-পাঁচ দিনের মধ্যেই সব শিক্ষকই টিকা নিয়ে নেবেন বলে আশা করা হচ্ছে। তিনি আরো জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের এক লাখ ৭৯ হাজার ২৬১ শিক্ষার্থী টিকার জন্য নিবন্ধন করেছেন। এর মধ্যে প্রথম ডোজ টিকা পেয়েছেন ৭৯ হাজার ৯১৪ জন। দ্বিতীয় ডোজ পেয়েছেন ছয় হাজার ৭২ জন।
সরকার মূলত চাইছে প্রথমে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো খুলে আটকে থাকা স্নাতক ও স্নাতকোত্তরের চূড়ান্ত পরীক্ষাগুলো আগে শেষ করা। এরপর আটকে থাকা স্নাতক প্রথম বর্ষ ভর্তি পরীক্ষার দিকে এগুতে চায় সরকার। এরপর কলেজ ও তারপর বিদ্যালয় খুলে দেয়ার চিন্তা রয়েছে সরকারের।
এসএসসি-এইচএসসি শিক্ষার্থীদের টিকায় বাধা এনআইডি : করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হলে নভেম্বরে এসএসসি, ডিসেম্বরে এইচএসসি পরীক্ষা নেয়ার পরিকল্পনার কথা আগেই জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি। তবে এ পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের টিকার আওতায় আনা হবে কিনা সে ব্যাপারটি পরিষ্কার করেননি মন্ত্রী। এ পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) না থাকায় রেজিস্ট্রেশন কার্ড বা ফরম পূরণের নথি দিয়ে ভ্যাকসিন দেয়ার কথা ভাবা হচ্ছে। এ বিষয়টি এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে বলে মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
সরকারের নেয়া সিদ্ধান্ত অনুসারে, আগামী নভেম্বর ও ডিসেম্বরে সীমিত পরিসরে কেবলমাত্র ৩টি নৈর্বাচনিক বিষয়ে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা নেয়া হবে। সরকারের ভাবনা হলো, সেপ্টেম্বরে স্কুল-কলেজ খুলে দেয়া সম্ভব হলে এ দুই পাবলিক পরীক্ষার ৪৪ লাখ পরীক্ষার্থী অন্তত আড়াই থেকে তিন মাস সরাসরি ক্লাস করার সুযোগ পাবে। এতে তাদের শিখন ঘাটতি অনেকটা মেটানো যাবে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মাহবুব হোসেন এ প্রসঙ্গে জানান, মন্ত্রণালয় থেকে সম্প্রতি চিঠি দিয়ে প্রতি দুদিন অন্তর বিদ্যালয় ও মহাবিদ্যালয় ক্যাম্পাস, ক্লাসরুম পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে রাখতে বলা হয়েছে। এ ব্যাপারে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রধানদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তারা সেটি করছেন। ভ্যাকসিন কার্যক্রমও চলছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কবে খোলা হবে তা আগাম বলতে চাই না। পরিস্থিতি যখনই অনুকূলে আসবে তখনই ঘোষণা দেয়া হবে।
বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের টিকা দেয়ার কার্যক্রমও চলছে। আবাসিক শিক্ষার্থীদের টিকা দেয়া শেষ করার পর অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের টিকা দেয়া হবে। এছাড়াও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের টিকা নেয়ার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়