চাঁদাবাজির মামলা ৪ দিনের রিমান্ডে দর্জি মনির

আগের সংবাদ

বন্যার পদধ্বনি : পদক্ষেপ এখনই নিতে হবে

পরের সংবাদ

বর্ষা মৌসুমে চুয়াডাঙ্গায় ৩০ লাখ টাকার চাই বিক্রির টার্গেট

প্রকাশিত: আগস্ট ৬, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ৬, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

মাহফুজ মামুন, চুয়াডাঙ্গা থেকে : বর্ষা মৌসুমে ব্যাপক চাহিদা থাকে মাছধরা চাইয়ের। এর কারিগররা এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন। গ্রামের নারী-পুরুষ ও শিশুরা নিপুণ হাতে বিত্তি তৈরির কাজ করছেন। প্রতি সপ্তাহে প্রায় ২ লাখ টাকার চাই বিক্রি হয় এই জেলায়। আর বর্ষা মৌসুমে প্রায় ৩০ লাখ টাকার মতো বিক্রি হবে। চাই তৈরির প্রধান উপকরণ বাঁশ, তাল গাছের ড্যাগার সুতা ও লাইলনের সুতা।
চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার শৈলমারি গ্রামের ২০০ পরিবার বর্ষা মৌসুমে মাছ ধরার চাই তৈরির কাজ করেন। এতে পরিবারগুলো আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হয়েছেন। তারা পেশা হিসেবে বছরের অর্ধেক সময়ই চাই তৈরিসহ কুটিরশিল্পের কাজ করেন। মাছ ধরার চাই তৈরির প্রধান উপকরণ বাঁশ, তাল গাছের ড্যাগার সুতা ও লাইলনের সুতা। তাল গাছের ড্যাগাগুলো পানিতে ভিজিয়ে রেখে পচিয়ে নিতে হয়। তারপর আঁশ থেকে সুতা হয়। বাঁশ সাইজমতো কেটে তা দিয়ে কাঠি তৈরি করতে হয়। বাঁশের কাঠি, তালের সুতা ও লাইলনের সুতা দিয়ে গ্রামের নারী-পুরুষ নিপুণ হাতে চাই তৈরি করেন।
বর্ষায় খাল-বিল, নদী, ডোবা-নালা, পুকুর ও মাঠ পানিতে থৈ থৈ করে। এ সময় জেলে ও স্থানীয়রা বিত্তি পেতে কাটরা, পুঁটি, চিংড়ি, টাকি, ঝাঁয়া, বাইনসহ দেশীয় বিভিন্ন প্রজাতির মাছ ধরেন। প্রতিটি চাই বাজারে বিক্রি হয় ২৫০-৩০০ টাকা দরে। বাজারে এর চাহিদা রয়েছে ব্যাপক। কারণ এখানকার তৈরি বিত্তি যথেষ্ট ভালো। এখানকার তৈরি চাইয়ের চাহিদা রয়েছে মেহেরপুর, যশোর, খুলনাসহ বিভিন্ন জেলায়।
যশোর জেলার হাসেম আলী জানান, চুয়াডাঙ্গার শৈলমারি গ্রামের বিত্তি অনেক ভালো এবং দামও স্বাভাবিক থাকে। এখান থেকে ২০টি বিত্তি কিনলাম। বাড়ির পাশের মাঠে মাছ ধরার জন্য এই বিত্তি পাতব।
বিত্তি তৈরির কারিগর অসীম বলেন, এখন অনেক ব্যস্ত সময় পার করছি। আষাঢ় মাস শেষে শ্রাবণ মাস পড়েছে। চাহিদা অনেক বেড়েছে। লকডাউনের কারণে বিক্রি কম থাকলেও বর্তমানে আগের চেয়ে অনেক বিক্রি বেড়েছে। একটি বাঁশ ২০০-২৫০ টাকায় কিনতে হয়। তাল গাছের একটি ড্যাগা ৩০ টাকায় কিনতে হয়। এ কাজে অনেক বেশি পরিশ্রম। প্রতি সপ্তাহে দেড় থেকে দুই লাখ টাকার চাই বিক্রি হয়। এ কাজের সঙ্গে জড়িত প্রায় ২৫০ পরিবার।
কারিগর ময়না খাতুন বলেন, পুরুষের পাশাপাশি আমরাও বিত্তি (চাই) তৈরির কাজ করি। এতে সংসারে আর্থিকভাবে সচ্ছলতা আসে। সপ্তাহে ৩-৪টি বিত্তি তৈরি করতে পারি। বিত্তি তৈরির সব কাজ যতœসহকারে করতে হয়।
চুয়াডাঙ্গা বেগমপুর গ্রামের জাহাঙ্গীর আলম বলেন, বিলে মাছ ধরার জন্য ৬০০ টাকা দিয়ে ২টি বিত্তি কিনলাম। বিত্তি পাতলে ছোট মাছ পাওয়া যায়।
চুয়াডাঙ্গা বেগমপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. আলী হোসেন জোয়ার্দ্দার বলেন, উপজেলা প্রশাসন ও ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষে থেকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হয়। কাজ না থাকলে তাদের খাদ্য ও অর্থ-সহায়তা করা হয়।
চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আশাদুল হক বিশ্বাস বলেন, শৈলমারি গ্রামে দুই ঘর হিন্দু পরিবার প্রথম চাই তৈরির কাজ করেন প্রায় ৬০ বছর আগে। এরপর স্থানীয়রা এ কাজ শেখেন। এ শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে কাজ করব।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়