খুলনায় মন্দির ও প্রতিমা ভাঙচুর : সম্প্রীতি পরিষদ ও বিশিষ্ট নাগরিকদের প্রতিবাদ

আগের সংবাদ

হার্ড ইমিউনিটি কতটা সম্ভব : নতুন নতুন ধরন নিয়ে শঙ্কা >> টিকার সুফল কিছুটা হলেও মিলবে : আশা বিশেষজ্ঞদের

পরের সংবাদ

আন্তর্জাতিক যুব দিবস আজ : তরুণদের উন্নয়নে প্রয়োজন গুণগত শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা

প্রকাশিত: আগস্ট ১২, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ১২, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

মরিয়ম সেঁজুতি : তরুণরাই বিশ্বব্যাপী পরিবর্তনের নেতৃত্ব দিচ্ছে। তরুণদের ক্ষমতায়ন এবং উদ্ভাবনী সমাধানগুলো চালানোর জন্য তাদের সমর্থন করা উচিত যা তাদের সম্প্রদায়ের অভিযোজিত ক্ষমতা উন্নত করবে। ‘খাদ্য ব্যবস্থার রূপান্তরকরণ : মানবস্বাস্থ্য এবং গ্রহসংক্রান্ত উন্নয়নে যুবসমাজের উদ্ভাবন’ এ প্রতিপাদ্যে আজ বৃহস্পতিবার পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক যুব দিবস। এ বছর আন্তর্জাতিক যুব দিবস কার্যত জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা এবং শিশু ও যুবদের জন্য ইউরোপিয়ান ইয়ুথ ফান্ডের সঙ্গে অংশীদারত্বের মাধ্যমে ডেসা দ্বারা আয়োজিত হবে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, টেকসই উন্নয়ন ও ভবিষ্যতের নেতৃত্ব থাকবে এ তরুণদের হাতে। এ বিশালসংখ্যক তরুণের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের জন্য প্রয়োজন গুণগত শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা।
মূলত, তারুণ্যের বিকাশ ও উন্নয়নে ১৯৯৮ সালে পর্তুগালের রাজধানী লিসবনে অনুষ্ঠিত জাতিসংঘের ‘ওয়ার্ল্ড কনফারেন্স অব মিনিস্টার রেসপনসিবল ফর ইয়ুথ’ ১২ আগস্টকে ‘আন্তর্জাতিক যুব দিবস’ হিসেবে উদযাপনের প্রস্তাব করে। ১৯৯৯ সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে দিনটিকে ‘আন্তর্জাতিক যুব দিবস’ হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত হয়। সেই থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে দিনটি পালন করা হচ্ছে। বাংলাদেশের ‘জাতীয় যুবনীতি’ অনুসারে ১৮ থেকে ৩৫ বছর বয়সিদের ‘যুব’ বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। এ হিসাবে মোট জনসংখ্যার এক-তৃতীয়াংশই যুব জনতা। বর্তমান বিশ্বে ১০ থেকে ২৪ বছর বয়সের মধ্যে ১৮০ কোটি (১ দশমিক ৮ বিলিয়ন) তরুণ-তরুণী রয়েছেন যা এ যাবৎ নবীন মানুষের সর্ববৃহৎ জনসংখ্যা। আর বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৩০ শতাংশই তরুণ।
করোনাকালে দেশের অর্থনীতি হয়েছে বিধ্বস্ত। বিপর্যস্ত হয়েছে বিশেষ করে নি¤œ আয়ের মানুষ। আর এর অনিবার্য প্রভাবে বাল্যবিবাহের মতো সামাজিক ব্যাধির প্রসার ঘটেছে। ফলে যুবসমাজের বড় একটি অংশ ক্ষতিগ্রস্তÍ হয়েছে। গত ১১ মার্চ বেসরকারি সংগঠন মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের (এমজেএফ) এক গবেষণায় বলা হয়, ২০২০ সালে করোনার সাত মাসে দেশের ২১ জেলার ৮৪ উপজেলায় ১৩ হাজার ৮৮৬টি বাল্যবিবাহ হয়েছে। ‘বাল্যবিয়ের অবস্থা দ্রুত বিশ্লেষণ : করোনাকাল ২০২০’ শীর্ষক এ জরিপটিতে বলা হয়েছে, করোনাকালে নি¤œ আয়ের মানুষ নানা ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছে। এসব চ্যালেঞ্জের মধ্যে ছিল আয় হারানো, ক্ষুদ্র ব্যবসা ধ্বংস ইত্যাদি। আর এতে মারাত্মক বিপর্যয়ের মুখে পড়ছে নারীর প্রজনন স্বাস্থ্য। বাল্যবিবাহের মতো সমস্যা বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি করোনাকালে বেড়েছে নারী নির্যাতনও। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে প্রতিবেদনে আলাদাভাবে করোনা মহামারির মধ্যে সর্বশেষ ১২ মাসে স্বামী বা সঙ্গীর হাতে নারীর শারীরিক বা যৌন নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। এ তালিকায় ১৬তম অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। করোনাকালে দেশে ২৩ শতাংশ নারী নির্যাতনের শিকার হয়েছেন।
করোনাকালে দেশে জনসংখ্যার হার কাক্সিক্ষত মাত্রার চেয়ে বেড়েছে। জন্মনিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ায় গত বছর প্রায় ২ লাখ ৩৫ হাজার অতিরিক্ত শিশুর জন্ম হয়। আন্তর্জাতিক সংস্থা ইউএনউইমেনের গত বছরের জুন মাসে প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, ৫১ দশমিক ৭ শতাংশ নারী তাদের স্বাস্থ্য পরিচর্যার সামগ্রীর অপ্রতুলতার কথা বলেছেন, বিশেষ করে নারীপ্রধান পরিবারের কাছে এ সমস্যা প্রকট। ‘কোভিড-১৯ বাংলাদেশ: র‌্যাপিড জেন্ডার অ্যানালিসিস’ শিরোনামে ওই গবেষণাটি ছিল জেন্ডার ইন হিউম্যানিটারিয়ান অ্যাকশন ওয়ার্কিং গ্রুপ নামের একটি জোটের উদ্যোগ। নি¤œ বা স্বল্প আয়ের নারীরা কীভাবে তাদের মাসিককালীন ব্যবস্থাপনা করছেন তা জানতে গত বছরের মে মাসে আন্তর্জাতিক সংস্থা ওয়াটারএইড বাংলাদেশ একটি গুণগত গবেষণা করে। তাতে দেখা যায়, নি¤œ আয়ের নারীদের মাসিককালীন স্বাস্থ্য পরিচর্যার ক্ষেত্রে করোনার প্রভাব প্রকট।
অবস্টেট্রিক্যাল এন্ড গাইনোকোলজিক্যাল সোসাইটি অব বাংলাদেশের (ওজিএসবি) সাবেক সভাপতি রওশন আরা বেগমের মতে, করোনাকালে গর্ভপাতের সংখ্যাও বেড়ে গেছে। বেড়েছে ঘরে সন্তান জন্ম দেয়ার হার। এসবের প্রভাব নারী স্বাস্থ্যের ওপর পড়েছে। মাসিককালীন স্বাস্থ্য পরিচর্যার ক্ষেত্রে যে সমস্যা সৃষ্টি হয়েছিল এরও দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব আছে। তবে তা কতটা পড়েছে তা বলার মতো পর্যাপ্ত গবেষণা আমাদের হাতে নেই।
পরিবার পরিকল্পনা নিয়ে মিডিয়া এডভোকেসি কার্যক্রম পরিচালনা করছে টিম এসোসিয়েটস। এই প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা পুলক রাহা বলেন, পরিবার পরিকল্পনায় সরকারের সাফল্য অনেক। তবে করোনাকাল সেই অর্জন ও কাক্সিক্ষত লক্ষ্যমাত্রা অর্জনকে আরো কঠিন করে তুলেছে। সে কারণে পরবর্তী লক্ষ্যমাত্রা অর্জন গতিশীল করার জন্যই সরকার, বেসরকারি এনজিও, গণমাধ্যম ও তৃণমূল পর্যায়ের স্থানীয় নেতৃত্ব সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে। তিনি বলেন, আইনি সংস্কারের পাশাপাশি ব্যাপক সামাজিক, সাংস্কৃতিক এবং অর্থনৈতিক পরিবর্তনে সহায়ক পদ্ধতির বিকাশের মাধ্যমে স্বাস্থ্য, পুষ্টি, শিক্ষায় মেয়ে শিশুর প্রবেশাধিকার সুরক্ষিত এবং উন্নীত করতে হবে। যুবসমাজ মানেই ছেলেমেয়ের সমান অংশীদারত্ব, এটি সর্বজনস্বীকৃত হতে হবে।
তাহলেই যুবসমাজের অংশগ্রহণে জাতিগত উন্নয়ন নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়