নির্ধারণ হবে আশুরার তারিখ : জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির সভা বসছে আজ

আগের সংবাদ

সংক্রমণ ঠেকানোর কৌশল কী

পরের সংবাদ

শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টা মামলা : মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ১০ আসামির বিরুদ্ধে পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ

প্রকাশিত: আগস্ট ১০, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ১০, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টার মামলায় ১০ জঙ্গির মৃত্যুদণ্ড বহালের বিষয়ে হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ হয়েছে। আদালত রায়ে বলেছেন, ষড়যন্ত্রকারী সব আসামি তালেবানি কায়দায় এ ধরনের ঘটনা সংঘটনের জন্য মুফতি হান্নানসহ অন্য আসামিদের দায়িত্ব দিয়েছিল। গতকাল সোমবার বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিম ও বিচারপতি মো. বদরুজ্জামানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চের স্বাক্ষরের পর ৮৬ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায়টি প্রকাশ হয়।
রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত বলেছেন, উদ্ধারকৃত বোমা দুটি এতই শক্তিশালী ছিল যে, এ দুটির একটিও বিস্ফোরিত হলে এক কিলোমিটার ব্যাসার্ধ এলাকা পর্যন্ত বিধ্বস্ত হয়ে যেত এবং সংশ্লিষ্ট এলাকাটি মানুষের মৃত্যুপুরীতে পরিণত হতো। শুধু তাই নয়, এ বোমা বিস্ফোরিত হলে ঘটনাস্থলসহ ওই এলাকায় ৯ ফুট ৫ ইঞ্চি মাটির গভীরে আঘাত হানত এবং মাটি হতে ওই ধ্বংসস্তূপ ৩৪ ফুট উপরের দিকে ধাবিত হতো।
এরূপ ধ্বংসলীলা প্রায়ই আফগানিস্তানে সংঘটিত হয়ে থাকে। যেখানে গিয়ে মুফতি হান্নানসহ ষড়যন্ত্রকারীদের কেউ কেউ প্রশিক্ষণ নিয়েছিল এবং তালেবানদের পক্ষে যুদ্ধ করেছিল। সেজন্যই ষড়যন্ত্রকারী সব আসামি তালেবানি কায়দায় এ ধরনের ঘটনা সংঘটনের জন্য মুফতি হান্নানসহ অন্য আসামিদের দায়িত্ব দিয়েছিল। উদ্ধারকৃত বোমা দুটি পরীক্ষা করেছে সেনাবাহিনীর একটি বিশেষজ্ঞ দক্ষ দল। এ দুটি বোমার যে কোনো একটি বিস্ফোরিত হলে ষড়যন্ত্রকারীদের প্রত্যাশা অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট এলাকায় স্থাপিত সরকারি-বেসরকারি বাসভবন, স্কুল-কলেজ ও বহু গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাসহ আগত জনসমাগমের মারাত্মক ক্ষতি সাধিত হতো, যা বিশেষজ্ঞ দলের রিপোর্টে উল্লেখ রয়েছে। এতে করে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ভোররাতে বিভীষিকাময় ঘটনার মধ্য মহান স্বাধীনতার স্থপতি এবং সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার পরিবারের সদস্যরা শহীদ হওয়ার কারণে এ সার্বভৌম দেশটি যতটুকু পিছিয়ে গিয়েছিল, ঠিক আবারো অনুরূপ একটি ঘটনার অবতারণা হতো। আদতে এ দেশটি দুর্ভাগা এ কারণে যে, জাতির পিতাকে সপরিবারে বিনা দোষে নির্মম ও নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করেছিল ঘাতকের দল। দুনিয়ার কোনো সভ্য দেশে এভাবে সপরিবারে জাতির পিতাকে হত্যার ঘটনা বিরল। কাজেই এ মামলায় সংঘটিত ঘটনাকে কোনোভাবেই হালকা করে দেখার অবকাশ নেই।
হাইকোর্ট বলেন, এখন প্রশ্ন হচ্ছে এ ধরনের ভয়াবহ কর্মকাণ্ড আসামিরা করতে চেয়েছিল কেন? সাক্ষীদের সাক্ষ্য এবং আসামিদের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, আগে উল্লিখিত কতিপয় আসামি ঢাকাস্থ মোহাম্মদপুর ও মুগদাপাড়া অফিসে মিটিং করেছিল। ওই মিটিংয়ে তারা মতামত প্রকাশ করে, আওয়ামী লীগ সরকার ইসলামবিদ্বেষী এবং ভারতের দালাল হিসেবে ইসলাম ধ্বংসের কাজে লিপ্ত। সুতরাং তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তার সরকারকে উৎখাত করতে হবে হত্যার মধ্য দিয়ে। কিন্তু কী ধরনের ইসলামবিরোধী কার্যকলাপ তৎকালীন সরকার করেছিল বা ভারতের সঙ্গে কী ধরনের আঁতাত করেছিল, এরূপ কোনো বক্তব্য দোষ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে আসামিরা উল্লেখ করেনি।
আসামিদের দোষ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিগুলো গভীরভাবে পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, একটি অবাস্তব ও ভ্রান্ত ধারণার ওপর ভিত্তি করে তাদের এ ধরনের মানসিকতা সৃষ্টি হয়েছিল। আবার দেখা যাচ্ছে, ষড়যন্ত্রকারীদের মধ্যে কেউ কেউ আফগানিস্তান ও পাকিস্তানে গিয়ে বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনে যোগদান করে নানা ধরনের জঙ্গি কার্যকলাপের ট্রেনিং নিয়েছিল। এ ধরনের জঙ্গি তৎপরতার আড়ালে যাদের বিচরণ ছিল, তাদের সম্পর্কে আরো বিস্তারিত জানার জন্য তদন্তকারী কর্মকর্তাদের তদন্তের আরো গভীরে যাওয়া উচিত ছিল। তদন্তে আরো অধিকতর মনোযোগী হওয়ার দরকার ছিল। অবস্থা যা হোক না কেন, আসামিরা ইসলাম সম্পর্কে ভুল ধারণার মধ্য দিয়ে তৎকালীন সরকারকে দোষারোপ করেছিল। অথচ ইসলামের মূল্যবোধ এবং হজরত মোহাম্মদ (সা.) এর আদর্শিক দিকগুলো এ দেশের মুসলিম বাঙালিদের মধ্যে প্রতিষ্ঠা লাভের জন্য এবং আগত বংশধরদের এ ব্যাপারে উদ্বুদ্ধ করার জন্য বিভিন্ন ইসলামিক প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন স্বাধীনতার মহানায়ক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। শুধু তাই নয়, তিনি অন্যান্য ধর্মাবলম্বী মানুষের ধর্মের ব্যাপারেও খুবই সজাগ ছিলেন। সে অগ্রযাত্রা পরবর্তীকালে আরো জোরালোভাবে দৃশ্যমান হয়ে উঠেছে।
পর্যবেক্ষণে বলা হয়, আসামিরা যাদের ইসলামবিরোধী বা বিদ্বেষী হিসেবে চিহ্নিত করতে চেয়েছিল, তারা ইসলামকে সুপ্রতিষ্ঠিত করার কাজে লিপ্ত। ইসলামের মূল্যবোধ সম্পর্কে আসামিদের ভ্রান্ত ধারণা এবং তাদের এহেন কর্মে পুরো দেশ ও সমাজ অশান্তিতে বিরাজমান ছিল। ইসলাম ভালো কাজের প্রশংসা করার জন্য বারবার তাগিদ দিয়েছে। দেশে মহিলা নেত্রী ইসলামসম্মত নয়, তারা তা প্রতিহত করবে। আসামিদের এ ধরনের ধ্যানধারণা এবং শক্তি প্রদর্শন ইসলাম কোনোভাবেই সমর্থন করে না। কারণ ইসলাম শান্তির ধর্ম।
আদালত তার পর্যবেক্ষণে বলেন, ষড়যন্ত্রকারী আসামিরা মূলত যাকে হত্যা করার জন্য এ ঘটনার অবতারণা করেছিল, তিনি তখন দেশের বৈধ সরকারপ্রধান হিসেবে ক্ষমতায় ছিলেন। একটি বৈধ সরকারপ্রধানকে তার সহযোগীদেরসহ হত্যার প্রচেষ্টা এবং তা বাস্তবায়ন করা কতখানি দেশ ও জাতির জন্য ক্ষতিকর, তা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যার পর এ দেশের নিরীহ স্বাধীনতাকামী জনগণ উপলব্ধি করেছিল। আসামিদের এ ধরনের ভ্রান্ত চিন্তা ও ধারণা, এ জাতির জন্য একটি কলঙ্কময় অধ্যায়। দেশের মানুষের কল্যাণের স্বার্থে জঙ্গিবাদ ও জঙ্গি তৎপরতা চিরতরে এ দেশ থেকে বিলীন হওয়া প্রয়োজন।
ওই মামলায় ২০১৭ সালের ২০ আগস্ট প্রথম রায় দেন বিচারিক আদালত। রায়ে ১০ জনকে ‘ফায়ারিং স্কোয়াডে’ (গুলি করে) মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করতে বলা হয়। এছাড়া ১ জনকে যাবজ্জীবন ও ৩ জনকে ১৪ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়। বিচারিক আদালতের রায়ের পর ডেথ রেফারেন্স শুনানির জন্য হাইকোর্টে আসে। অন্যদিকে রায়ের বিরুদ্ধে আসামিরা তিনটি আপিল ও সাতটি জেল আপিল করেন। এসবের ওপর শুনানি শেষে গত ১৭ ফেব্রুয়ারি রায় দেন হাইকোর্ট। বাংলায় পূর্ণাঙ্গ রায়টি লিখেছেন বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিম। তাঁর সঙ্গে একমত পোষণ করেছেন বেঞ্চের অন্য বিচারপতি মো. বদরুজ্জামান।
মৃত্যুদণ্ড বহাল থাকা আসামিরা হলেন- ওয়াসিম আখতার ওরফে তারেক হোসেন ওরফে মারফত আলী, রাশেদ ড্রাইভার ওরফে আবুল কালাম ওরফে রাশেদুজ্জামান খান ওরফে শিমন খান, ইউসুফ ওরফে মোসহাব মোড়ল ওরফে আবু মুসা হারুন, শেখ ফরিদ ওরফে মাওলানা শওকত ওসমান, হাফেজ জাহাঙ্গীর আলম বদর, মাওলানা আবু বকর ওরফে হাফেজ সেলিম হাওলাদার, হাফেজ মাওলানা ইয়াহিয়া, মুফতি শফিকুর রহমান, মুফতি আবদুল হাই ও মাওলানা আবদুর রউফ ওরফে মুফতি রউফ ওরফে আবদুর রাজ্জাক ওরফে আবু ওমর।
হাইকোর্ট যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত এক আসামি ও ১৪ বছর কারাদণ্ডে দণ্ডিত দুই আসামির সাজাও বহাল রেখেছেন। ১৪ বছর কারাদণ্ডে দণ্ডিত অন্য এক আসামিকে খালাস দিয়েছেন উচ্চ আদালত।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়