জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় : প্রক্টর ড. মোস্তফা কামালের মেয়াদ বাড়ল

আগের সংবাদ

গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ে প্রধানমন্ত্রী : কেউ গৃহহীন থাকবে না

পরের সংবাদ

১৬৬০ জনের দখলে কুষ্টিয়ার গঙ্গা-কপোতাক্ষ সেচ খাল

প্রকাশিত: আগস্ট ৩, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ৩, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

নুর আলম দুলাল, কুষ্টিয়া থেকে : দখলদারদের কারণে বন্ধ হওয়ার উপক্রম দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের গঙ্গা-কপোতাক্ষ সেচ প্রকল্প। প্রায় প্রতিদিনই একের পর এক দখল হচ্ছে গঙ্গা-কপোতাক্ষ সেচ খালের জায়গা। সরকারি হিসাব মতে, শুধু কুষ্টিয়া জেলায়ই গঙ্গা-কপোতাক্ষ সেচ খালের দখলদারের সংখ্যা ১ হাজার ৬৬০ জন। চার জেলা মিলিয়ে এ দখলদারের সংখ্যা ৫ হাজার ছাড়িয়ে যাবে।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের চরম উদাসীনতার কারণে দিন দিন দখলদারদের সংখ্যা বেড়েই চলছে। এজন্য ভেস্তে যেতে বসেছে বৃহৎ এ সেচ প্রকল্প। দীর্ঘদিন ধরে চার জেলার কয়েক হাজার কৃষক তাদের কাক্সিক্ষত সেচ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছেন। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বৃহত্তর কুষ্টিয়া অঞ্চলের কৃষি উৎপাদন বাড়িয়ে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের সঙ্গে জনসাধারণের জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন এবং অর্থনৈতিক সচ্ছলতা আনায়নের জন্য ১৯৫৪ সালে গঙ্গা-কপোতাক্ষ সেচ প্রকল্প গৃহীত হয়। আধুনিক পদ্ধতিতে সেচের এটাই দেশের প্রথম ও সবচেয়ে বড় প্রকল্প। সেচ, নিষ্কাশন ও বন্যা নিয়ন্ত্রণ এ ত্রিমুখী পরিকল্পনা নিয়েই এ প্রকল্পের যাত্রা শুরু হয়। ১৯৫৪ সালে প্রকল্পটি হাতে নেয়া হলেও প্রকল্পের মাধ্যমে সেচ সুবিধা কার্যক্রম চালু হয় ১৯৬২ সালে। শুরুতে প্রকল্পটির মূল উদ্দেশ্য ছিল বর্ষা মৌসুমে সম্পূরক সেচ দেয়া। পরবর্তী সময়ে এ প্রকল্পের মাধ্যমে শুষ্ক মৌসুমেও সেচের ব্যবস্থা করা সম্ভব হয়। কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহ ও মাগুরা জেলার ১ লাখ ৯৭ হাজার ৫০০ হেক্টর জমি এ প্রকল্পের আওতাধীন। বর্তমানে ১ লাখ ১৬ হাজার হেক্টর জমি সেচ সুবিধার আওতায় রয়েছে। এ প্রকল্পের মাধ্যমে প্রতি বছরের ১৫ জানুয়ারি থেকে ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত দুটি পাম্পের মাধ্যমে ২৪ ঘণ্টা বছরে ১০ মাস ফসলি জমিতে সেচ কাজের জন্য পানি সরবরাহ করা হয়।
কুষ্টিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আফছার উদ্দিন জানান, দখলদারদের কারণে এ প্রকল্পের আয়তন দিন দিন কমে যাচ্ছে। চলতি বছরের মার্চ মাস পর্যন্ত শুধু কুষ্টিয়া জেলায় গঙ্গা-কপোতাক্ষ সেচ প্রকল্পের জায়গা দখলকারীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৬৬০ জনে।
পরিসংখ্যান তুলে ধরে এ প্রকৌশলী বলেন, কুষ্টিয়া জেলায় গঙ্গা-কপোতাক্ষ সেচ প্রকল্পের মাধ্যমে ৩৬ হাজার ৩৬৩ হেক্টর জমি সেচ সুবিধা পাওয়ার কথা। কিন্তু বর্তমানে ৩০ হাজার ৭৬৭ হাজার জমিতে সেচ সুবিধা দেয়া সম্ভব হচ্ছে।
সরেজমিন খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, দখলের কারণে অনেক জায়গায় গঙ্গা-কপোতাক্ষ সেচ প্রকল্পের খাল অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে। খালের জায়গা দখল করে সেখানে অনেকেই ধান চাষ করছেন। কেউ কেউ বিল্ডিং বানিয়ে দখল করে নিয়েছেন। অনেক স্থানে সরকারি এই খালের জায়গা অন্যের নামে রেকর্ডভুক্তও হয়ে গেছে। ভেড়ামারা উপজেলার চাঁদগ্রাম চণ্ডীপুর ডি-৭ বিকে খালের প্রায় ৫০ মিটার জায়গা প্রভাবশালী একটি মহল দখল করে সেখানে ধান চাষ করছে। এ নিয়ে আদালতে মামলাও চলমান বলে জানান কুষ্টিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আফছার উদ্দিন। দখলদারদের বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না, এমন প্রশ্নের জবাবে প্রকৌশলী আফছার উদ্দিন বলেন, কুষ্টিয়া জেলার ১ হাজার ৬৬০ জন দখলকারীর মধ্যে তারা মাত্র ৮২ জনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পেরেছেন।
একবার দখল হয়ে গেলে নানা কারণে উচ্ছেদ করা কঠিন হয়ে দাঁড়ায় উল্লেখ করে এই প্রকৌশলী জানান, করোনা মহামারির কারণে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বেশ কিছুদিন ধরে উচ্ছেদ অভিযান বন্ধ রয়েছে।
কুষ্টিয়া সদর উপজেলার বৃত্তিপাড়া এলাকার কৃষক নওশের আলী জানান, বেশ কয়েক বছর ধরে তারা গঙ্গা-কপোতাক্ষ সেচ প্রকল্পের সেচ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছেন। বেশির ভাগ স্থানেই খালের জায়গা দখল করে মানুষ ধান চাষ করছেন। অনেক জায়গায় এখন আর খালের কোনো অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যাবে না।
খালের ধারে বসবাসরত মানুষ নিজেরাই জায়গায় জায়গায় খালের উপর বাঁশ দিয়ে সাঁকো বানিয়ে যাতায়াতের ব্যবস্থা করেছেন। প্রকল্পের সেচ সুবিধা না পাওয়ার কারণে এসব অঞ্চলের কৃষকরা এখন মেশিন দিয়ে ভূগর্ভস্থ পানি তুলে জমিতে সেচ দিচ্ছেন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়