ডিএনসিসি মেয়র আতিক : ডেঙ্গু প্রতিরোধে সবাইকে সচেতন করতে পারছি না

আগের সংবাদ

বেহাল রেলের মেগা প্রকল্প : খুলনা-মোংলা রেল প্রকল্পের কাজ কবে শেষ হবে কেউ জানে না

পরের সংবাদ

টিসিবির পণ্যে প্রতারক চক্রের দৌরাত্ম্য

প্রকাশিত: আগস্ট ৪, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ৪, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : খিলগাঁও ফ্লাইওভারের নিচে সকাল ৯টা থেকে রোদের মধ্যে লম্বা লাইনে দীর্ঘসময় ধরে দাঁড়িয়ে আছেন মধ্যবয়স্ক রমজান আলী। উদ্দেশ্য, সাশ্রয়ী মূল্যে টিসিবির পণ্য কিনবেন। বেলা সাড়ে ১১টা বাজলেও টিসিবির ট্রাকের দেখা না পেয়ে হতাশ তিনি। রমজান আলী ভোরের কাগজকে বলেন, এলিফ্যান্ট রোডে হকারি করতাম। সবকিছু বন্ধ থাকায় আমার আয়ও বন্ধ। গত চার মাস ধরে বাড়ি ভাড়া পরিশোধ করতে পারিনি। আবার ৩০ হাজার টাকা ঋণও করেছি। এ টাকা কবে শোধ করতে পারব- জানি না। তার উপরে দিন দিন জিনিসপত্রে দাম বাড়ছে। এদিকে, কম দামে টিসিবির পণ্য কিনতে এসেও পাচ্ছি না। ট্রাক কখন আসবে বলা যায় না। আবার ট্রাকে চাহিদার তুলনায় পণ্য অনেক কম থাকে। তাই লাইনে দাঁড়িয়ে থেকেও অনেকে পণ্য কিনতে পারে না।
বর্তমান মহামারি দুর্যোগে অনেকেরই কাজ নেই। শ্রমজীবীরা হয়ে পড়েছেন অসহায়। কম দামে পণ্য কিনতে তাই মানুষ লাইন দিচ্ছেন টিসিবির ট্রাকের পেছনে। কিন্তু সারাদেশে পণ্য বিক্রয়কেন্দ্র কমে গেছে। এমন তথ্য অনেকেই জানেন না। ফলে পণ্য কিনতে তাদের দূর-দূরান্তে যেতে হচ্ছে। আবার একশ্রেণির প্রতারক চক্র গড়ে উঠেছে টিসিবির পণ্যকে ঘিরে। তারা প্রায় প্রতিদিনই লাইনে দাঁড়িয়ে পণ্য কিনেন। এরপর খোলাবাজারে তা বিক্রি করেন বেশি দামে। এসব প্রতারকের দৌরাত্ম্য বন্ধে ইতোমধ্যে কয়েকটি ব্যবস্থা নিয়েছে টিসিবি।
সূত্র জানায়, ঈদের পর টিসিবির পণ্য বিক্রির কথা ছিল না। এরপরেও কেন্দ্রের নির্দেশে সীমিত আকারে গত ২৬ জুলাই থেকে ন্যায্যমূল্যে পণ্য বিক্রি শুরু হয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে টিসিবির আঞ্চলিক কার্যালয়ের (ঢাকা) প্রধান হুমায়ুন কবির ভোরের কাগজকে বলেন, গত মাসে ১২দিন পণ্য বিক্রি করা হয়েছে। এ মাসে ৩০ দিন বিক্রি করা হবে। পণ্য কমানো হয়নি। এরিয়া বাড়ানো হয়েছে।
চাহিদা অনুযায়ী পণ্য মিলছে না- এমন অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, বাজারের তুলনায় আমাদের পণ্যের মান অনেক ভালো। এছাড়া দামও অনেক কম। যে তেল বাজারে ১৫০ টাকা, সেটা আমরা ভর্তুকি দিয়ে ১০০ টাকায় বিক্রি করছি। দিন দিন মানুষের আয় কমেছে। তাই টিসিবির পণ্য কিনতে যেমন আসছে, তেমনি দাম কম হওয়াতে সামর্থ্যবানরাও আসছেন কিনতে। উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, ব্র্যাক ব্যাংকের একজন ব্র্যাঞ্চ ম্যানেজার আমাদের একজন ঠিকাদারের কাছে এক কার্টন তেল কিনতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। অথচ তিনি বাইরে থেকে পণ্যটি অনায়াসেই কিনতে পারেন।
বিভিন্ন এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নিত্যপণ্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধিতে মধ্যবিত্ত ও নি¤œ মধ্যবিত্তের সংসার চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে। এখনো অনেক পণ্যের দাম বাড়ছে। এ অবস্থায় টিসিবির পণ্য কিনতে ছুটছে মানুষ। রাজধানীসহ সারাদেশে টিসিবি তিনটি নিত্যপণ্য সয়াবিন তেল, মসুর ডাল ও চিনি অনেকটা সাশ্রয়ী মূল্যে বিক্রি করছে। ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় গত ৫ জুলাই থেকে এ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। টিসিবির ওই ট্রাক সেলে সাধারণ মানুষ লাইনে দাঁড়িয়ে ৫৫ টাকা কেজি দরে চিনি ও মসুর ডাল এবং ১০০ টাকা লিটার দরে সয়াবিন তেল কিনতে পারছেন।
জনপ্রতি টিসিবির ট্রাক থেকে ৫ লিটার তেল ২ কেজি ডাল ও ২ কেজি চিনি কিনতে পারেন। এতে অন্তত ৩০০ টাকা সাশ্রয় হয়। তাই মধ্যবিত্ত ও নি¤œবিত্তরা টিসিবির পণ্য কিনছেন। প্রেস ক্লাব এলাকায় লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন বইয়ের দোকানের এক কর্মচারী। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি বলেন, দোকান বন্ধ। মাঝেমধ্যে খোলা থাকলেও বই বিক্রি নেই। অনেক কষ্টে থাকতে হচ্ছে। টিসিবির পণ্য প্রায়ই কিনি।
জানা গেছে, একটি চক্র টিসিবির পণ্য নিয়ে ব্যবসা করছে। এ বিষয়ে হুমায়ুন কবির জানান, এদের বেশির ভাগই তেল কিনে বাইরে বেশি দামে বিক্রি করছে। এজন্য সিদ্ধান্ত নিয়েছি, তেলের বোতলের ঢাকনা খুলে রাখা হবে। পাশাপাশি কোনো তথ্য না দিয়েই পুলিশ স্পটে গিয়ে তদারকি করছে।
তিনি বলেন, কলেজের শিক্ষার্থী পরিচয় দিয়ে মিরপুর বাংলা কলেজের সামনের ট্রাকে নিয়মিতভাবে হয়রানি করছে। বিভিন্ন সময়ে তারা টাকা না দিয়েই পণ্য নিয়ে যাচ্ছে। এছাড়া মহাখালী ৭ তলা বস্তিতেও কিছু লোক সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালাচ্ছে। আমরা ইতোমধ্যে আইনানুগ ব্যবস্থা নিয়েছি। আশা করছি, যারা সত্যিকার অভাবগ্রস্ত তারাই পণ্যটি পাবেন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়