চাঁদাবাজির মামলা ৪ দিনের রিমান্ডে দর্জি মনির

আগের সংবাদ

বন্যার পদধ্বনি : পদক্ষেপ এখনই নিতে হবে

পরের সংবাদ

গ্রামে গ্রামে স্বাস্থ্যবিধি প্রচার খুব জরুরি

প্রকাশিত: আগস্ট ৬, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ৬, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

করোনার আক্রমণ শুরু হওয়ার (মার্চ, ২০২০) পর থেকে এর যাত্রা বিচিত্রগামী এবং তেমনি এর ফলাফল পরস্পরবিরোধী, যা কোনোভাবে বাংলাদেশের জন্য সার্বিক বিচারে মঙ্গলদায়ক নয়। তাৎক্ষণিক বিচারে দেখা যাচ্ছে, দিনশ্রমিক প্রায়ই তার মজুরি হারাচ্ছে। করোনাবিরোধী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলে কর্মতৎপরতা অনেকটা স্তব্ধ হয়ে যায়।
বিভিন্ন সূত্রের খবরে প্রকাশ, চাকরিজীবী (বেসরকারি খাতে) মানুষ কখনো চাকরি হারাচ্ছে, কারো বা বেতন কমছে যা কখনো অর্ধেকে, বহু ছোটখাটো ব্যবসা প্রবল ক্ষতির সম্মুখীন। বড়দের যা ক্ষতি তারা তা পুষিয়ে নিতে পারছে নানা পন্থায় যার সবটা মোটেই বৈধ নয়, নিয়মনীতিসিদ্ধ নয়।
গোটা ছবিটাই নেতিবাচক ও হতাশাব্যঞ্জক এবং তা সবস্তরের মানুষের কাছেই। এর মধ্যে একটি আপাত ভিন্নমাত্রিক খবর, শিরোনাম ‘করোনার বছরে কোটিপতি বেড়েছে ১১৬৪৭ জন।’ এরা ব্যাংক খাতে আমানতকারী উচ্চবর্গীয় মানুষ। করোনা তাদের অপচয়মূলক ব্যয়ের সুযোগ কমিয়ে দিয়েছে বলে সঞ্চয় বেড়েছে। এছাড়াও নানা ধারায় উপার্জন বৃদ্ধি। শুধু এ বিষয়টি নিয়েই একদিনের কলাম লেখা শেষ করা যায়।
এর ফলে যে অর্থনৈতিক পরিণাম, তা হলো বিভিন্ন শ্রেণি ও স্তরে আয়-বৈষম্য বৃদ্ধি যা মোটেই সুস্থ পথের পরিচয় দেয় না। এ বিষয়টির বিচার ব্যাখ্যায় বিশদ বিবরণ প্রকাশ পেয়েছে প্রতিবেদনটিতে। যা কারো মতে খতিয়ে বিচার-বিবেচনা করে দেখা উচিত এই হিসাবে যে এটা উপকারে, না অপকারে লাগছে।
দুই.
কিন্তু মূলত যে বিষয় নিয়ে আমাদের গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা তা হলো নতুন করোনার অভিনব আক্রমণ সম্ভবত প্রতিবেশী দেশ থেকে, যার ফলে প্রান্তিক জেলাগুলোতে আক্রান্তের হার-বৃদ্ধি বিপজ্জনকভাবে, সেই সঙ্গে রাজধানীতেও। সেখান থেকে অন্যান্য জেলায়।
এ প্রসঙ্গে একটি সংবাদ শিরোনাম : ‘ছয় জেলায় মৃত্যু ও শনাক্তের রেকর্ড’। যেমন- চট্টগ্রাম, রংপুর, সিলেট, পটুয়াখালী, ল²ীপুর ও পঞ্চগড় জেলা। এর আগে রাজশাহী, খুলনার মতো প্রান্তিক জেলাগুলোতে আক্রান্তের হার ছিল সর্বাধিক। এমনকি মৃত্যুর হারও।
আরো একটি লক্ষণীয় বিপজ্জনক দিক হলো হঠাৎ করেই করোনায় মৃত্যুর হার দুই শতাধিক হয়ে, সামান্য হেরফের ঘটিয়ে রেকর্ড তৈরি করছে এবং তা সবার হিসাব-নিকাশ ভণ্ডুল করে দিয়ে। কেউ কেউ মনে করছেন, করোনার এই যে অপ্রতিরোধ্য যাত্রা, কড়া লকডাউন উপেক্ষা করে, তা এই করোনার নবরূপের অবদান। কোনো বাধাই তার কাছে বাধা নয়। এ পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ এক বিপজ্জনক সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।
ভারতের করোনা পরিস্থিতি এই মুহূর্তে যখন কিছুটা নমনীয় অবস্থায়, তখন বাংলাদেশ তার নমনীয় অবস্থান থেকে বিপজ্জনক অবস্থানে পৌঁছে গেছে। কঠোর লকডাউনের বিধিনিষেধ তার অগ্রগতি রোধ করতে পারছে না। একটি দৈনিকের কলাম-শিরোনাম : ‘টানা ছয় দিন মৃত্যু দুইশ’র ওপরে’। এ পরিসংখ্যান থেকে পরিস্থিতির গুরুত্ব উপলব্ধি করা যায়।
তিন.
কিন্তু ভবিষ্যৎ বিবেচনায় যে ঘটনাটি মারাত্মক বিবেচনা করি তা হলো ‘পালে বাঘ পড়ার’ কথা বাস্তবে রূপায়িত হওয়া। এই ক’দিনের মধ্যে গ্রামে গ্রামে করোনার বিস্তার। একটি ছোট্ট উদাহরণ- নদীর ওপার থেকে বেশকিছু করোনা-আক্রান্ত রোগীর মিটফোর্ড (সলিমুল্লাহ) হাসপাতালে ভর্তি হওয়া।
আমার বেশ মনে আছে, গত দুই ঈদে প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান ছিল : যে-যার অবস্থানে থেকে ঈদ পালন করা। কিন্তু কেউ সে আহ্বানে সাড়া দেয়নি। তারা পাগলের মতো শহরে, গ্রামে নিজ নিজ বাড়িতে ঈদ পালনে পাড়ি জমিয়েছে। এমনকি এখনকার কড়া লকডাউন উপেক্ষা করে এই ঈদে তারা যে যেভাবে পারে গ্রামের বাড়ির উদ্দেশে রওনা হয়েছে।
তাছাড়া বিধিনিষেধ উপেক্ষা করার প্রবণতা প্রবল হয়ে দেখা দিয়েছে। আশ্চর্য, এত প্রচার সত্ত্বেও মাস্ক পরা সম্বন্ধে অনীহা বেশ স্পষ্ট। আমার এক সহকারীর রিপোর্ট : কারওয়ান বাজারে (কাঁচা বাজারে) দুই-তৃতীয়াংশ মানুষের মুখে মাস্ক নেই। এরা সবাই শিক্ষিত মধ্যবিত্ত।
স্বাস্থ্যবিধি নিষেধ পালনে শিক্ষিত জনমানসে এ জাতীয় উদাসীনতা এবং নিষেধ না মেনে ঈদ উৎসব পালনে গ্রামে ছুটে যাওয়া সম্ভবত করোনার গ্রামপর্যায়ে বিস্তারের অন্যতম প্রধান কারণ। সৌভাগ্যক্রমে সামনে বড় কোনো উৎসব নেই, যখন ঘটা করে গ্রামমুখে যাত্রা শুরু করা যেতে পারে।
কিন্তু বিপদ যতটুকু ঘটে গেছে, তার বিস্তার ঠেকাতে কী ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে সেটাই এখন চিন্তার বিষয়। ভুলে গেলে চলবে না যে, গ্রামে করোনার বিস্তার ঠেকানো খুব কঠিন। কারণ গ্রামের লোক স্বাস্থ্যবিধি পালনের গুরুত্ব সম্পর্কে অসচেতন এবং উদাসীন। তাই গ্রামে গ্রামে স্বাস্থ্যবিধি প্রচারের কাজটা খুব জরুরি মনে হয়।
আহমদ রফিক : লেখক, গবেষক ও ভাষাসংগ্রামী।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়