মাত্র সেদিন ফটো সাংবাদিক লুৎফর রহমান বিনুর শোকসভায় যোগ দিলাম, বিনুর মেয়ে ও অন্যদের ভাষ্যমতে ভুল চিকিৎসা বা বিনা চিকিৎসায় বিনু মারা গেছেন। করোনাকালে মৃত্যু সংবাদ শুনতে শুনতে আর ভালো লাগে না। এর মধ্যে সোমবার রাতে শুনলাম আমার বাল্যবন্ধু চাঁদপুর মিশন রোডের মুক্তিযোদ্ধা গোলাম রব্বানী মিলন স্ট্রোক করেছেন। শুনে আঁতকে উঠলাম। মিলনের ফোনে কল দিলাম, কেউ ধরল না। কল দিলাম ক্যালিফোর্নিয়ায় ছোট বোন বিজলীকে। পেলাম না, পরে বিজলী কল দিল, জানলাম মিলন বাসায় চিকিৎসাধীন! জানাল হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিল, ডাক্তার বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছেন।
স্ট্রোকের রোগীকে বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছে শুনে অবাক হলাম। জানতে চাইলাম, এখন কেমন আছে? বিজলী বলল, ডান পাশটা নাড়াতে পারছে না, কথা বলছে শুধু দুয়েকটি শব্দ, সম্পূর্ণ বাক্য নয়। আমেরিকায় পিএইচডি অধ্যায়নরত মিলনের ছোট ছেলে রুশো জানায়, ওর বাবা অসুস্থ হয় সোমবার আমেরিকার সময় বিকাল ৫টা, অর্থাৎ বাংলাদেশে রাত ৩টায়। মঙ্গলবার ভোরে রব্বানীকে শেরেবাংলা নগরে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরো সায়েন্স ও হসপিটালে নিয়ে যাওয়া হয়। ডাক্তার তাকে ভর্তি না করে বাড়ি পাঠিয়ে দেন? ইতোমধ্যে পরিবার-পরিজন, আত্মীয়স্বজন জেনে যায়, ছেলের এক ডাক্তার বন্ধু অবিলম্বে হাসপাতালে ভর্তি করার পরামর্শ দেয়।
সেই মতো ৩ আগস্ট মুক্তিযোদ্ধা গোলাম রব্বানী শমরিতা হাসপাতালে ভর্তি হয় এবং তিনি এখন ৩০৪ নম্বর কক্ষে ডা. দীন মুহাম্মদের অধীনে চিকিৎসাধীন আছেন। অবস্থা অপরিবর্তিত, যদিও খুবই সামান্য অগ্রগতি আছে, মিলন ডান পা নাড়াতে পারছেন না বটে, তবে আঙুল নাড়াতে পারছেন। মিলনের স্ত্রী মলি এবং আর এক ছোট বোন শেলী জানতে চাইল মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে মিলন উন্নত চিকিৎসা পেতে পারে কিনা? বললাম, প্রধানমন্ত্রীর কানে পৌঁছলে সেটা সম্ভব, কারণ তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের বিশেষ দেখভাল করে থাকেন। ইতোমধ্যে অনেকের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে, জানলাম সেই নিউরো-হাসপাতালে ‘ভিআইপি’ ছাড়া নাকি অন্যদের ভর্তি করানো হয় না। ভাবলাম, স্ট্রোকের রোগীকেও না?
ভাবছিলাম, আমার বন্ধু রব্বানীর যদি একাংশ প্যারালাইসিস হয়ে যায়, এর জন্য দায়ী কে হবেন? এমনিতে রব্বানীর স্বাস্থ্য ভালো, মোটামুটি রুটিন চেকআপ করতেন। তবু! করোনা অনেক কিছু উল্টেপাল্টে দিচ্ছে, রব্বানীর আমেরিকা আসার কথা ছিল, ভিসা আছে, করোনার জন্য পিছিয়ে যাচ্ছে। একটু সুস্থ হলে হয়তো আমেরিকা এনে চিকিৎসা সম্ভব, অথবা ভারত বা সিঙ্গাপুর। কেউ কি সরকারের কাছে বা প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে এই সংবাদ পৌঁছাবেন? আমার বন্ধু বলে বলছি না, দেশে এখন মিলনের মতো ভালো মানুষ খুব বেশি নেই, মিলন হারিয়ে যাক তা চাই না। প্রধানমন্ত্রী তো অনেক কিছুই করছেন, একজন মুক্তিযোদ্ধার জন্য এটুকু করলে ভালো হতো।
৩ আগস্ট ২০২১
শিতাংশু গুহ
কলাম লেখক, নিউইয়র্ক থেকে।
[email protected]